কাঁসাইয়ের পাড় ভাঙায় সিঁদুরে মেঘ শহরে
তিপথ বদলাচ্ছে কংসাবতীর। ভাঙছে পাড়। স্বভাবতই উদ্বিগ্ন মেদিনীপুর শহর সংলগ্ন নদী তীরবর্তী এলাকার বাসিন্দারা। যে কোনও সময় বড় ভাঙন দেখা দিতে পারে। আর তা হলে বেশ কিছু বসতি এলাকা নদীগর্ভে চলে যাবে জলের তলায়। আশ্রয় হারাবেন বহু মানুষ।
সাম্প্রতিক অতিবৃষ্টি, সঙ্গে ব্যারাজের ছাড়া জলে কংসাবতী বিপদসীমার উপরে বইতে শুরু করে। নতুন করে ভাঙন দেখা দেয় পাড়ে। এই ভাঙনেই সিঁদুরে মেঘ দেখছেন নদী তীরবর্তী পালবাড়ির বাসিন্দারা। স্থানীয় নারায়ণ মণ্ডল, দেবানন্দ সিংহদের বক্তব্য, “নদীতে জল বাড়লেই আমরা আতঙ্কিত হয়ে পড়ি। এখন যা পরিস্থিতি, তাতে যে কোনও সময় বড় ভাঙন দেখা দিতে পারে। দফায় দফায় পাড় ভেঙে নদীটা ক্রমশ শহরের দিকে এগিয়ে আসছে। ফলে, নদীর জল বাড়লে কখন কী হয়, কেউই বলতে পারে না।” বাসিন্দারা সই সংগ্রহ শুরু করেছেন। আগামী দিনে সই সংবলিত স্মারকলিপি বিভিন্ন দফতরে জমা দেওয়া হবে।
বন্যা পরিস্থিতির মধ্যে পড়ার অভিজ্ঞতা রয়েছে পালবাড়ি ও সংলগ্ন এলাকার মানুষের। নদী বিপদসীমা পেরোলেই জলে ভাসে এই এলাকা। ত্রাণ শিবিরে দিন কাটাতে হয় স্থানীয়দের। যে ভাবে কংসাবতীর পাড় ভাঙছে, তাতে আর দু’-তিন বছর পর এলাকায় একটা অংশই জলের তলায় চলে যাবে বলে আশঙ্কা করছেন স্থানীয়রা। তখন জল নামলেও আর বাড়ি ফেরার পরিস্থিতি থাকবে না। স্থানীয়দের এমন আশঙ্কা উড়িয়ে দেওয়ার মতো নয় বলে মানছেন এলাকার বিদায়ী কাউন্সিলর সুনন্দা খান।
তাঁর কথায়, “পরিস্থিতি সত্যিই উদ্বেগজনক। ভাঙন রোধে দ্রুত পদক্ষেপ করা না গেলে আগামী দিনে বসতি এলাকাও জলের তলায় চলে যাবে।” তাঁর কথায়, “সাম্প্রতিক অতিবৃষ্টির পর জল বাড়ায় নদীর পাড়ে নতুন ভাঙন ধরেছে। অবৈধ ভাবে বালি তোলার ফলেই এই পরিস্থিতি। এ ভাবে বালি তোলা বন্ধ করতে প্রশাসনকে উদ্যোগী হতে হবে। নচেত পরিস্থিতি আরও খারাপ হবে।” এলাকার প্রাক্তন কাউন্সিলর সৌমেন খানের উদ্বেগ, “কয়েক বছর আগেও নদী শহর থেকে কত দূরে ছিল। এর মধ্যে প্রায় এক কিলোমিটার এগিয়ে এসেছে। এ ভাবে পাড় ভাঙতে থাকলে আগামী দিনে পরিস্থিতি খারাপ হবেই।” তাঁর কথায়, “যেখান-সেখান থেকে বালি তোলার ফলেই নদীর পাড় ভাঙছে। স্থানীয় মানুষ আশঙ্কার মধ্যে রয়েছেন। যন্ত্র দিয়ে বালি তোলায় বড় বড় গর্ত হচ্ছে। ফলে, মাঝেমধ্যে প্রাণহানিও হচ্ছে।”
এ ক্ষেত্রে কি প্রশাসনের কিছু করণীয় নেই? মহকুমাশাসক তথা মেদিনীপুর পুরসভার প্রশাসক অমিতাভ দত্ত অবশ্য বলেন, “পরিস্থিতি খতিয়ে দেখে পদক্ষেপ করা হবে।”
মেদিনীপুর শহরের পাশ দিয়েই বয়ে গিয়েছে কংসাবতী নদী। নদীর এক দিকে মেদিনীপুর। অন্য দিকে খড়গপুর। স্থানীয়দের বক্তব্য, কংসাবতীর আশপাশের বিস্তীর্ণ এলাকা জুড়ে যথেচ্ছ বালি তোলা চলে। অবৈধ ভাবে বালি তোলা হয়। এতে নদীর পাড় ক্রমশ দুর্বল হচ্ছে। এর ফলে সামান্য জলের তোড়ে তাতে ভাঙন ধরছে।
মেদিনীপুর সংলগ্ন কংসাবতী নদীর আশপাশেই রয়েছে পালবাড়ি, নজরগঞ্জ, আমতলাঘাট, গাঁধীঘাট, বিবেকানন্দপল্লি, জেলাপাড়া, পাথরঘাটা, শীতলা মন্দির কলোনি, শিয়ালডাঙা প্রভৃতি এলাকা। এই সব এলাকায় কয়েকশো পরিবারের বসবাস। মোহনপুরের কাছে অ্যানিকেত রয়েছে। এখানে জল ধরে রাখা হয়। যথেচ্ছ বালি তোলার ফলে এই অ্যানিকেতও ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। যত্রতত্র গর্ত রয়েছে। জল থাকলে এই সব গর্ত দেখা যায় না। ফলে, নদীর ধারে এসে অনেকেই বিপদের মুখে পড়েন। জেলা প্রশাসন অবশ্য জানিয়েছে, নদীর আশপাশ এলাকায় অবৈধ ভাবে বালি তোলা বন্ধ করতে তৎপরতার অভাব নেই। এ ক্ষেত্রে নজরদারি চলে। অবৈধ বালি বোঝাই লরি ধরা পড়লে উপযুক্ত পদক্ষেপও করা হয়। পালবাড়ির সনৎ দাস, শ্যামলী মাইতি, বিশ্বনাথ মাঝিরা বলছেন, “আমরা সত্যিই অসহায়। নদীর ভয়ঙ্কর রূপ দ্রুত বসতির দিকে এগিয়ে আসছে। কয়েক বছর আগেও নদী কত দূরে ছিল। পাড় ভাঙতে ভাঙতে এখন বসতি এলাকার দোরগোড়ায় চলে এসেছে। ভাঙন রোধে দ্রুত পদক্ষেপ করা জরুরি।” কংসাবতীর ভাঙন রোধে পদক্ষেপ করার দাবিতে ইতিমধ্যে সই সংগ্রহের কাজ শুরু হয়েছে। আগামী দিনে সই সংবলিত স্মারকলিপি বিভিন্ন দফতরে জমা দেওয়া হবে। স্থানীয় জোৎস্না নায়েক, মঙ্গল সিংহদের কথায়, “আমরা নিরুপায়। আশা করব, এই বিপদের দিনে প্রশাসন আমাদের পাশে থাকবে। ভাঙন রোধে পদক্ষেপ করবে।”


First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.