বোমা নিষ্ক্রিয় করতে গিয়ে বিস্ফোরণ |
ফোন পেয়েই টিভি খুলে মৃত্যুর সংবাদ |
সংগ্রাম সিংহরায় • শিলিগুড়ি |
বৃহস্পতিবার সকাল ১০টা। মন্দিরা লোহারের মোবাইল বেজে উঠল। অন্য প্রান্ত থেকে স্বামী লালবাহাদুরের গলা শুনে কিছুটা আশ্বস্তই হন তিনি। ভোর চারটে নাগাদ আলিপুরদুয়ারে বোমা উদ্ধারের খবর পেয়ে স্বামী বাড়ি থেকে বার হয়ে যাওয়া ইস্তক দুশ্চিন্তা পেয়ে বসেছিল মন্দিরাদেবীকে। যাওয়ার সময়ে স্ত্রীকে বলে গিয়েছিলেন, “আমি বেরোচ্ছি। ফিরতে কত দেরি হবে জানি না।” অবশেষে দশটা নাগাদ মোবাইলে ফোন করে লালবাহাদুর স্ত্রীকে বলেন, “এখানে অনেক টিভি ক্যামেরা। আমি বোমা নিষ্ক্রিয় করছি। টিভি খুললে আমাকে দেখতে পাবে।”
রান্নাবান্না ফেলে উঠে গিয়ে টিভি চালাতেই মন্দিরাদেবীর মাথায় যেন আকাশ ভেঙে পড়ে। টিভিতে তখন ব্রেকিং নিউজ দেখাচ্ছে আলিপুরদুয়ারের খেলার মাঠে বোমা নিষ্ক্রিয় করতে গিয়ে সিআইডি বম্ব স্কোয়াড কর্মী লালবাহাদুর লোহারের মৃত্যুর খবর। চ্যানেল বদলে বদলেও একই খবর দেখেও তা বিশ্বাস করতে পারেননি মন্দিরাদেবী। ঘনঘন স্বামীর মোবাইলে ফোন করে তখন শুধুই ‘আউট অব রিচ’। এর পরেই পুলিশের তরফে সরকারি ভাবে মন্দিরাদেবীকে জানানো হল তাঁর স্বামীর মৃত্যুর খবর। |
|
লালবাহাদুর লোহারের শোকার্ত স্ত্রী মন্দিরাদেবী। ছবি: বিশ্বরূপ বসাক। |
মন্দিরাদেবী জানান, রাতে খবর পেয়ে তড়িঘড়ি শালবাড়ির নয়াবস্তির বাড়ি থেকে ভোর ৪টা নাগাদ বাইক নিয়ে বেরিয়ে যান লাল বাহাদুরবাবু। নিজে চা করেও নেন তিনি। যাওয়ার সময় ছোট মেয়ে নিস্মিতাকে আদর করেন। পিনটেল ভিলেজ দফতরে সিআইডির বম্ব স্কোয়াডের অন্যতম সদস্য লাল বাহাদুরবাবু ও আরও দুজন সদস্য মিলে সেখান থেকে দফতরের গাড়ি চড়ে আলিপুরদুয়ার যান। সেখানে পৌঁছে দু’বার ফোন করেন বাড়িতে। প্রথমবার পৌঁছনোর খবর দেন। পরে ১০ টা নাগাদ ফের ফোন করে টিভি খোলার কথা জানিয়েছিলেন। বছর ছয়েক আগে সিআইডির বোম্ব স্কোয়াডে টেকনিশিয়ান হিসেবে যোগ দেন লালবাহাদুরবাবু। এর আগে রাইফেলম্যান হিসেবে ছিলেন আই আর বিতে। পুলিশ মহলেও যথেষ্ট জনপ্রিয় ছিলেন লালবাহাদুরবাবু। লালবাহাদুরবাবু এবং মন্দিরাদেবীর দুই ছেলে-মেয়ে। ছেলে দার্জিলিঙ পেডংয়ে পড়াশোনা করে। পাহাড়ে বন্ধের কারণে আপাতত সেও বাড়িতে। ছোট মেয়ে বাড়ির কাছেই দাগাপুরের একটি ইংরেজি মাধ্যম স্কুলে পড়ে। লালবাহাদুরবাবু ছবি আঁকা ও এয়ার শ্যুটিংয়েও ছিলেন পারদর্শী। এ দিন তাঁর বাড়িতে গিয়ে দেখা যায়, ঘরময় ছড়িয়ে রয়েছে তেল রঙের আকা অজস্র ছবি। তাঁর বন্ধু প্রবীণ বসন্ত ছেত্রী বলেন, “কারও কোনও সমস্যায় সব সময় দৌঁড়ে যেতেন তিনি।” খবর শোনার পর থেকেই বাকরুদ্ধ হয়ে পড়েন মন্দিরাদেবী। তিনি শুধু বলেন, “কোনও সময়ে ডিউটি যেতে অবহেলা করেননি তিনি। এদিনও করেননি। কিন্তু ফিরল না।” এদিন লাল বাহাদুরবাবুর বাড়িতে গিয়ে তাঁর স্ত্রীর সঙ্গে দেখা করেন, শিলিগুড়ির ডেপুটি পুলিশ কমিশনার (সদর) ওজি পাল। |
|