চাষিদের নাসিকে পেঁয়াজ চাষের প্রশিক্ষণ নিতে পাঠিয়ে পেঁয়াজের জন্য নাসিক-নির্ভরতা কমানোর দিকে এক পা এগোল রাজ্য।
উদ্যানপালন দফতর সূত্রের খবর, রাজ্যে বছরে পেঁয়াজ লাগে ৩৬০ টন। তার মধ্যে এখন মাত্র ২৫ শতাংশ উৎপন্ন হয় রাজ্যে। বাকিটা আমদানি করতে হয় নাসিক থেকে। এ বার অতিবর্ষণে চাষ ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ায় নাসিক থেকে প্রত্যাশিত পরিমাণে পেঁয়াজ মেলেনি। তাই এখন বাজারে পেঁয়াজের দামের ঝাঁঝে চোখ জ্বলে যাচ্ছে ক্রেতাদের। দর যাচ্ছে কেজি প্রতি ৫৫-৭০ টাকা।
এই নাসিক-নির্ভরতা কয়েক বছর ধরেই কমানোর চেষ্টা চলছে। এ বার আগামী মরসুমে রাজ্যে পেঁয়াজের উৎপাদন বাড়াতে দফায় দফায় ৭২ জন চাষিকে ইতিমধ্যে নাসিকের জলগাঁওতে পেঁয়াজ-চাষের প্রশিক্ষণ নিতে পাঠানো হয়েছে।
নাসিকের ‘ন্যাশনাল হর্টিকালচার রিসার্চ অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট ফাউন্ডেশন’ (এনএইচআরডিএফ)-এ ওই প্রশিক্ষণ হবে। সেখানে বীজতলা তৈরি থেকে শুরু করে খেতে কী ভাবে মাটি দিতে হয়, জমি থেকে জল বেরিয়ে যাওয়ার ব্যবস্থা কী ভাবে তৈরি করতে হয় সে সব বিজ্ঞানসম্মত ভাবে শেখানো হবে চাষিদের। প্রথম দফায় মূলত হুগলি জেলা থেকেই চাষিদের নাসিকে পাঠানো হয়েছে। তাঁরা ফিরে রাজ্যের অন্য জেলার পেঁয়াজ-চাষিদের প্রশিক্ষণ দেবেন। রাজ্যের উদ্যানপালন দফতরের মন্ত্রী সুব্রত সাহা বলেন, “আমরা চাই আগামী কয়েক বছরে এ রাজ্যও পেঁয়াজ চাষে স্বয়ংসম্পূর্ণ হোক। সেই কারণে চাষিদের প্রশিক্ষণ নিতে পাঠানো হয়েছে।” |
উদ্যানপালন দফতরের কর্তারা মনে করছেন, এ রাজ্যের চাষিরা আলু, ধান বা পাট চাষে যতটা সাবলীল বা স্বচ্ছন্দ, ততটা পেঁয়াজ-চাষে নন। প্রশিক্ষণ পেলে তাঁদের সুবিধা হবে। তা ছাড়া, পেঁয়াজকে আগামী দিনে রাজ্যের অন্যতম অর্থকরী ফসল হিসেবে চিহ্নিত করার চেষ্টাও চলছে। এ বার বর্ষাকালীন (জুলাই-অক্টোবর) পেঁয়াজ চাষ হয়েছে ৮০০ হেক্টর জমিতে। আগামী মরসুমে চাষের এলাকার আয়তন বাড়ানোর লক্ষ্যমাত্রা নেওয়া হয়েছে। সে সব কারণও রয়েছে চাষিদের প্রশিক্ষণ নিতে পাঠানোর পিছনে।
চাষিদের প্রশিক্ষিত করা ছাড়াও জোর দেওয়া হচ্ছে অসময়ের (বর্ষাকালীন) পেঁয়াজ চাষে। ওই চাষ বাড়ানোর আর একটা কারণ, পুজোর সময়ে দাম বাগে আনা। এ রাজ্যে এখনও পেঁয়াজ সংরক্ষণের উপযুক্ত পরিকাঠামো গড়ে না ওঠায় প্রতিবারই পুজোর মুখে পেঁয়াজের দাম বাড়ে।
নভেম্বর থেকে এপ্রিল রাজ্যে পেঁয়াজ চাষের প্রচলিত মরসুম। সার, বীজ, কীটনাশক-সহ বিঘা প্রতি পেঁয়াজ চাষে খরচ হয় ১৩-১৪ হাজার টাকা। বিঘা প্রতি লাভ থাকে প্রায় ৪৯ হাজার টাকা।
বর্ষাকালীন পেঁয়াজ চাষের জন্য হুগলি, বাঁকুড়া, পশ্চিম মেদিনীপুর-সহ আটটি জেলাকে বেছে নেওয়া হয়েছে। এক-একটি জেলার এলাকাও নির্ধারণ করা হয়েছে। হুগলিতে যেমন ধনেখালির কানানদী লাগোয়া এলাকাকে বেছে নেওয়া হয়েছে। হুগলির উদ্যানপালন দফতরের অধিকর্তা দীপক ঘোষ বলেন, “জেলায় এ বার ১১০ একর জমিতে পেঁয়াজ চাষের লক্ষ্যমাত্রা নেওয়া হয়েছে। তারকেশ্বর, পোলবা, গোঘাটে মূলত আলু চাষের এলাকাকেই পেঁয়াজ চাষ করার জন্য উপযুক্ত বলে আমরা বেছে নিয়েছি।”
ধনেখালির চাষি কৃশাণু সিমলাই বলেন, “এর আগে উদ্যানপালন দফতরের লোকজনকে সে ভাবে গ্রামে দেখতাম না। এ বার ওঁরা সরাসরি ব্যবস্থা করে অন্য রাজ্যে আমাদের প্রশিক্ষণে নিয়ে যাওয়ায় আমরা উপকৃত।” সেখানকারই ধামাইটিকরি গ্রামের চাষি কাশীনাথ পাত্র বলেন, “আলু চাষ করে আমরা অনেক সময়েই দাম পাই না। কিন্তু পেঁয়াজের বাজার সারা বছরই থাকে। তাই পেঁয়াজ চাষ শুরু করেছি।”
এই উৎসাহই আরও অনেকের মধ্যে দেখতে চাইছেন উদ্যানপালন দফতরের কর্তারা। |