ভরদুপুরে কৌটো বোমা ফেটে আতঙ্ক চাঁদনিতে
দুপুর সাড়ে ১২টা নাগাদ ম্যাডান স্ট্রিট ও চিত্তরঞ্জন অ্যাভিনিউয়ের সংযোগস্থলে বোমা ফাটার আওয়াজে এলাকার মানুষের অনেকেই ভেবেছিলেন, বড় কোনও বিপদ হল বুঝি।
এক দিকে সদ্য ধরা পড়া ইন্ডিয়ান মুজাহিদিনের চাঁই ইয়াসিন ভটকলের কলকাতা-যোগ। অন্য দিকে, আলিপুরদুয়ারে জঙ্গিদের রাখা বোমা নিষ্ক্রিয় করতে গিয়ে পুলিশকর্মীর মৃত্যু— এর পরিপ্রেক্ষিতে শুক্রবার দুপুরে কলকাতার অতি ব্যস্ত এলাকায় বোমা ফাটার খবর পেয়ে উদ্বেগ ছড়ায় লালবাজারেও। কিন্তু তদন্তে নেমে দেখা গেল, জঞ্জালের স্তূপে পড়ে থাকা নেহাতই একটি কম শক্তিশালী দেশি বোমা বা ‘ক্রুড বম্ব’ ফেটে ওই ঘটনা ঘটেছে। প্রাথমিক তদন্তের পরে পুলিশ কর্তারা মোটামুটি নিশ্চিত, এর সঙ্গে জঙ্গি কার্যকলাপের সম্পর্ক নেই। ওই ঘটনায় কলকাতার বিপদ ঘনিয়েছে বলে মনে করারও কারণ নেই বলে আশ্বস্ত করেছেন পুলিশ কর্তারা।
পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রের খবর, এ দিন দুপুরে হিন্দু মিউচুয়াল হাউসের সামনে একটি ট্রান্সফর্মারের পাশে ফুটপাথের উপর বোমাটি ফাটে। প্রাথমিক তদন্তে জানা যায়, একটি খৈনির কৌটোর মধ্যে বিস্ফোরক ঠেসে বোমাটি বানানো হয়েছিল এবং সেটি ওইখানেই আবর্জনার স্তূপের মধ্যে পড়ে ছিল। পুলিশ কর্তাদের অনুমান, ওই স্তূপের মধ্যেই বোমাটি কোনও ভাবে, সম্ভবত গরমে বা কোনও কিছুতে ধাক্কা লেগে আচমকা ফেটে যায়। পরে ঘটনাস্থলে তল্লাশি চালিয়ে পাওয়া যায় একই রকম ভাবে খৈনির কৌটোয় বিস্ফোরক ভরে বানানো আরও একটি বোমা। আলিপুরদুয়ারের গত কালের উদাহরণ মাথায় রেখে বোমা নিরোধক বর্ম এবং হেলমেট পরে তবেই এক পুলিশকর্মী ট্রান্সফর্মারের ফিডার বক্সের তলা থেকে দ্বিতীয় বোমাটি বের করে আনেন। পরে সেটিকে নিষ্ক্রিয় করেন লালবাজারের বম্ব ডিসপোজাল স্কোয়াডের পুলিশ। ঘটনাস্থলে আরও বোমা আছে কি না, তা খুঁজে বের করতে দু’টি পুলিশ কুকুর ঘটনাস্থলে আনা হয়।

পুলিশ কর্তাদের একাংশের বক্তব্য, এর আগেও জঞ্জালের স্তূপ থেকে এ রকম অতি সাধারণ মানের কৌটো বোমা মিলেছে। সেগুলি এমনিতে বড় ধরনের ক্ষয়ক্ষতি না করলেও অনেক সময়েই বল ভেবে খেলতে গিয়ে জখম এমনকী মৃত্যুও হয়েছে কয়েক জনের। এ দিন দুপুরে যে-জায়গায় বোমাটি ফেটেছে, সেটি জনবহুল অফিস পাড়া। এবং বোমাটি ফেটেওছে অফিসের ব্যস্ত সময়ে। তাই, কোনও পথচারী বা অন্য কারও ক্ষতি হলে ওই আপাত তুচ্ছ বোমাই যে বড় ঘটনা ঘটাতে পারত, তা মেনে নিচ্ছেন অনেকেই। তা ছাড়া, কলকাতার বাণিজ্যস্থলের কেন্দ্রে ওই জায়গায় ওই বোমা এলই বা কী করে, সেই ব্যাপারে তদন্তকারীরা এখনও অন্ধকারে। প্রশ্ন উঠছে, তবে কি কেউ ইচ্ছাকৃত ভাবে ওখানে বোমাগুলি রেখেছিল? তদন্তকারীদের কেউ কেউ অবশ্য বলছেন, বোমাগুলি বেশ পুরনো এবং জঞ্জালের সঙ্গে অন্য জায়গা থেকে কোনও ভাবে ওখানে চলে এসেছিল।
বিস্ফোরণের পরে। শুক্রবার রণজিৎ নন্দীর তোলা ছবি।
গোয়েন্দারা জানান, এ দিন যে বোমাটি ফেটেছে বা যেটি পাওয়া গিয়েছে, তাতে উপকরণ হিসেবে কাঠকয়লা, গন্ধক, পটাসিয়াম, বারুদ, লোহাচুর, পেরেক বা কাচের টুকরো মেশানো হয়। সাধারণ ভাবে এই ধরনের বোমা ফাটলে তার প্রভাব ২০ ফুট এলাকার মধ্যে সীমাবদ্ধ থাকে। অর্থাৎ গোয়েন্দাদের কথা মতো, বিস্ফোরণের সময় ওই এলাকার মধ্যে কোনও মানুষ থাকলে তাঁর ক্ষতি হতে পারত। এ দিনের বোমার ভিতরে সাইকেলে ব্যবহৃত লোহার বল বেয়ারিং মিলেছে। তদন্তকারীদের বক্তব্য, এই ধরনের বোমা সাধারণত সমাজবিরোধীরা ব্যবহার করে। এটি ছুঁড়লে সশব্দে ফাটে। অনেক সময় তরল পদার্থের সংস্পর্শেও এই ধরনের বোমা ফেটে যেতে পারে। এমনিতে ক্ষয়ক্ষতির ক্ষমতা তত বেশি না হলেও এর আওতার মধ্যে থাকা কারও মাথা বা বুকে সরাসরি বোমার স্প্লিন্টার লাগলে মৃত্যু পর্যন্ত হতে পারে।
আর কোনও বোমা নেই তো? তল্লাশি চালাচ্ছেন বম্ব স্কোয়াডের
কর্মী। শুক্রবার চাঁদনি চকে। ছবি: রণজিৎ নন্দী
লালবাজারের এক শীর্ষ কর্তার কথায়, “আর যা-ই হোক, সন্ত্রাসবাদীরা খৈনির কোটোয় বিস্ফোরক ঠেসে বোমা বানিয়ে বিস্ফোরণ ঘটাবে না! লস্কর-ই-তইবা, আইএমের মতো জঙ্গি সংগঠনের বিস্ফোরণ এত ছোট মাপের হয় না। তাই, এর সঙ্গে জঙ্গি কার্যকলাপের কোনও সম্পর্ক নেই।”
যুগ্ম কমিশনার (অপরাধ দমন) পল্লবকান্তি ঘোষ বলেন, “ঘটনাস্থল থেকে বিস্ফোরকের নমুনা সংগ্রহ করা হয়েছে। না-ফাটা বোমাটিও উদ্ধার করা হয়েছে। ফরেন্সিক বিশেষজ্ঞদের কাছে সেগুলি পাঠানো হবে।”
 
 
 


First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.