তখনও সাড়ে ১২টা বাজেনি। রোদ বেশ চড়া। ফুটপাথের ধারে পানের দোকানের পাশে দাঁড়িয়ে আবদুলের সঙ্গে গল্প করছিলাম। চিত্তরঞ্জন অ্যাভিনিউ দিয়ে একটা ট্যাক্সি জোরে হর্ন দিয়ে ম্যাডান স্ট্রিটে ঢুকে পড়ার পরেই দুম করে কিছু ফাটার আওয়াজ পেলাম। খুব জোরালো নয়, একটু চাপা ধরনের আওয়াজ। কিন্তু সঙ্গে সঙ্গে ধোঁয়ায় ঢেকে গেল ফুটপাথের খানিকটা অংশ।
ভাবলাম, ট্রান্সফর্মারে হয়তো কোনও বিস্ফোরণ হয়েছে। মাঝেমধ্যেই এমন হয়। তাই প্রথমে তেমন পাত্তা দিইনি। পরে ভাল করে ফুটপাথের দিকে তাকাতেই নজরে এল দাগটা। মুচিপাড়ায় গত বছর বোমাবাজি হয়েছিল। তখন সেখানে রাস্তায় বোমার দাগ দেখেছিলাম। ম্যাডান স্ট্রিটের ফুটপাথের দাগটাও ওই বোমার দাগের মতোই মনে হল। |
আবদুল ততক্ষণে কী একটা কাজে চলে গিয়েছে। আমি একাই এগিয়ে গেলাম। কাছ থেকে দাগটা দেখতেই সন্দেহ দূর হল। দেখলাম, বিস্ফোরণের জায়গায় স্টিলের তৈরি একটি ফাটা খৈনির কৌটো পড়ে রয়েছে। সেটা আবার হলুদ প্লাস্টিকের আঠালো ফিতে দিয়ে পেঁচানো। কৌটোর পাশে ছড়িয়ে ছিটিয়ে পড়ে রয়েছে ছোট ছোট কয়েকটি বল বিয়ারিং। বারুদ, রাসায়নিক লেগে নীলচে হয়ে গিয়েছে সেই বল বিয়ারিংগুলি।
গায়ে কাঁটা দিয়ে উঠল আমার। ভাবলাম, এটা জঙ্গিদের কাজ নয় তো? দুপুর ১২টার চাঁদনি চক এমনিতেই ব্যস্ত এলাকা। জমজমাট ভিড় সেখানে। কেউ কি তবে মুম্বই, হায়দরাবাদের মতো কলকাতাতেও ‘ব্লাস্ট’ করাচ্ছে? এই ঘটনা হয়তো তারই সূচনা। এর পরে আরও বিস্ফোরণ হবে। সেটা এত ছোট না-ও হতে পারে। তা হলে বহু মানুষ মারা পড়বেন!
আর ভাবতে পারলাম না। তাড়াতাড়ি চারপাশ খুঁটিয়ে দেখতে শুরু করলাম। ফুটপাথে পড়ে থাকা প্লাস্টিক জড়ানো পুরনো কার্টন, খবরের কাগজ ঘাঁটলাম। কেন জানি না আমার মনে হচ্ছিল, ওখানে আরও বোমা থাকতে পারে। কিছুক্ষণ পরে দেখি, ফুটপাথে বিদ্যুতের ফিডার বক্সের তলায় আরও একটি খৈনির কৌটো পড়ে রয়েছে। সেটিও হলুদ প্লাস্টিকের আঠালো ফিতে দিয়ে পেঁচানো, তবে এমন ভাবে রাখা আছে যে, চট করে কেউ বুঝতে পারবে না। আমি হাত দিয়ে ধরতে গিয়েও পিছিয়ে এলাম।
চার দিকে বিজ্ঞাপন দেখি, সন্দেহজনক কিছু দেখলেই পুলিশকে বিষয়টি জানান। বম্ব স্কোয়াডের নম্বর আমার কাছে নেই। আমি শুধু বৌবাজার থানার কয়েক জন অফিসারকে চিনি। দেরি না করে ছুটে পৌঁছলাম সেই থানায়। সমীর স্যারকে (অ্যান্টি-রাউডি অফিসার) হাঁফাতে হাঁফাতে বললাম সব। উনি বললেন, ‘চল তো গিয়ে দেখি।’ ওঁকে নিয়ে এসে দেখালাম কৌটো বোমাটি। তার পরে তো থানার বড়বাবু ফোর্স নিয়ে এসে সব সামলালেন।
বোমাটি সরিয়ে নেওয়ার পরে বুঝলাম, কতটা আতঙ্ক চেপে বসেছিল আমার উপরে! |