লাগামছাড়া টানা পতনের পর সবে দু’দিন সামান্য ঘুরে দাঁড়িয়েছে টাকা ও শেয়ার বাজার। তারই মধ্যে শুক্রবার দেশের অর্থনীতির জন্য নতুন দুঃসংবাদ বয়ে আনল আর্থিক বৃদ্ধির হার। কেন্দ্রের পরিসংখ্যান অনুযায়ী, চলতি অর্থবর্ষের প্রথম তিন মাসে (এপ্রিল-জুন) বৃদ্ধি আরও কমে দাঁড়াল ৪.৪%। যা ২০০৯ সালের জানুয়ারি-মার্চ ত্রৈমাসিকের পর এখনও পর্যন্ত সব থেকে নীচে।
আলোচ্য ত্রৈমাসিকের ঠিক আগের তিন মাসে (২০১২-’১৩ অর্থবর্ষের শেষ ত্রৈমাসিক) বৃদ্ধির হার ছিল ৪.৮%। আর গত অর্থবর্ষের প্রথম ত্রৈমাসিকে তা ছিল আর একটু বেশি, ৫.৪%। পরিসংখ্যান অনুযায়ী, এ বার খনন শিল্পে (-২.৮%) ও কল-কারখানায় উৎপাদন (-১.২%) সরাসরি কমে যাওয়াই বৃদ্ধির চাকায় গতি এতটা কমে যাওয়ার প্রধান কারণ। এই শ্লথ বৃদ্ধির চক্রব্যুহ থেকে বেরিয়ে অর্থনীতিকে চাঙ্গা করতে এ দিন কেন্দ্র ও রিজার্ভ ব্যাঙ্কের কাছে আর্জি জানিয়েছে আতঙ্কিত শিল্পমহল। তাদের দাবি, বিনিয়োগের পরিবেশ চাঙ্গা করতে আরও জোরদার পদক্ষেপ করা হোক অবিলম্বে। |
এ দিনই প্রকাশিত হয়েছে এই অর্থবর্ষের প্রথম চার মাসের রাজকোষ ঘাটতির পরিসংখ্যানও। দেখা গিয়েছে ওই ঘাটতিও ইতিমধ্যেই পৌঁছে গিয়েছে বাজেট লক্ষ্যমাত্রার ৬২.৮ শতাংশে। টাকার অঙ্কে যা ৩.৪ লক্ষ কোটি। গত অর্থবর্ষের একই সময়ে এই হার ছিল ৫১.৫১%। চলতি অর্থবর্ষের প্রথম থেকেই টাকার দামের লাগাতার পতন (এখনও পর্যন্ত প্রায় ২০%) এই ঘাটতিতে ইন্ধন জুগিয়েছে। মূলত তেল ও খাদ্যে ভর্তুকি মেটাতে গিয়েই খরচ হয়েছে বেশির ভাগ অর্থ। সংশ্লিষ্ট মহলের আশঙ্কা, বাজেটে খাদ্যে ভর্তুকি ৯০ হাজার কোটি টাকা ধরা হলেও, তা অর্থবর্ষ শেষে ১.১৩ লক্ষ কোটি ছুঁতে পারে। তেলে ভর্তুকিও বরাদ্দ ২০ হাজার কোটি টাকা ছাড়িয়ে পৌঁছে যেতে পারে তার দ্বিগুণ অঙ্কে।
তবে রাজকোষ ঘাটতির পরিমাণ জাতীয় আয়ের ৪.৮ শতাংশে বেঁধে রাখতে কেন্দ্র সবরকম চেষ্টা করবে বলে শুক্রবারই ফের জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিংহ। এপ্রিল-জুলাইয়ে রাজস্ব ঘাটতির পরিমাণও বাজেট লক্ষ্যমাত্রার ৭৩ শতাংশে গিয়ে দাঁড়িয়েছে। টাকার হিসাবে যা ২.৭৭ লক্ষ কোটি।
এমনিতে এই আর্থিক বছরের প্রথম ত্রৈমাসিকেই বৃদ্ধির চাকায় গতি ফিরবে না বলে অনেক আগে থেকেই বলে আসছেন অর্থমন্ত্রী পি চিদম্বরম। এ দিন এই একই কথা বলেন প্রধানমন্ত্রীও। তাই এই হার নিয়ে তেমন প্রত্যাশা ছিল না বললেই চলে। কিন্তু গত ত্রৈমাসিকের থেকেও তা কমে যাওয়া শিল্প এবং লগ্নিকারীদের মধ্যে নতুন করে আশঙ্কা তৈরি করতে পারে বলে মনে করছেন অনেকে। তবে বাণিজ্য মন্ত্রী আনন্দ শর্মার আশ্বাস, “অর্থনীতির ভিত যথেষ্ট পোক্ত। শিল্পের ঘুরে দাঁড়ানোর ক্ষমতা আছে। তাই অযথা ভয় পাওয়ার কোনও কারণ নেই।”
|
প্রধানমন্ত্রীর আশ্বাসে উঠল টাকা ও বাজার
নিজস্ব প্রতিবেদন |
প্রধানমন্ত্রীর আশ্বাসে আস্থা রেখে ঘুরে দাঁড়ানোর লড়াই বজায় রাখল টাকা। আগের দিন ২২৫ পয়সা কমার পর শুক্রবার ফের ৮৫ পয়সা দাম পড়ল ডলারের। দিনের শেষে মার্কিন মুদ্রার দর দাঁড়াল ৬৫.৭০ টাকা। ওঠার ধারা অব্যাহত রাখল শেয়ার বাজারও। বৃহস্পতিবার ৪০৫ পয়েন্ট ওঠার পর এ দিনও আবার এক লাফে প্রায় ২১৯ পয়েন্ট উঠল সেনসেক্স। থিতু হল ১৮,৬১৯.৭২ অঙ্কে। টাকার লাগাতার পতন আর অর্থনীতির বেহাল দশা নিয়ে সকলকে আশ্বস্ত করতে এ দিন সংসদে বক্তব্য পেশ করেন প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিংহ। এই অর্থবর্ষের দ্বিতীয়ার্ধেই বৃদ্ধির চাকায় গতি ফিরবে বলে দাবি করেন তিনি। জানান, কোনও ভাবেই বেড়ি পরানো হবে না পুঁজির পায়ে। আশ্বাস দেন, অর্থনীতির প্রাণ ফেরাতে প্রয়োজনে তেতো দাওয়াই প্রয়োগেরও। অনেকেই মনে করছেন, মূলত এই সমস্ত প্রতিশ্রুতিতে আস্থা রেখেই এ দিন উঠেছে টাকা আর বাজার। আবার বাজার চাঙ্গা হওয়ায় দাম কমেছে সোনারও। এ দিন আরও বন্দোবস্ত করা হয়েছে সোনার চাহিদা কমাতে। তবে আন্তর্জাতিক অর্থ ভান্ডারের মুখপাত্রের মতে, “চলতি খাতে ঘাটতির পাশাপাশি বাজেট ঘাটতি বৃদ্ধি লগ্নিকারীদের মনে অনাস্থা তৈরি করেছে ভারতের বাজার সম্পর্কে।” কিছুটা সেই কারণেই বিএনকে ক্যাপিটাল মার্কেটসের এমডি অজিত খন্ডেলওয়াল মনে করেন, “পড়তি বাজারের সুযোগ এ দিন অনেকে নিয়েছেন। তবে বাজার ওঠার কোনও পোক্ত কারণ এখনও নেই।” |