মুখোমুখি ২...
মোটা তো কী, খাওয়ার সঙ্গে আপস নয়
স্টবেঙ্গল মাঠে ‘পত্রিকা’-র সঙ্গে সবে কথা বলা শুরু করেছেন। পাঁচ মিনিটের মধ্যেই ব্রাজিল থেকে ফোন। ডিসপ্লে-তে নম্বর দেখেই কপালে হাত রেখে চোখ বুজে ফেললেন ইস্টবেঙ্গলের বিশাল বপু ফিজিক্যাল ট্রেনার কাম গোলকিপার কোচ আমেরিকো ফালোপা। বিড়বিড় করে বললেন, “এই রে ব্রাজিল থেকে মায়ের ফোন। কথা না বললে গলা কেটে ফেলে দেবে। রবিবার সকালে সিটি সেন্টারে চলে আসুন। আজ চলি,” বলেই প্রায় ছুট লাগালেন। নির্ধারিত দিনে সিটি সেন্টারে হাজির ‘পত্রিকা’। আমেরিকোও আড্ডা দিলেন খোশমেজাজে। সঙ্গে তাঁর জাম্বো ব্রেকফাস্ট...।

পত্রিকা: সেদিন ব্রাজিল থেকে মায়ের ফোন বলে চলে এলেন। কিন্তু আপনার মা অ্যানা তো থাকেন আপনারই সঙ্গে। সল্টলেকে!

আমেরিকো: এই রে! সে দিন ওরকম বলে ফেলেছিলাম বুঝি? যাক গে, ওই ফোনটা ছিল আমার জন্মদাত্রী মা মারিয়া ফাবিয়ানোর। মায়ের সঙ্গে বাবার ডিভোর্সের পর আমার বাবা অ্যানাকে বিয়ে করেন।

পত্রিকা: মাকে নির্ঘাত যমের মতো ভয় পান?
আমেরিকো: উফ্, কী কুক্ষণেই না সে দিন ওই কথাটা বলেছিলাম। (এর পরেই হাসতে হাসতে) মাকে কে না ভয় পায়!

পত্রিকা: তা বলে ছত্রিশ বছর বয়সে মায়ের একটা ফোনে ও রকম কাঁপতে কাঁপতে গাড়ির দিকে দৌড় লাগানোটা কিছুটা হলেও অস্বাভাবিক নয় কি?
আমেরিকো: আমার মা মারিয়া সাওপাওলোর ফ্যাশন ডিজাইনার। ওখানেই থাকেন, কিন্তু এই কলকাতা শহরেও আমি কোথায় যাচ্ছি, কী করছি সব মায়ের নখদর্পণে। পান থেকে চুন খসলেই অ্যায়সা বকবে না...! সে দিনই তো গাড়িতে ওঠার পর জানতে চাইছিলেন, ফোন ধরতে দেরি করলে কেন? তা বলে আবার যেন লিখে বসবেন না আমি ‘মামা’স কিড’। এটা মা-ছেলের একটা ‘লাভ-বন্ডিং’।

পত্রিকা: আপনার বাবাও তো কড়া ধাঁচের মানুষ। আপনার তো চিঁড়েচ্যাপটা দশা দেখছি...
আমেরিকো: বাবা কড়া হতে পারেন, কিন্তু ওঁর ব্যক্তিত্বটা মাথায় রাখুন। বাবার প্রতি আমার একটা ভয় মেশানো শ্রদ্ধা কাজ করে। একটু সমীহ তো করেই থাকি। স্যান্ডউইচ বলতেই পারেন।

পত্রিকা: আপনি যে এখন কলকাতার ‘বাবাই’, আপনার মা জানেন?
আমেরিকো: (প্রশ্ন শুনেই গোটা শরীর দুলিয়ে হাসতে লাগলেন। পরক্ষণেই চকোলেট ফ্লেভারের কোল্ড কফিতে একটা চুমুক) বলেছি, বলেছি। বাবাই মানেটাও পর্তুগিজে বলে দিয়েছি। গোলগাল আদুরে ছেলে তো?

পত্রিকা: একদম। মা শুনে কী বললেন?
আমেরিকো: ঠিক আমার মতোই হেসেছেন। তার পর বললেন, নাতালিয়াকে বলেছ?

পত্রিকা: নাতালিয়া কে? আপনার বোন?
আমেরিকো: ভগবান...! কী যে বলি আপনাকে? আমার নিজের কোনও বোন নেই। দাদা আছেন, ব্রাজিলেই থাকেন। ও ফ্রিল্যান্স জার্নালিস্ট। নাতালিয়া (মুখে লজ্জার হাসি ঝুলিয়ে) আমার প্রেমিকা। চার বছরের সম্পর্ক।

পত্রিকা: আপনি প্রেমও করেন?
আমেরিকো: (মুখে বিরক্তি এনে) প্রেম করতে পারি না! কেন, মোটা বলে?

পত্রিকা: ভারতে কিন্তু মোটা ছেলের প্রেমিকা জোটা একটু মুশকিল।
আমেরিকো: তাই বুঝি!

পত্রিকা: নাতালিয়া ছাড়া জীবনে অন্য কারও প্রেমে পড়েছেন?
আমেরিকো: বলব না। নেক্সট কোয়েশ্চেন প্লিজ।

পত্রিকা: কলকাতায় কাউকে ভাল লেগেছে?
আমেরিকো: আপনি কি বাবার কাছে এই বয়সে মার খাওয়ানোর প্ল্যান করে এসেছেন!

পত্রিকা: নাতালিয়া-আপনার প্রেম কাহিনিতে কে প্রথম কাছে এসেছে?
আমেরিকো: অফ কোর্স আমি। কিন্তু তার আগে আমার সঙ্গে মাঠে ওর খুব ঝগড়া হত।

পত্রিকা: মাঠে ঝগড়া হত মানে?
আমেরিকো: আরে ও তো ফুটসল খেলে চুটিয়ে। গোলকিপার। ওর ক্লাবের নাম ‘ফেশ’। আমার ক্লাব ‘পলি’-র চিরপ্রতিদ্বন্দ্বী। মাঠে খুব আওয়াজ দিতাম। সেখান থেকেই ঝগড়া। তার পর প্রেম। ও আমাকে আদর করে ‘মেকো’ ডাকে। আর আমি ডাকি ‘নানা’।

পত্রিকা: নাতালিয়া ‘বাবাই’ ব্যাপারটা জানেন?
আমেরিকো: জানে, জানে। যে দিন প্রথম ওকে এই কথাটা বললাম সে দিন মাঝরাত পর্যন্ত ফোন ধরে দু’জন খালি হেসেছি আর জোকস এক্সচেঞ্জ করেছি।

পত্রিকা: বিয়ে করছেন কবে?
আমেরিকো: এক বছরের মধ্যেই।

পত্রিকা: আচ্ছা, আপনার ওজন কত?
আমেরিকো: বলব না। সিক্রেট।

পত্রিকা: সারা দিনে কী খান? মানে ডায়েট চার্টটা...
আমেরিকো: আচ্ছা, সেই শুরু থেকে দেখছি আপনি কেবল ব্যক্তিগত প্রশ্ন করে যাচ্ছেন। অন্য প্রশ্ন করুন না!

পত্রিকা: কলকাতায় এসে কোন খাবারের প্রেম পড়লেন?
আমেরিকো: বিরিয়ানি। আর চিকেন বাটার মশালা। ফিরনি, রসগোল্লাও বেশ লাগে। খাওয়ার সঙ্গে নো কম্প্রোমাইজ। জিমে গিয়ে একটু ঝরিয়ে নিলেই তো হল।

পত্রিকা: ছোট বেলায় মোটা বলে স্কুলে বন্ধুরা পিছনে লাগত না?
আমেরিকো: লাগত। আমি পাত্তা দিতাম না। ওগুলোকে মজা হিসাবেই নিই। বাড়াবাড়ি করলে দু’হাত দিয়ে জাপটে ধরতাম। অথবা দিতাম এক চিমটি। ভয়ে পালাত।

পত্রিকা: এখনও কি তাই করেন?
আমেরিকো: পাগল!

পত্রিকা: সত্যি করে বলবেন, এই চেহারা নিয়ে ফিটনেস ট্রেনার হওয়ার শখ জাগল কী ভাবে?
আমেরিকো: ছোটবেলায় ভাবতাম গোলকিপার হব। সেটা যখন হল না তখন ফিজিক্যাল ট্রেনার হওয়ার জন্য পড়াশোনা করলাম। আর মোটা হলে ফিজিক্যাল ট্রেনার হওয়া যায় না, এই থিওরি সম্পূর্ণ ভুল। ইন্টারনেট খুলে মার্ক ম্যাঞ্জিনো সার্চ দিন। দেখবেন মার্কিন মুলুকে বিখ্যাত ওই কোচ কতটা মোটা। এ রকম অনেকেই আমেরিকায় রয়েছেন। আমি গায়ানার মহিলা ফুটবল দল নিয়ে বহু দিন ধরে কাজ করেছি।

পত্রিকা: আপনি তো মহিলাদের বেশ বোঝেন। এটা কিন্তু আপনার একটা বড় গুণ।
আমেরিকো: এ বার আপনিও ফিচলেমি শুরু করে দিলেন।

পত্রিকা: আপনার বাবা মার্কোস ফালোপা আর আপনি যখন মাঠে নেমে কোচিং করান তখন গ্যালারি থেকে অনেকেই আপনাদের মধ্যে লরেল-হার্ডিকে দেখতে পান।
আমেরিকো (হাসতে হাসতে): আ-বা-র! শাট আপ।

পত্রিকা: আপনি শুনেছি খুব বলিউডি সিনেমার ভক্ত?
আমেরিকো: খুব। বিশেষ করে অমিতাভ বচ্চন। ডন, দিওয়ার, কুলি, আখরি রাস্তাকত বার করে যে দেখেছি গুনে শেষ করা যাবে না। ব্রাজিলে জন্মালেও আমি বড় হয়েছি বাহরিনে। ওখানে হিন্দি ছবি খুব পপুলার। বচ্চন তো হট ফেভারিট।

পত্রিকা: অমিতাভের আরও একটা ছবি আসছে। জানেন?
আমেরিকো: ইয়েসসস্! সত্যাগ্রহ। ওটাও দেখতে হবে। মুম্বই গেলে যে ভাবেই হোক এক বার মিস্টার বচ্চনের সঙ্গে দেখা করে আসব। ওঁর হাতটা ছুঁতে পারলে জীবনটাই ধন্য হয়ে যাবে।

পত্রিকা: আপনাদের দেশে সামনের বছর বিশ্বকাপ। ষষ্ঠ বার কাপটা হাতে নিতে পারবে স্কোলারির ব্রাজিল?
আমেরিকো: শুনে রাখুন, ব্রাজিলীয়রা যখন ফুটবল খেলে তখন তাঁরা হৃদয়-মন দিয়ে বিশ্বাস করে এই গ্রহে ওদের চেয়ে ভাল ফুটবল কেউ খেলে না। কাজেই আমি আশাবাদী হেক্সা-চ্যাম্পিয়নের ব্যাপারে।

পত্রিকা: যদি বলি, আপনার জীবনে স্মরণীয়তম দিন কোনটা ...
আমেরিকো: যেদিন বাবা পেলের সঙ্গে আলাপ করিয়ে দিয়েছিলেন। উফ্, ওই আড্ডার স্মৃতিটা ভোলার নয়।

পত্রিকা: ফুটবলের বাইরে অন্য কোনও খেলা ভালবাসেন?
আমেরিকো: বিচ ভলিবল। আর গায়ানায় কাজ করতে গিয়ে ওয়েস্ট ইন্ডিজের ক্রিকেটটা বুঝেছি। আমরা ব্রাজিলীয়রা যেমন ফুটবলে মন-প্রাণ সঁপে দিয়েছি ক্যারিবিয়ানরাও কিন্তু সে ভাবেই ক্রিকেট অন্ত প্রাণ। ব্রায়ান লারাকে আমার দারুণ লাগে।

পত্রিকা: সচিন?
আমেরিকো: কাগজে পড়েছি ও বড় খেলোয়াড়। আমি লারার ফ্যান।

পত্রিকা: টুটু বসুকে চেনেন?
আমেরিকো: মোহনবাগানের প্রেসিডেন্ট?

পত্রিকা: আপনাদের চেহারার জন্য ময়দানে রসিকতা, ইস্টবেঙ্গল গোলকিপার কোচ, মোহনবাগান প্রেসিডেন্টের ছোট ভাই।
আমেরিকো: তাই নাকি। এটা তো মা আর নাতালিয়াকে জানাতে হবে। আমি কী লাকি! তবে মাঠে কিন্তু আমাদের ছেলেরা টুটু বসুর ছেলেদের এক বিন্দু জমিও ছাড়বে না। যাঁদের কাছে এই কথা শুনেছেন তাঁদের বলে দেবেন।

পত্রিকা: শেষ প্রশ্ন, ঈশ্বর যদি আপনাকে তিনটে বর দিতে চান তা হলে কী কী চাইবেন?
আমেরিকো: এক, পৃথিবীতে কেউ যেন খিদেয় না মরে। দুই, অসৎ, ছকবাজ লোকেদের ভ্যানিশ করে দাও। আর তিন, আমাকে একবার অন্তত অমিতাভ বচ্চনের সঙ্গে দেখা করিয়ে দাও।

‘বাবাই’ দাওয়াই
• মোটা বললে পাত্তা দেবেন না
• মজা হিসাবেই নিন
• বাড়াবাড়ি করলে দু’হাত দিয়ে জাপটে ধরুন
• কিংবা দিন এক চিমটি। ভয়ে পালাবে
• খাওয়াদাওয়ায় নো কমপ্রোমাইজ। শুধু জিমে গিয়ে ওজনটা ঝরিয়ে নিন

ক্রেজি বাবাই

অনিন্দ্য চট্টোপাধ্যায়
(চন্দ্রবিন্দু)
ওজন দুশো কেজি রে
(তবু) একটুও নয় লেজি রে
ফিজিও খুব তেজি রে
বাবাই হেভি ক্রেজি রে
ফ্যাটের নেই কো ছিরি ছাঁদ
কাটিয়ে ব্রাজিল, ত্রিনিদাদ
বাড়িয়েছেন তিনি কাঁধ
লাল হলুদের লিস্টে
আমেরিকো পারবে ঠিক ও
ফিট বানাবেন ইস্টে
ফিজিও খুব তেজি রে
বাবাই হেভি ক্রেজি রে।

ছবি: শঙ্কর নাগ দাস


First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.