প্রযুক্তিকে ফাঁকি দিয়েই রক্ষা এত দিন
দুনিয়া জুড়ে যে প্রযুক্তি জাল ছড়িয়ে আছে, তার সঙ্গে স্রেফ লুকোচুরি খেলত ইয়াসিন ভাটকল। আর সে কারণেই দীর্ঘদিন ধরে গোয়েন্দাদের ফাঁকি দিতে পেরেছিল সে। কী ভাবে?
পুলিশ সূত্রই বলে, সন্ত্রাসবাদীদের উপরে নজর রাখার সব থেকে ভাল উপায় তাদের মোবাইল ফোনে আড়ি পাতা। তাই ইন্ডিয়ান মুজাহিদিনের পাণ্ডা ইয়াসিন ভাটকল মোবাইলই ব্যবহার করত না। লেনদেন করত না ই-মেলও। ভারত-নেপাল সীমান্তে বিহারের দ্বারভাঙা জেলায় নিজের হাতে গড়ে তুলেছিল আইএম-এর শাখা। নাম দ্বারভাঙা মডিউল। তার সদস্যদের পই পই করে বলে দিয়েছিল মোবাইল বা ই-মেলের ছায়ায় যেন কেউ না মাড়ায়। যোগাযোগ রাখতে সব থেকে ভাল প্রযুক্তি ইয়াহু, নিম্বাসের মতো বিভিন্ন চ্যাটরুম। তাতে ধরা পড়ার সম্ভাবনা অত্যন্ত কম। এই ভাবে শুধু নিজের মডিউলের অন্য সদস্যদের সঙ্গে নয়, অন্য জঙ্গিদের সঙ্গেও যোগাযোগ রাখত কর্নাটকের আঞ্জুমান হামি-ই-মুসলিমিনের ছাত্র।
এ বারে কিন্তু আর চোখে ধুলো দেওয়া সম্ভব হয়নি। অনেক দিন ধরে বিভিন্ন নাশকতামূলক কাজের তদন্তে তার সম্পর্কে যাবতীয় তথ্য সংগ্রহ করেছেন গোয়েন্দারা। তিনটি জায়গায় সিসিটিভি-তে তার ছবি ধরা পড়েছে। এর মধ্যে রয়েছে জার্মান বেকারি। ছ’মাস আগে থেকে তার পায়ের চিহ্ন ধরে শেষ পর্যন্ত তাকে ঘিরে ফেলতে সক্ষম হন গোয়েন্দারা।
আসাদুল্লা আখতার
হাড্ডি নামেও পরিচিত এই আইএম জঙ্গি
উত্তরপ্রদেশের আজমগড়ের বাসিন্দা
নির্দিষ্ট জায়গায় বোমা বসাতে পারদর্শী
গ্রেফতার হওয়ার সময় ইয়াসিনের সঙ্গেই ছিল
বারাণসী, জয়পুর, আমদাবাদ বিস্ফোরণে জড়িত
এর নামও ‘মোস্ট ওয়ান্টেড’ তালিকায় ছিল
মাথার দাম ১০ লক্ষ টাকা
গোয়েন্দাদের একটি সূত্র বলছে, যদিও শেষ মুহূর্তে ইয়াসিন অনেক চেষ্টা করেছিল চোখে ধুলো দেওয়ার। এক বার নিজেকে ইঞ্জিনিয়ার বলে পরিচয় দেয় সে। পরে আবার বলে ইউনানি চিকিৎসক। বস্তুত, সীমান্ত এলাকায় ইয়াসিন একটি ক্লিনিক খুলে চিকিৎসকের পরিচয় দিয়েই বসবাস করছিল। কিন্তু ছবির সঙ্গে তার মিল দেখে গোয়েন্দারা আর ভুল করেননি। যে ভুল করেছিল কলকাতা পুলিশ। লাগাতার জেরার মুখে শেষে ইয়াসিন নিজেই পরিচয় স্বীকার করে।
অত্যন্ত গোপন এই অভিযান ঘিরে কার্যত মুখে কুলুপ এঁটেছেন স্বরাষ্ট্র মন্ত্রকের কর্তারা। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী সুশীলকুমার শিন্দে জানান, মূল অভিযান চালিয়েছে কেন্দ্রীয় গোয়েন্দা সংস্থাই। কিন্তু তার সঙ্গে গুপ্তচর সংস্থা র’-এরও সাহায্য নেওয়া হয়েছে বলে মনে করা হচ্ছে। গোয়েন্দাদের একটি সূত্রের খবর, মার্কিন গোয়েন্দা সংস্থা এফবিআই-এর কাছ থেকেও ইয়াসিনের বিষয়ে তথ্য মিলেছিল। জানা গিয়েছিল, নেপাল থেকে বাংলাদেশে যাওয়ার পরিকল্পনা রয়েছে ইয়াসিনের। সরকারের একটি মহল মনে করছে, যে ভাবে প্রথমে টুন্ডা, তার পরে ইয়াসিনকে নেপাল-সীমান্ত থেকে গ্রেফতার করা হয়েছে, তাতে নেপাল সরকারের সাহায্য থাকা অস্বাভাবিক নয়। সেই সূত্রটি মনে করছে, আসলে ইয়াসিনকে নেপালেই গ্রেফতার করে এ দেশে নিয়ে আসা হয়। ভারত-নেপালের মধ্যে বন্দি বিনিময় চুক্তি নেই। তাই নেপালে আটক করা হলেও তাকে সীমান্তের এ পারে এনেই গ্রেফতার করতে হতো। ঠিক যে ভাবে বাংলাদেশে গা ঢাকা দেওয়া উত্তর-পূর্বের জঙ্গিদের ও দেশে আটক করা হলেও সীমান্তের এ পারে এনে গ্রেফতার করা হয়। অন্য একটি সূত্রে অবশ্য দাবি, সৌদি আরবে ধরা হয় ইয়াসিনকে। সেখান থেকে বিমানে কাঠমান্ডু, তার পরে সড়ক পথে ভারতে নিয়ে আসা হয়।
স্বরাষ্ট্র মন্ত্রকের শীর্ষ সূত্রের খবর, গত সাত বছর ধরে ইন্ডিয়ান মুজাহিদিনের পান্ডাদের সন্ধান চালালেও ইয়াসিন ভাটকলের পরিচয় সম্পর্কে প্রথম তথ্য মেলে দু’বছর আগে ২০১১ সালে। গত বছর বিহার থেকে তার দুই সঙ্গীকে গ্রেফতার করা হয়। তাদের জেরা করেও ইয়াসিনের সম্পর্কে খোঁজখবর মেলে। এ বছরের ফেব্রুয়ারিতে হায়দরাবাদের দিলসুখনগরে বিস্ফোরণের পর ইয়াসিনের গতিবিধি সম্পর্কে নিশ্চিত তথ্য পেতে থাকেন গোয়েন্দারা। ছয় মাস ধরে তার উপর নজরদারির পরে জানা যায়, নিয়মিত ভাবে নেপাল সীমান্ত দিয়ে ভারতে যাতায়াত করছে সে। ইউনানি চিকিৎসক সেজে বিহার-নেপাল সীমান্তে থাকত সে। কিন্তু বুদ্ধগয়া মন্দিরে বিস্ফোরণের পরেই তাকে কোণঠাসা করে ফেলা হয়।
স্বরাষ্ট্র মন্ত্রক সূত্রের খবর, গোয়েন্দারা গত ছয় মাস ধরেই ভারত-নেপাল সীমান্তে ফাঁদ পেতে বসেছিলেন। ইয়াসিন যে কখনও ইমরান, কখনও শাহরুখের মতো ছদ্মনাম ব্যবহার করে, তা-ও জানা ছিল। ভাটকলের সঙ্গে গ্রেফতার করা হয় আসাদুল্লা আখতার ওরফে হাড্ডিকে। যে মুম্বইয়ের জাভেরি বাজারে বিস্ফোরণে জড়িত বলে পুলিশের দাবি। দু’জনের নামেই ১০ লক্ষ টাকা করে এনআইএ-র তরফে পুরস্কার ঘোষণা করা হয়েছিল।
ইয়াসিনকে গ্রেফতার করতে পূর্ব চম্পারনের সিনিয়র পুলিশ সুপার বিনয় কুমারের নেতৃত্বে বিহার পুলিশের একটি দল গঠন হয়। বিহারের এডিজি (সদর) রবীন্দ্র কুমার বলেন, “গত বছরের একটি বিস্ফোরণের মামলায় এনআইএ এই দু’জনকে খুঁজছিল। তাদের নামে জামিন অযোগ্য গ্রেফতারি পরোয়ানাও রয়েছে।” মোট ১২টি রাজ্যে ইয়াসিন ভাটকলের নামে বিভিন্ন নাশকতার ঘটনায় মামলা রয়েছে।

ভয় কাটল পরিবারের
ভয়টা সব সময় কুরে কুরে খেতো। অবশেষে ঘরের ছেলে ধরা পড়ায় শান্তি পেয়েছেন ইন্ডিয়ান মুজাহিদিন জঙ্গি ইয়াসিন ভাটকলের পরিবার। কারণ তাদের আশঙ্কা ছিল পুলিশ কোনও দিন ভুয়ো সংঘর্ষে না মেরে ফেলে ছেলেটাকে। বৃহস্পতিবার সংবাদমাধ্যমে একটি বিবৃতি জারি করে এই আশঙ্কার কথা জানিয়েছে ভাটকলের পরিবার। ভাটকলের বাবা জানিয়েছেন, তাঁর বিচারব্যবস্থার উপর পূর্ণ আস্থা আছে। তিনি বলেন,“ভাটকল দোষী সাব্যস্ত হলে শাস্তি হওয়া উচিত। কিন্তু দোষ প্রমাণ না হওয়া পর্যন্ত সবাই নিরাপরাধ, এটাও মনে রাখা দরকার।


First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.