একশো দিনের কাজ প্রকল্পে সামজিক বনসৃজন কোনও নতুন উদ্যোগ নয়। কিন্তু গাছ লাগানো থেকে রক্ষণাবেক্ষণ এই পুরো কাজে মহিলা স্বনির্ভর দলকে ব্যবহারের মধ্যে অভিনবত্ব রয়েছে। অভিনবত্ব রয়েছে অদিবাসী এলাকায় শাল-মহুয়ার মতো গাছ ফিরিয়ে দেওয়ার মধ্যেও। এই কাজের উদ্যোক্তা দুবরাজপুরের লক্ষ্মীনারায়ণ পঞ্চায়েত। বুধবার থেকে ওই পঞ্চায়েত এলাকার মাজুরিয়া গ্রাম সংলগ্ন মিলনচক মৌজা এবং মাজুরিয়া মৌজায় শুরু হল শাল, মহুয়া, অমলকি, বহড়া এবং দেশি জামের মতো মোট পাঁচ প্রকার গাছের ৩৫০০ চারা লাগানোর কাজ। গাছ লাগাচ্ছেন এলাকার সিধো-কানহু, মনসা, মা লক্ষ্মী, তারা মা নামে ৪টি আদিবাসী মহিলা স্বনির্ভর দলের সদস্যরা। তার আগে অবশ্য গর্ত করে বেড়া দেওয়ার কাজে জবকার্ডধারী স্বনির্ভর দলের সদস্যদের পরিবারের পুরুষ সদস্যরা ও এলাকার মানুষ কাজ করেছেন। |
পঞ্চায়েত সূত্রের খবর, কাজটি এখন শুরু হলেও ভাবনাটা শুরু গত সিপিএম পঞ্চায়েত বোর্ড থাকাকালীনই এবং এই বিষয়ে পূর্ণ সহযোগিতা আছে দুবরাজপুর ব্লক প্রশাসনের। দৈনন্দিন জীবনে নানা চাহিদা মেটায় বলে আদিবাসীদের অন্ত্যন্ত প্রিয় গাছ শাল, মহুয়া। কিন্তু বেশ কয়েক বছর ধরে এই সব গাছের সংখ্যা ক্রমশ হ্রাস পাচ্ছে বীরভূমে। সেই জায়গার দখল নিয়েছে ইউক্যালিপটাস বা সোনাঝুরির মতো গাছ। মোট বনভূমির ২০ শতাংশ অন্য (ফলের গাছ-সহ) গাছ লাগানোর সরকারি নির্দেশিকা থাকলেও বনদফতর ইউক্যালিপটাস বা সোনাঝুরির মতো সব গাছ লাগাতেই বেশি পছন্দ করে। কারণ, এতে রক্ষণাবেক্ষণ কম প্রয়োজন। এমনকী সামাজিক বনসৃজন প্রকল্পে লাগানো গাছের ক্ষেত্রেও একই ভাবনা কাজ করে। ফলে অন্য গাছ পরিমাণ কমছে।
৬ লক্ষ ৯০ হাজার টাকা খরচ করে সামাজিক বনসৃজনের মাধ্যমে আদিবাসীদের প্রিয় গাছ ফিরিয়ে দিতেই এই উদ্যোগ। গত মে মাসে পঞ্চায়েতগুলির মেয়াদ শেষ হওয়ার মাস দুয়েক যখন সব পঞ্চায়েত বিডিওর তত্বাবধানে ছিল, সেই সময় ১০০ দিনের কাজ সুষ্টু ভাবে করানোর ক্ষেত্রে স্বনির্ভর দলগুলিকে ব্যবহার করার সিদ্ধান্ত হয়। দুবরাজপুরের বিডিও কুণাল বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, “যেহেতু স্বনির্ভর দলগুলি একটি ইনস্টিটিউশন হিসেবে কাজ করে, তাই এই প্রকল্প রূপায়ণ ও দেখভালের দায়িত্ব তাদেরই দেওয়া হয়েছে। রক্ষণাবেক্ষণের কাজ করলে যেমন আয়ের সুযোগ রয়েছে তেমনই পাঁচ বছর পর থেকে ওই বনভূমি থেকে একটা আয় তৈরি হবে। কিন্তু যত দিন না সেটা হচ্ছে স্বনির্ভর দলের সদস্যরা যাতে হতাশ না হন, সেই কারণে দু’টি গাছের মধ্যে মধ্যে পেঁপে বা আদা চাষ করার কথা ভাবা হচ্ছে।”
যাঁদের জন্য ভাবনা সেই আদিবাসী মহিলা স্বনির্ভর দলের নেত্রী হীরমতি রানা, মোমিটি মুর্মু, লক্ষ্মী রানা, মালতি কিস্কুরা বললেন, “খুব ভাল হল। এমনিতে শাল, মহুয়া পাতা না পেলে থালা তৈরি করতে পারি না। আর মহুয়ার ফুল ও বীজ দুটোই খুব কাজের। গাছগুলো বড় করতে পারলে এ সবের সঙ্গে জ্বালানির কাঠও পেয়ে যাব।” সিপিএমকে সরিয়ে সদ্য দায়িত্ব নেওয়া তৃণমূল প্রধান বিনয় বাগদিও বলেন, “উদ্যোগটা ভাল। এই কাজ যাতে অন্য এলাকায় আরও বেশি করে করা যায় সেটা দেখব।” পঞ্চায়েত ও ব্লক সূত্রে জানা গিয়েছে, দিন কয়েকের মধ্যে মাজুরিয়া গ্রামের অন্য চারটি তফসিলি স্বনির্ভর দলকে দায়িত্ব মাজুরিয়া মৌজায় আরও একটি একই ধরনের প্রকল্পের দায়িত্ব দেওয়া হবে। বেড়া দেওয়ার কাজ চলছে। তবে সেই বনভূমিতে শাল-মহুয়া গাছের সংখ্যা তুলনায় কম থাকবে। |