নেতাদের আশ্রয়ে ছিলাম, জেরায় কবুল তোতনের |
নিজস্ব সংবাদদাতা • চুঁচুড়া |
প্রায় এক বছর ধরে নানা এলাকায় চলেছে তল্লাশি। শেষ পর্যন্ত চুঁচুড়ার ‘ত্রাস’ তোতন বিশ্বাসকে ধরা গিয়েছে ঠিকই, কিন্তু ওই এলাকায় দুষ্কৃতীদের সঙ্গে বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতাকর্মীদের ওঠাবসার কথা পুলিশকে নতুন করে দুশ্চিন্তায় ফেলেছে।
পুলিশের একাংশের দাবি, তোতনকে জেরা করে তার সঙ্গে শাসক দলের এক বিধায়ক-সহ কয়েকটি রাজনৈতিক দলের নেতাদের ঘনিষ্ঠতার কথা জানা গিয়েছে। লক্ষ লক্ষ টাকার বিনিময়ে তাঁদের সাহায্য এবং আইনি সহায়তা নিয়েই এতদিন তোতন আত্মগোপন করেছিল বলে স্বীকার করেছে। তৃণমূলের জেলা সভাপতি তপন দাশগুপ্ত অবশ্য বলেন, “দুষ্কৃতীদের বিরুদ্ধে পুলিশ-প্রশাসন সতর্ক। বাম আমলে দাপিয়ে বেড়ানো একের পর এক দুষ্কৃতীকে পুলিশ জেলে ভরছে। দলীয় স্তরে কড়া নির্দেশ দেওয়া রয়েছে, সমাজবিরোধীদের ছোঁয়াচ বর্জন করতে। না হলে দলের পক্ষ থেকে কড়া ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”
২০১২ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে শঙ্কর বিশ্বাস নামে রবীন্দ্রনগরের এক জনকে খুনের ঘটনায় পুলিশ তোতনকে খুঁজছিল। গত এপ্রিল মাসে রবীন্দ্রনগরে ভরা বাজারের মধ্যে দু’দল দুষ্কৃতীর মধ্যে দফায়-দফায় সংঘর্ষ হয়। সেই লড়াইয়ের শিকার হন কমল পাল নামে এক রং-মিস্ত্রি। গুলিবিদ্ধ হয়ে তিনি ঘটনাস্থলেই মারা যান। তোতন এবং তার দাদা তারক ওই ঘটনায় অভিযুক্ত। ঘটনার পরেই তারা গা-ঢাকা দেয়।
তারক-তোতনকে ধরতে পোস্টার সাঁটে পুলিশ। তাদের খোঁজে পুরস্কারও ঘোষণা করা হয়। ওই এলাকায় দুষ্কৃতীদের বাগে আনতে আলাদা একটি বাহিনী তৈরি করা হয় জেলা পুলিশের তরফে। সম্প্রতি তারক ধরা পড়ে। তার পর তোতনই ছিল পুলিশের খাতায় ‘মোস্ট ওয়ান্টেড’। গত সোমবার দুর্গাপুরের কাঁকসা থেকে তোতনকে ধরা হয়। মঙ্গলবার চুঁচুড়া আদালত ধৃত তোতনকে ১০ দিন পুলিশ হেফাজতে রাখার নির্দেশ দেয়। হুগলির বিভিন্ন থানার পাশাপাশি অন্য জেলাতেও ছিনতাই, তোলাবাজিরও অভিযোগ রয়েছে তোতনের নামে। রবীন্দ্রনগরে তোতনের বাড়ি ও তার কয়েকটি গোপন ডেরায় তল্লাশি চালিয়ে একটি নাইন এমএম এবং একটি সেভেন এমএম পিস্তল, ছ’টি মাস্কেট, চারটি পাইপগান, তিনটি লং রেঞ্জ পাইপগান এবং ১৬ রাউন্ড গুলি উদ্ধার করা হয়েছে বলে পুলিশ সুপার সুনীল চৌধুরী জানিয়েছেন।
জেলা সদর চুঁচুড়ায় সমাজবিরোধীদের তাণ্ডব নতুন নয়। পুলিশের একাংশের অভিযোগ, রাজনৈতিক ‘কেষ্টবিষ্টু’দের ছত্রছায়ায় থাকাতেই সমাজবিরোধীদের বাড়বাড়ন্ত। স্থানীয় লোকজনের দাবি, বাম আমলে এক দোর্দণ্ডপ্রতাপ সাংসদের ঘনিষ্ঠ হিসেবে তোতনের উত্থান। ইদানীং তৃণমূল নেতাদের সঙ্গে তার ঘনিষ্ঠতা বাড়ে। এলাকায় সমাজবিরোধীদের সঙ্গে রাজনৈতিক নেতাদের সংস্রবের সেই ‘ট্র্যাডিশন’ সমানে চলছে। |