দরজায় আড়ি পেতে কিশোরীকে উদ্ধার করল পুলিশ |
নিজস্ব সংবাদদাতা • কলকাতা |
ঘরের বাইরে আড়ি পেতে দাঁড়িয়ে কয়েক জন লোক। আরও কয়েক জন ঘরে ঢোকার পথ আটকে দাঁড়িয়ে। ঘরের ভিতরে এক কিশোরীর গলার আওয়াজ। অল্প ফাঁক করা জানলা দিয়ে দেখা যাচ্ছে, দুই যুবকের সামনে দাঁড়িয়ে কাঁদছে সে। বলছে, “বাড়ি যাব। আমাকে ছেড়ে দাও।” যুবকেরা তাতে রাজি না হওয়ায় ঘরের এক কোণে গিয়ে বসে পড়ল ভয় পাওয়া মেয়েটি। আর তখনই হুড়মুড়িয়ে ঘরে ঢুকে পড়লেন আড়ি পেতে থাকা লোকজন। চিৎকার করে বললেন, “আমরা পুলিশ। ওকে ছেড়ে দাও।”
বুধবার রাতে বালির নিশ্চিন্দা থানার ছোট দুর্গাপুর এলাকার বাসিন্দাদের কাছে খবর পেয়ে এ ভাবেই পুলিশ গিয়ে উদ্ধার করে ওই কিশোরীকে। পনেরো বছরের ওই স্কুলছাত্রীকে ধর্ষণের চেষ্টা এবং অন্যত্র বিক্রি করে দেওয়ার চেষ্টার অভিযোগে বৈদ্যনাথ মণ্ডল ও সঞ্জয় চৌধুরী নামে দুই যুবককে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। পুলিশ জানায়, ধৃতেরা আদতে বিহারের বাসিন্দা। বৈদ্যনাথ হাওড়া মাছবাজারে লরি থেকে মালপত্র নামানোর কাজ করে। সঞ্জয় কাজ করে হাওড়ার একটি হোটেলে। |
পুলিশ সূত্রের খবর, নবম শ্রেণির ছাত্রী ওই কিশোরী নদিয়ার নাকাশিপাড়ার বাসিন্দা। মঙ্গলবার সকালে বাবা-মায়ের কাছে বকুনি খেয়েছিল। রাগ করে বাড়ি থেকে বেরিয়ে স্কুলে যাওয়ার সময়ে জমানো কিছু টাকাও সঙ্গে নেয় সে। স্কুল ছুটির পরে বাড়ি না ফিরে সোজা চলে যায় স্থানীয় মুরাগাছা স্টেশনে। সেখান থেকে ট্রেন ধরে শিয়ালদহে। সেখানে কিছুক্ষণ ঘোরাঘুরির পরে সে বাসে চেপে হাওড়া চলে যায়।
ওই ছাত্রীকে জিজ্ঞাসাবাদ করে পুলিশ জেনেছে, বাড়ি থেকে বেরিয়ে ওই ছাত্রী ভেবেছিল, কারও বাড়িতে কাজ করবে। কিন্তু রাতের হাওড়া স্টেশনে গিয়ে সে ভয় পেয়ে যায়। ভয়ে কাঁদতে শুরু করলে বৈদ্যনাথ ও সঞ্জয় তাকে দেখতে পায়। বেশ কিছুক্ষণ ধরে তাকে নজরে রাখার পরে ওই ছাত্রীর সঙ্গে ভাব জমায় ওই যুবকেরা। পুলিশ জানায়, ধৃতেরা ওই কিশোরীকে বাড়ি ফিরিয়ে দেওয়ার আশ্বাস দেয়। বুধবার সকালে মেয়েটিকে নিয়ে ট্রেনে চেপে বালিতে গিয়ে ছোট দুর্গাপুর এলাকায় এক হাজার টাকায় এক দিনের জন্য একটি ঘর ভাড়া নেয় তারা দু’জন।
ওই কিশোরীর অভিযোগ, ঘরে আটকে তার সঙ্গে অশালীন আচরণের চেষ্টা করে বৈদ্যনাথেরা। এমনকী, ধর্ষণেরও চেষ্টা করে। কিন্তু আপত্তি করায় প্রথমেই বেশি জোর খাটায়নি ওই যুবকেরা, পাছে সে পালিয়ে যায় বা লোকজন জেনে যায়। ততক্ষণে দু’জনের উদ্দেশ্য বুঝে যায় মেয়েটি। রাতে ওই যুবকেরা খাবার আনতে যাওয়ার সুযোগে বাইরে বেরিয়ে স্থানীয় বাসিন্দাদের পুরো ঘটনাটি জানায় সে। এলাকার বাসিন্দারাই তখন খবর দেন নিশ্চিন্দা থানায়।
তদন্তে পুলিশ জানতে পারে, সঞ্জয়ের এক আত্মীয় বেশ কিছু দিন আগে ওই ঘরটিতে ভাড়া থাকতেন। সেই সূত্রেই সে বৈদ্যনাথকে বালিতে নিয়ে এসেছিল। আবার বাড়ি ভাড়া নেওয়ার সময় বৈদ্যনাথ দাবি করে, সদ্য ওই কিশোরীর সঙ্গে বিয়ে হয়েছে তার। বৃহস্পতিবারই তারা বিহারে দেশের বাড়িতে চলে যাবে। এ দিনই ওই কিশোরীকে তার বাবার হাতে তুলে দেয় পুলিশ। থানায় দাঁড়িয়ে পেশায় খেতমজুর ওই কিশোরীর বাবা বলেন, “স্যারেরা না থাকলে মেয়েটাকে হয়তো আর পেতামই না।” অন্য দিকে, পুলিশকাকুদের উপহার দেওয়া জামাকাপড় হাতে খুশি খুশি মুখে ওই কিশোরী বলে, “কাকুরা খুব ভাল। আমি বাড়ি থেকে আর পালাব না।”
|