|
|
|
|
|
|
|
মুখোমুখি ১... |
|
আজও আফশোস হয় উত্তমকুমারের জন্য |
পরদায় ওঁকে পাননি বলে। কেমন লাগে সুচিত্রা সেনকে। গুরু দত্তর সঙ্গে প্রেম কি নিছক রটনা!
রাজ কপূর, দেব আনন্দ থেকে হেমন্ত কুমার, সত্যজিৎ রায়ের সঙ্গে কাজ করার অভিজ্ঞতাই বা
কেমন। তিন দশক বাদে কলকাতায় এসে অন্তরঙ্গ আড্ডায় ওয়াহিদা রহমান। শুনলেন শঙ্করলাল ভট্টাচার্য |
ওয়াহিদা রহমানের সঙ্গে সাক্ষাৎকারের শুরুর প্রশ্নটা নিয়ে ভাবাভাবি আমায় করতেই হয়নি। কারণ তিন দশক আগে ‘জীবন যেরকম’ ছবির শ্যুটিং করতে এসেছিলেন যখন শহরে, তখন গ্রেট ইস্টার্ন হোটেলে ওঁর সাক্ষাৎকার নিয়েছিলাম ‘আনন্দলোক’ পত্রিকার জন্য। তার দিন কয়েকের মধ্যে ছবির অন্যতম শিল্পী কেয়া চক্রবর্তীর মৃত্যু হল শ্যুটিংকালে স্টিমার থেকে পড়ে গিয়ে।
খুবই আবছা ভাবে ইন্টারভিউয়ের কথা মনে পড়ল হয়তো, খুবই মনে আছে কেয়ার মৃত্যু। কিন্তু ভুলে যাওয়ার মতো ছবিটা তিনি ভুলে যেতেই চান। তবে ‘জীবন যেরকম’ দিয়ে কলকাতা ও বাঙালির সঙ্গে ওয়াহিদার সম্পর্কের শুরু নয়, এবং সে-সম্পর্কে এ ছবির ভূমিকা নগণ্য।
কলকাতা, বাংলা ও বাঙালির সঙ্গে ওঁর সম্পর্ক সত্যজিৎ রায়ের ‘অভিযান’-য়ে সৌমিত্রর সঙ্গে অভিনয় করা নায়িকার মাথায় থাকে কি? জিজ্ঞেস করাতে মাথা নেড়ে বোঝালেন ‘হ্যাঁ’, তারপর তাঁর সিগনেচার হাসি দিয়ে ‘খুব’। তখন জিজ্ঞেস করতে হল...
পত্রিকা: আফশোস হয় না উত্তমকুমারের সঙ্গে ছবিতে নামা হয়নি?
ওয়াহিদা: হয়। নিশ্চয়ই।
পত্রিকা: কেন?
ওয়াহিদা: দেখুন, একজন ওরকম বড় অভিনেতার সঙ্গে কাজ করে, পরদায় জমিতে অংশ নিয়ে কত কিছুই তো শেখার ও জানার আছে।
পত্রিকা: যেমন দিলীপকুমারের সঙ্গে কাজ করে সুযোগ পেয়েছেন?
ওয়াহিদা: অবশ্যই।
পত্রিকা: আবার বাঙালি প্রসঙ্গে ফিরিয়ে নিয়ে যাচ্ছি। সত্যজিৎ আপনাকে দিয়ে ‘অভিযান’ করলেন। হেমন্তকুমার করালেন ‘বিশ সাল বাদ’ আর ‘কোহরা’ ...
ওয়াহিদা: কেন ‘খামোশি’-ও করালেন, আমার অতি প্রিয় ফিল্ম। আমার অভিনয়ের সেরা ছবির একটা। আমি বাংলা অরিজিনালটা, মানে ‘দীপ জ্বেলে যাই’ দেখে এতই মুগ্ধ হয়েছিলাম যে হেমন্তদাকে বলতে থাকলাম ‘দাদা, এই ছবিটা করুন।’ ওঁর ‘বিশ সাল বাদ’ তো সুপারহিট, ‘কোহরা’ও হিট, কিন্তু এই সিরিয়াস ছবি হিন্দি দর্শক কেমন নেবে তা নিয়ে চিন্তায় ছিলেন। বললেন, ‘তাছাড়া এখন করলে তো করতে হবে কালারে, খরচও বাড়বে।’ আমি বললাম, ‘তা কেন? কস্ট কেন বাড়াবেন?’ ছবির বেশিটাই হাসপাতালের ভেতরে, যা প্রায় সাদা-কালো। কালারে করলেও তো সেই সাদা-কালোই আসবে। আপনি ব্ল্যাক অ্যান্ড হোয়াইটেই করুন।’ তখন প্রশ্ন উঠল নায়ক কাকে নেওয়া যায়। আমি সাজেস্ট করলাম রাজেশ খন্নার নাম। তখনও ও সুপারস্টার হয়নি। চেতন আনন্দের ‘আখরি খত’-য়ে ওর ভীষণ দখল দেখলাম এক্সপ্রেশনে। তো ভাবনাচিন্তা করে ওকেই নেওয়া হল। তার ফলাফল আপনারা দেখেছেন। ব্যবসা হয়নি ঠিকই, কিন্তু কী ছবি!’
পত্রিকা: ‘খামোশি’-ই কি আপনার প্রিয়তম ছবি?
ওয়াহিদা: না, ‘খামোশি’-কে ‘গাইড’-য়ের পরে রাখব।
পত্রিকা: আপনার আরেক কলকাতা কানেকশন কিন্তু গুরু দত্ত!
ওয়াহিদা: কেন, কেন? উনি তো বাঙালি নন। কলকাতায় আমাকে দিয়ে কিছুটা ‘পিয়াসা’-র শ্যুটিং করিয়েছেন বলে?
পত্রিকা: ওঁর অনেক কিছু কাজ শেখা কিন্তু আলমোড়ায় উদয়শঙ্করের কাছে।
ওয়াহিদা: হ্যাঁ, তাই তো!
পত্রিকা: আর বাঙালি লেখক বিমল মিত্রকে দিয়ে তাঁর উপন্যাস ‘সাহেব বিবি গোলাম’-য়ের বিন্যাস করালেন বিমলবাবুকে নিজের বাড়িতে গেস্ট রেখে বম্বেতে।
ওয়াহিদা: জানি।
পত্রিকা: আর ওঁর স্ত্রীও একজন বাঙালিনী। গীতা দত্ত।
ওয়াহিদা এই সময় একটু চুপ করে রইলেন। হয়তো আমার পরবর্তী প্রশ্নের জন্য।
পত্রিকা: কেমন ছিল গীতার সঙ্গে সম্পর্ক আপনার? যেমন লেখালেখি হয় তেমনই?
ওয়াহিদা: যথেষ্টই ভাল। লেখালেখি তো কত কিছুই হয়, হয়েও চলেছে। প্রথম আলাপের পর সন্ধেবেলায় আমায় বাইরে নেমন্তন্ন করেছিলেন। বললাম, ‘যেতে পারি, কিন্তু বেশিক্ষণ বাইরে থাকতে পারব না।’ আমার বয়স তখন খুবই কম, আর বাড়িও রক্ষণশীল।
পত্রিকা: গুরু কি আপনার প্রেমে পড়েছিলেন?
ওয়াহিদা: না। উনি তো নিজের কাজের প্রেমে হাবুডুবু খেতেন। গীতা আর ওঁর তো একটা সুন্দর পরিবার ছিল।
পত্রিকা: যেটা ভেঙে পড়েছিল উনি আপনার প্রেমে পড়ায়।
ওয়াহিদা: খুব ড্রিংক করতেন আর অল্প বয়েসে চলে গেলেন বলেই এই সব রোম্যান্টিক গল্প ছড়াল। ওঁর বেশ কিছুটা পরে এবং বেশ অল্প বয়েসে গীতাও চলে গেলেন বলেও ধারণাগুলো দানা বেঁধেছে।
পত্রিকা: তা’হলে এখন গুরুকে কী ভাবে মনে রাখেন?
ওয়াহিদা: একজন খুব ভিন্ন গোত্রের, মৌলিক চিন্তার পরিচালক হিসাবে। বড্ড প্যাশন এবং ভালবাসা দিয়ে ছবি করতেন। হিন্দিতে আমার আবিষ্কারক। ‘পিয়াসা’ যখন আমায় নিয়ে শ্যুট করছেন কলকাতায়, সবার ধারণা হল আমি নাকি বাঙালি। আমায় দেখতে বাঙালি। কেউ কেউ এসে বাংলায় কথা বলা শুরু করলেন, আমি যার কিছুই বুঝছি না। তারপর তো ‘সাহিব বিবি অউর গুলাম’-য়ে আমাকে দিয়ে জবার চরিত্রটাও করালেন। আপনারা তো জানবেন, উপন্যাসে জবার সঙ্গে নায়িকা পটেশ্বরীর কখনও দেখা হয় না। পটেশ্বরী করেছিলেন মীনাকুমারী। আমার খুব ইচ্ছে ছিল অত বড় অভিনেত্রীর সঙ্গে স্ক্রিন শেয়ার করার। কত কিছু শেখার আছে। তো গুরুকে বললাম, ‘একবার দেখা করিয়ে দাও না দুজনের। যে কোনও অছিলায়। কত কিছুই তো ঘটে জীবনে আর গল্পে।’ কিন্তু গুরু সমানে বলে গেলেন, ‘তা কী করে হবে? যা কাহিনিতে নেই তা ওভাবে ইন্ট্রোডিউস করা যাবে না।’ ছবির কোথায় কী হবে সব ওঁর মাথায় ধরা, উনি সিনেমার ওই আবেশেই থাকতেন।
পত্রিকা: অভিনেতা গুরু দত্ত?
ওয়াহিদা: এক বিশেষ ধরনের চরিত্র উনি সাজিয়ে গুছিয়ে নিতেন নিজের জন্য। দুঃখী, অন্তর্মুখীন, কবি-কবি। অর্থাৎ নিজে ব্যক্তিমানুষটি যেমন। আমি চলচ্চিত্রকার গুরু দত্তকে অনেক বড় করে দেখি।
পত্রিকা: তা হলে তো আসতে হয় আপনার বিপরীতে সব চেয়ে সফল নায়ক দেব আনন্দে। সাত-সাতটা ছবির মধ্যে পাঁচ-পাঁচটা সুপারহিট। ‘সিআইডি’, ‘সোলবা সাল’, ‘বাত এক রাত কি’ বা ‘গাইড’-য়ের কথা তো আজও আমাদের ঠোঁটে ঠোঁটে, স্মৃতিতে স্মৃতিতে। ঠিক কী রকম মনে হয়েছিল দেব সাবকে?
ওয়াহিদা: ওহ্ ওঁরও তো একটা বিশেষ ঘরানা অ্যাক্টিং-য়ের। ওঁর হাঁটাচলা, সাজপোশাক, সংলাপ উচ্চারণের স্টাইল, সবটাই এত পার্সোনালাইজড এবং রোম্যান্টিক, যে সব কিছু মিলেজুলে একটা জাদু ছড়িয়ে পড়ত। বড় অভিনেতা বলতে আমরা যেটা বুঝি, ওঁর ঠিক সেটা নয়। দেব আনন্দ হলেন দেব আনন্দ। একটা অদ্ভুত প্রেজেন্স। আমার সঙ্গে ওঁর জুটিতে কী কেমিস্ট্রি বেরিয়ে এসেছে, সেটা আপনারা বলতে পারবেন। ‘সোলবা সাল’-য়ের মতো মিষ্টি ছবি হয়ে গেছে, আবার ‘গাইড’। |
|
—ফাইল চিত্র। |
পত্রিকা: ‘গাইড’ তো আপনারও সেরা ছবি।
ওয়াহিদা: নিশ্চয়ই! ভাবুন কী অদ্ভুত একটা গল্প, আর কে নারায়ণের অত ভাল উপন্যাস। ত্রিকোণ প্রেম, অথচ সেই অর্থে কোনও ভিলেন নেই। কী অসম্ভব একটা চরিত্র রোজি। যে-সময়কার ছবি তখন দর্শক বেশ সংবেদনশীল। ভয় ছিল, রোজির রোল করে নায়িকা হিসেবে কী ভয়ানক বার্তাই না দিয়ে ফেললাম। কিন্তু সেটাই তো দর্শক নিল। ‘গাইড’ সত্যি বলতে কী, এ একটা সম্মেলক সাফল্য। কাহিনি, পরিচালনা, অভিনয়, সংলাপ, নাট্যময়তা, সঙ্গীত, নাচ, রং...
পত্রিকা: এবং ওয়াহিদা। দেশের এক সেরা সুন্দরী, সেরা অভিনেত্রী, ওই তরুণী ও ওই নাচ।
ওয়াহিদা: আমি তো ভাবছিলাম আপনি গুরু দত্তয় আপ্লুত।
পত্রিকা: গুরু দত্ত অবশ্যই খুব প্রিয়, কিন্তু আমি বা আমার সময়কার সবাই -ই তো ছিলাম ওয়াহিদায় আপ্লুত।
ওয়াহিদা: নিন, আর কী জানতে চান?
পত্রিকা: দিলীপ কুমার। যাঁর সঙ্গে আপনার পাঁচটা ছবি, আর তিনটে মস্ত সাফল্য ‘দিল দিয়া দর্দ লিয়া’, ‘রাম অউর শ্যাম’ এবং ‘আদমি’।
ওয়াহিদা: বড় অভিনেতা, যাঁর সঙ্গে কাজ করে অনেক কিছু বোঝা যায়, নেওয়া যায়।
পত্রিকা: ওঁর উপস্থিতিতে কি অভিভূত হয়ে থাকতেন?
ওয়াহিদা: না না, তা নয়। উনি খুব সহজ করে নিতেন কাজটা। খুব ভাল মানুষ। খুব চিন্তা করে, গভীর অভিনয় করতেন, তবে সরলতার সঙ্গে।
পত্রিকা: ‘দিল দিয়া দর্দ লিয়া’ কি আপনার প্রিয় ছবির একটা?
ওয়াহিদা: না। ওটা তো ‘উদারিং হাইটস’ উপন্যাস থেকে বানানো, কিন্তু বড্ড এলোমেলো করে করা হয়েছিল। দানা বাঁধেনি। বরং ‘রাম অউর শ্যাম’ ছবির মধ্যে বেশ
মজা ছিল।
পত্রিকা: রাজ কপূরের সঙ্গে ‘তিসরি কসম’-য়ের অভিজ্ঞতা কী রকম?
ওয়াহিদা: ওহ্, ওটা একটা খুব প্রিয় ছবি আমার। রাজ কপূরের পক্ষেও অমন একটা দেহাতি পরিবেশের ছবিতে আসাও একটা চমক। বলা যায় কেরিয়ার মুভ। বাসু ভট্টাচার্যেরও প্রথম ছবি। সিরিয়াস, সফিস্টিকেটেড।
পত্রিকা: আপনার নিজের করা প্রিয় পাঁচ ছবির মধ্যে থাকবে?
ওয়াহিদা: হ্যাঁ হ্যাঁ।
পত্রিকা: অন্যগুলো কী হবে?
ওয়াহিদা: ‘গাইড’। ‘খামোশি’। গুরু দত্তর ছবি।
এই সময় নায়িকার দ্বিধা-দ্বন্দ্ব দেখে মনে হল গুরুর ‘কাগজ কে ফুল’, ‘পিয়াসা’ কী ‘সাহিব বিবি অউর গুলাম’ নিয়ে ভাবছেন। ঠিক উত্তর কিছু পেলাম না। মনে হল গুরু দত্তকে নিয়ে ওঁর উথাল পাথাল এখনও রদ হয়নি। উনি ফের শুরু করলেন...
ওয়াহিদা: আমার প্রিয় ছবির মধ্যে থাকবে ‘রেশমা অউর সেরা’। চমৎকার ছবি। আর হ্যাঁ, বড় ভাল অভিনেতা ছিলেন সুনীল দত্ত। এই ছবিও ছাঁচ থেকে বেরোনো ছবি। তার পর ধরুন, সত্যজিৎ রায়ের ‘অভিযান’, যদিও আমার রোলটা খুবই ছোট ওখানে। তবু ছবিটা তো চমৎকার। আর তার পর ‘তিসরি কসম’।
পত্রিকা: সত্যজিৎবাবু সম্পর্কে কী ভাবনা?
ওয়াহিদা: উনি তো এক কথায় অসাধারণ। যেমন পড়াশুনা, জ্ঞান, তেমনি বড় ব্যক্তিত্ব। নিজেই লিখছেন, সুর করছেন, ডিজাইন করছেন, ডিরেকশন তো করছেনই। সিনেমা করার সমস্ত খুঁটিনাটি ওঁর দখলে। উনি জানেন কী চান, আর সেটাই নেবেন। এতে একটা অসুবিধে হয়তো অভিনেতা-অভিনেত্রীর। তাঁরা নিজেরা যদি কিছু নিজের মতো করতে চান, যে সুযোগ নেই। যেমন উনি জানতেন ‘অভিযান’-য়ে কতটুকু নেবেন এবং কী ভাবে, আর সেটাই করিয়ে নিয়েছেন।
পত্রিকা: তাহলে তো আপনার পছন্দের অন্য ডিরেক্টরদের নামও জানতে হয়।
ওয়াহিদা: ডিরেক্টর? পছন্দের? গুরু দত্ত। বিজয় আনন্দ।
পত্রিকা: বিজয়ের ‘গাইড’-য়ের পর তেমন ভাবে আপনার নাচকে কেউ সিনেমায় লাগাল না। খারাপ লাগে না?
ওয়াহিদা: লাগেই তো! ক্ল্যাসিক্যাল ডান্স ফর্মটাকে ডিরেক্টর হীরালাল কী সুন্দর কাজে লাগালেন ‘গাইড’-য়ে। তখন নৃত্য পরিচালকদের মধ্যে আছেন স্বয়ং গোপীকিষেন।
পত্রিকা: সিনেমায় কার নাচের অনুরাগী আপনি?
ওয়াহিদা: বৈজয়ন্তীমালা।
পত্রিকা: এখনকার সিনেমার নাচে?
ওয়াহিদা: মাধুরী দীক্ষিত। ঐশ্বর্যা রাই।
পত্রিকা: তো নায়িকা থেকে ক্যারেক্টার রোলে চলে যেতে বেদনা হয়নি?
ওয়াহিদা: দেখুন এ দেশে তো তিরিশ পেরলে কোনও মেয়েকে আর নায়িকার রোলে ভাবাই হয় না। এখানে কি ‘দ্য ব্রিজেস অফ ম্যাডিসন কাউন্টি’র মতো ছবি হয়? যেখানে ষাটের কোঠায় বয়সের ক্লিন্ট ইস্টউড আর পঞ্চাশের কোঠায় বয়সের মেরিল স্ট্রিপকে দিয়ে কী অপূর্ব ছবি হয়েছে। ওখানে এসব হয়। এখানে নয়। কাজের কাহিনির গুরুত্ব বুঝে সিনিয়র রোল বেছেছি।
পত্রিকা: আপনি বরাবরই তো কাহিনি বুঝে রোল বেছেছেন দেখি...
ওয়াহিদা: বরাবর। গল্পের আর চরিত্রের গভীরতা আমায় টানে।
পত্রিকা: তাহলে আজকের বলিউড ট্রেন্ড আপনার কেমন ঠেকে?
ওয়াহিদা: খুব স্মার্ট। টেকনিক্যালি বিশ্বমানের। নিত্য নতুন স্টাইলের হেরফের। তবে আগের দিনের মতো সাহিত্যে ভর করা ছবি তো নয়। বড্ড জোর দেওয়া হয় এন্টারটেনমেন্টে। ঠিক আছে, যেমনটি যুগের মানুষের চাহিদা তেমনটি হচ্ছে।
পত্রিকা: কেন, বিনোদন আর গভীরতা তো দিব্যি মিলিয়েছিল ‘গাইড’?
ওয়াহিদা: সেজন্যই তো ‘গাইড’, ‘গাইড’। আজ প্রায় পঞ্চাশ বছর পরেও বার বার উদাহরণ হিসেবে উঠে আসছে। লাভের অঙ্ক দিয়ে তো এর সাফল্য মাপা হয় না। ক্ল্যাসিক হয়ে জন্মে ক্ল্যাসিকই থেকে গেছে। যদিও ব্যবসাও দিয়েছে।
পত্রিকা: ফিরে ফিরে দেখেন নিজের প্রিয় ছবিগুলো?
ওয়াহিদা: কই, কোথায় আর দেখি? কদাচিৎ, কিচ্ছু করার না থাকলে।
পত্রিকা: কারণ?
ওয়াহিদা: দেখলে নিজের আগেকার কাজে খুঁত খুঁজে পাই। কেন এটা এ ভাবে করলাম না!
পত্রিকা: ‘গাইড’-য়ে রোজির রোলেও?
ওয়াহিদা: নিশ্চয়ই।
পত্রিকা: তাহলে শেষে আপনাকে বাংলাতেই ফিরিয়ে আনি।
ওয়াহিদা: ও কে।
পত্রিকা: উত্তমকুমারের কথা জিজ্ঞেস করেছি। জিজ্ঞেস করতে চাই সুচিত্রা সেনকে নিয়ে...
ওয়াহিদা: পরমাসুন্দরী। কী ভাল দেখতে! তেমনি বড় অভিনেত্রী। পর্দায় ওঁকে দেখলেই বুঝে নেওয়া যায় মানুষটা ভাল।
পত্রিকা: ওয়াহিদা রহমান মানুষটা কী রকম?
ওয়াহিদা: চেষ্টা করি ভাল মানুষ হয়ে উঠতে। |
ছবি: সুব্রত কুমার মণ্ডল |
|
|
|
|
|