কুয়োয় পড়ে গেল স্কুলছাত্রী, বাঁচাতে ঝাঁপ দিলেন শিক্ষক
র্তি কুয়োয় ডুবে যেতে যেতে বাঁচার জন্য আপ্রাণ চেষ্টা করে যাচ্ছে স্কুলছাত্রীটি। আর কুয়োর পাড়ে দাঁড়িয়ে সমানে ‘বাঁচাও বাঁচাও’ চিৎকার করে যাচ্ছে তার সহপাঠী। চিৎকার শুনে ছুটে এলেন অন্য এক বিদ্যালয়ের শিক্ষক, নৃপেনকৃষ্ণ মাহাতো। দেখলেন, পাড়ের উপরে থাকা কিশোরী একটি দড়ি টেনে রয়েছে। আর গলা অবধি ডুবে থাকা মেয়েটি ওই দড়ি ধরে নিঃশ্বাস নেওয়ার চেষ্টা করছে। সাতপাঁচ না ভেবে একগাছি দড়ি জুটিয়ে শিক্ষক নেমে পড়লেন কুয়োয়। শেষমেষ অন্য লোকজনের সাহায্যে ঘণ্টাখানেকের চেষ্টায় নৃপেনবাবু কুয়োর উপরে তুলে আনলেন মেয়েটিকে।
ঘটনাটি বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায়, পুরুলিয়ার কেন্দা আদিবাসী আবাসিক বালিকা বিদ্যালয়ের ছাত্রীনিবাসের। স্কুল সূত্রে জানা গিয়েছে, ওই দিন বিকেলের পরে ছাত্রাবাসের আবাসিক দ্বাদশ শ্রেণির ছাত্রী সোনামণি সহিস জল তুলতে গিয়ে পা পিছলে কুয়োর মধ্যে পড়ে যায়। শুক্রবার পুরুলিয়া সদর হাসপাতালের শয্যায় শুয়ে সে বলেন, “কুয়োর পাড়ের সিঁড়িতে শ্যাওলা ছিল। অন্ধকারে বুঝতে পারিনি।” বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষিকা উষা সিংহ সর্দার বলেন, “কুয়োতলায় সোনামণির সঙ্গে যাওয়া মেয়েটি চট করে দড়ি কুয়োয় ফেলে চিৎকার করতে শুরু করে। সেই সময় এলাকারই বালকডি উচ্চ বিদ্যালয়ের শিক্ষক নৃপেনবাবু একটি কাজে এখানে এসেছিলেন। তিনি কুয়ো পাড়ে ছুটে যান।”
হাসপাতালে সোনামণির সঙ্গে কথা নৃপেনবাবুর। —নিজস্ব চিত্র।
নৃপেনবাবুর কথায়, “আমি কুয়োয় নেমে দেখি, ছাত্রীটির চোখ কখনও খুলছে কখনও বুজে যাচ্ছে। বুঝতে পারি, জ্ঞান হারালে ডুবে যাবে। ওকে কোনও রকমে কাঁধে তুলে নিই। কিন্তু অতবড় কুয়োয় আমি নিজেই ডুবে যাচ্ছিলাম। কুয়োর দেওয়ালে কোনও আংটা না থাকায় ওই অবস্থায় বেশিক্ষণ দড়ি ধরে ঝুলে থাকা আমার পক্ষেও মুশকিল হচ্ছিল। আমিও চেঁচাতি থাকি।” কিন্তু ছাত্রী আর শিক্ষিকাদের পক্ষে ওই দু’জনকে উপরে তোলা সম্ভব ছিল না। তাঁরা লোকজন ডেকে আনেন। দড়ির খাটিয়া বেঁধে কুয়োয় নামিয়ে দু’জনকে উপরে তুলে আনা হয়। ততক্ষণে আধঘণ্টা পেরিয়ে গিয়েছে।” নৃপেনবাবু এ দিন বলেন, “আর দেরি হলে দড়ি হাত থেকে ছেড়ে যেত। ঈশ্বরই বোধহয় শক্তি জুগিয়েছিলেন।”
ওই আদিবাসী বিদ্যালয়ের পরিচালন সমিতির সভাপতি তথা পুরুলিয়ার (সদর) মহকুমাশাসক সৌম্যজিৎ দেবনাথ বলেন, “ওই স্কুলশিক্ষক সাহসিকতার পরিচয় দিয়েছেন। তাঁকে পুরস্কৃত করা উচিত।” প্রধান শিক্ষিকা উষাদেবী জানান, নৃপেনবাবুর জন্য কোনও প্রশয়ংসাই যথেষ্ট নয়। আগামী শিক্ষক দিবেসের অনুষ্ঠানে তাঁকে সংবর্ধিত করা হবে। সোনামণি এ দিন জানায়, পড়ে যাওয়া অবধি তার মনে আছে। আর কিছু মনে নেই। তার মা ভবানীদেবী বলেন, “ওই শিক্ষককে কী বলে ধন্যবাদ জানাব, বুঝতে পারছি না।” আর নৃপেনবাবু নিজে বলছেন, “একটা মেয়ে চোখের সামনে ডুবে যাচ্ছে দেখে স্থির থাকতে পারিনি। মনে হয়েছিল নীচে নামলে বাঁচাতে পারব। ছাত্রীটি সুস্থ আছে জেনে ভাল লাগছে।”



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.