দু’ বছর ধরে তিনিই ছিলেন কেন্দ্রটির অধিকর্তা। দায়িত্ব থেকে অব্যাহতি নেওয়ার পরেই একের পর এক আর্থিক দুর্নীতি ও বেনিয়মের অভিযোগ উঠতে থাকে প্রাক্তন সেই অধিকর্তার বিরুদ্ধেই। এ বার ওই সব অভিযোগ যাঁচাই করতে কৃষি অর্থনীতি গবেষণা কেন্দ্রের সদ্য প্রাক্তন অধিকর্তা দেবাশিস সরকারের বিরুদ্ধে বিশ্বভারতী তিন সদস্যের একটি তদন্ত কমিটি গড়ল। উপাচার্য সুশান্ত দত্তগুপ্ত-র নির্দেশে গঠিত ওই কমিটি দ্রুত তদন্ত করে রিপোর্ট জমা দেবে। সম্প্রতি এই মর্মে একটি বিজ্ঞপ্তি জারি করেছেন বিশ্বভারতীর কর্মসচিব ডি গুণশেখরন।
বিশ্বভারতী সূত্রের খবর, বিশ্বভারতীর কৃষি অর্থনীতি গবেষণা কেন্দ্রের সদ্য প্রাক্তন অধিকর্তা দেবাশিস সরকারের (তিনি অধ্যাপকসভার প্রাক্তন সভাপতিও) বিরুদ্ধে নানা মহল থেকে অভিযোগ পেয়ে গত ২২ জুলাই কেন্দ্রীয় কৃষি মন্ত্রক এ নিয়ে বিশ্বভারতীর কাছে রিপোর্ট তলব করে। সেই চিঠি পেয়ে তড়িঘড়ি বৈঠকে বসেন বিশ্বভারতী কর্তৃপক্ষ। উপাচার্যের নির্দেশে অভিযোগের তদন্ত করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। গত ২০ অগস্ট ওই প্রাক্তন অধিকর্তার বিরুদ্ধে ওঠা অভিযোগগুলি খতিয়ে দেখতে তিন সদস্যের তদন্ত কমিটি গড়ার কথা জানিয়ে সংশ্লিষ্ট সকল সদস্য-সহ ওই কেন্দ্রের বর্তমান অধিকর্তার কাছে চিঠি পাঠায় বিশ্বভারতী।
বিশ্বভারতী সূত্রের খবর, ২০১১ সালে বিশ্বভারতীর পল্লিশিক্ষা ভবনের অধ্যাপক দেবাশিস সরকার কৃষি অর্থনীতি গবেষণা কেন্দ্রের অধিকর্তা হন। অভিযোগ, দেবাশিসবাবু অধিকর্তা থাকাকালীন ওই গবেষণা কেন্দ্রে নানা অনিয়ম অভিযোগ আকারে উঠে এসেছে। এক, ওই প্রাক্তন অধিকর্তা ওই কেন্দ্রে স্বজনপোষণ করে তিন জনকে বেআইনি ভাবে নিয়োগ করেছেন। দুই, ২০১১-১২ ও ২০১২-১৩ আর্থিক বর্ষে নানা কাল্পনিক কাজের ফিরিস্তি দিয়ে কেন্দ্রীয় কৃষি মন্ত্রকের বিভিন্ন প্রকল্প থেকে লক্ষাধিক টাকা আত্মসাত করেছেন। তিন, কোনও কাজ না হলেও মাসের পর মাস ‘ভুয়ো’ বিল জমা দিয়ে টাকা তুলেছেন। অভিযোগগুলির একটিও এখনও প্রমাণিত হয়নি। তবে তার যাঁচাই করতেই তদন্ত কমিটি গড়া হয়েছে। বিশ্বভারতীরই একাংশের আবার দাবি, ওই কেন্দ্রে লক্ষ লক্ষ টাকার আর্থিক দুর্নীতি ও বেনিয়মের ক্ষেত্রে দেবাশিসবাবুর সঙ্গেই ওই কেন্দ্রের কয়েক জন কর্মী ও আধিকারিকও যুক্ত। বিষয়টির দ্রুত তদন্ত করে দোষীদের কড়া শাস্তির দাবি তুলেছেন তাঁরা। দেবাশিসবাবু অবশ্য যাবতীয় অভিযোগ উড়িয়ে দিয়েছেন। তিনি বলেন, “আমি সব রকমের তদন্তের জন্য প্রস্তুত। নিরপেক্ষ তদন্ত হলে প্রকৃত বিষয়টি উঠে আসবে। দোষী প্রমাণিত হলে কর্তৃপক্ষের শাস্তি মেনে নেব।” তবে কৃষি মন্ত্রক বা বিশ্বভারতী কারও কাছ থেকেই তিনি এখনও পর্যন্ত কোনও চিঠি পাননি বলেই দাবি করেছেন।
এ দিকে, বিশ্বভারতীরই অপর একটি মহলের দাবি, দেবাশিসবাবু দায়িত্ব নেওয়ার আগে ওই কেন্দ্রে নানা ডামাডোল চলছিল। আধিকারিক ও কর্মীদের বেতন পর্যন্ত বন্ধ ছিল। এমনকী ওই কেন্দ্রের কাজে কেন্দ্রীয় কৃষি মন্ত্রকও অসন্তুষ্ট ছিল। কিন্তু দেবাশিসবাবু দায়িত্ব নেওয়ার পর নানা সমস্যা মিটিয়ে দু’ বছরের মধ্যেই বিশ্বভারতীর কৃষি অর্থনীতি গবেষণা কেন্দ্রকে দেশের অন্য কেন্দ্রীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রগুলির সমতুল্য করে তুলেছেন বলে ওই মহলের দাবি। তাঁরা মনে করেন, দেবাশিসবাবুর বিরুদ্ধে অভিযোগগুলি আদতে ভিত্তিহীন।
গোটা ঘটনা সম্পর্কে বিশ্বভারতী অধ্যাপকসভার সম্পাদক কিশোর ভট্টাচার্য বলেন, “বিশ্বভারতীর সঙ্গে জড়িত কোনও ব্যক্তি, তিনি যে পদেই থাকুন না কেন, দোষী প্রমাণিত হলে কঠোর সাজার আর্জি জানাব।” তাঁরই মতো নিরপেক্ষ তদন্ত করে অভিযোগের সত্যতা যাঁচাই করার দাবি তুলেছেন বিশ্বভারতীর কর্মীসভার সভাপতি দেবব্রত সরকার। অন্য দিকে, ওই কেন্দ্রের বর্তমান সাম্মানিক অধিকর্তা সৌম্য চক্রবর্তী অবশ্য এ নিয়ে মন্তব্যে যেতে রাজি হননি। শুধু বলেন, “যা বলার উপাচার্যই বলবেন। আলাদা করে আমার কিছু বলার নেই।” উপাচার্যের সঙ্গে অবশ্য যোগাযোগ করা যায়নি। |