ষাট হাজার বর্গফুট জায়গা জুড়ে বাজার। দোকানের সংখ্যা ৪৩৬। আর অগ্নিনির্বাপক যন্ত্র মাত্র ২১টি। ‘পৌর পণ্যবীথিকা’ নামে বেহালার পুর-বাজারের এই অবস্থায় আশঙ্কায় রয়েছেন বাজারের ব্যবসায়ীরা। ১৯৯২-এ এই বাজারেই আগুন লেগে প্রায় ৮০ শতাংশ দোকান পুড়ে গিয়েছিল। তার পরে নতুন করে বাজার তৈরি হলেও, গত কুড়ি বছরে কোনও পুরবোর্ডই বাজারটি নিয়ে ভাবনাচিন্তা করেনি বলে অভিযোগ বাজারের অধিকাংশ ব্যবসায়ীর।
বেহালার ১৩০ নম্বর ওয়ার্ডে ডায়মন্ড হারবার রোডের উপর ১৯৭৪-এ গড়ে ওঠে পুর-বাজারটি। বাজারটিতে পুরনো পরিকল্পনা মাফিক দোকান থাকলেও, বর্তমানে বাজারের ভিতরে দোকানের সংখ্যা বেড়েছে। ফলে দু’টি দোকানের মধ্যে দূরত্বও কমেছে। অনেকেই স্থায়ী দোকান না পাওয়ায় ভিতরে বড় বড় প্লাস্টিক টাঙিয়ে দোকান করেছেন। ফলে কোথাও সামান্য আগুনের ফুলকি বা শর্ট সার্কিট থেকে আগুন দেখলেই আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে বাজারের ভিতরে। কিন্তু তা সত্ত্বেও এক শ্রেণির ব্যবসায়ীর মধ্যে সচেতনতা বাড়েনি বলে অভিযোগ। বাজারের ভিতরে দোকানের মধ্যেই স্টোভ জ্বালিয়ে চলেছে রান্না। চারদিকে দাহ্যবস্তু। |
শুধু তাই নয়, ব্রাহ্মসমাজ রোডের দিকে বাজারের তিন নম্বর গেটটির ভিতরেই রয়েছে হাই-ভোল্টেজের বড় বড় ট্রান্সফর্মার। একটি আবার খোলা অবস্থায় রয়েছে। যে ঘরের ভিতরে রয়েছে, তার দরজাও খোলা। তার বাইরে প্লাস্টিক ছাউনি দিয়ে দোকান খুলেছেন ছোট ছোট সব্জি বিক্রেতারা। কেউ যদি ভিতরে ঢুকে কোনও ভাবে খোলা ট্রান্সফর্মারে হাত দেন, দুর্ঘটনা ঘটতে পারে যে কোনও সময়ে। ব্যবসায়ীদের কাছ থেকেই জানা গেল, ডায়মন্ড হারবার রোডের
বিস্তীর্ণ এলাকার বিদ্যুৎ যায় এই ট্রান্সফর্মার থেকেই।
কলকাতা পুরসভার মেয়র পারিষদ (বাজার) তারক সিংহ বলেন, “ট্রান্সফর্মারটি সিইএসসি-র। অনেক আগে থেকেই ওটি রয়েছে। তবে দরজা যাতে বন্ধ থাকে সে জন্য আমি সিইএসসি-কে এ বিষয়ে ব্যবস্থা নিতে বলব।” বাজারের বর্তমান সমিতি সূত্রে জানা গেল, বাজার তৈরির সময় থেকেই ওখানে ট্রান্সফর্মারটি রয়েছে। ওখান থেকেই বাজারের ভিতরে থাকা পুরসভার বাজার দেখভালের জন্য যে অফিস সেখানে বিদ্যুতের লাইন দেওয়া হয়েছে। সেই অফিস থেকেই ব্যবসায়ীরা যে ভাবে পেরেছেন, দোকানে বিদ্যুতের লাইন টেনেছেন। ফলে শর্ট সার্কিট হয়ে কোনও ভাবে আগুন ছড়ালে ফের বড়সড় অগ্নিকাণ্ড ঘটতে পারে বলে মনে করছেন অনেক দোকানদার। এ বিষয়ে সিইএসসি-র পক্ষ থেকে কেউ মন্তব্য করতে চাননি।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক ব্যবসায়ী জানান, সম্প্রতি বাজারের বাইরে ডায়মন্ড হারবার রোডের উপর একটি দোকানে আগুন লেগেছিল। কিন্তু ওই দোকানটির পিছনের দেওয়াল আর বাজারের দোকানগুলির দেওয়াল আলাদা না হওয়ায়, সকলেই ভয়ে বাইরে বেরিয়ে পড়েছিলেন আগুন নেভানোর কাজে হাত লাগাতে। তিনি বলেন, “সে দিন সকালে আগুন লাগায় বাজার বেঁচে গিয়েছিল। রাতে লাগলে হাতিবাগান বাজারের মতো পুরোটাই ভস্মীভূত হয়ে যেত।” |
তাই যদি হয়, তা হলে চার দিকে দাহ্যবস্তু থাকা সত্ত্বেও কী করে বাজারের ভিতরে স্টোভ জ্বেলে রান্না চলছে?
বাজার সমিতির কার্যকরী সভাপতি তাপস বাকুলি বলেন, “আমরা এবং পুরসভা নিষেধ করা সত্ত্বেও অনেকেই শুনতে চান না। কয়েক দিন আগে বাজারের ভিতরে রান্না, এমনকী চায়ের দোকানও বন্ধ করে দিয়েছিলাম। কিন্তু আবার শুরু হয়েছে।” প্রায় একই কথা বলেন মেয়র পারিষদ তারকবাবুও। তিনি বলেন, “বার বার বাজারগুলিতে গিয়ে বলা হয়েছে যাতে স্টোভ বা আগুন জ্বালিয়ে রান্না না করা হয়। কিন্তু সচেতনতার অভাবে ব্যবসায়ীরা কথা না শুনে নিজেদের বিপদ নিজেরাই ডেকে আনেন।” তাঁর বক্তব্য, শুধু ওই বাজারেই নয়, কলকাতার অধিকাংশ পুর-বাজারের দোকানদারের মধ্যেই আগুন প্রতিরোধ সম্পর্কে সচেতনতার অভাব রয়েছে। |