তারকাখচিত মুম্বই সম্মেলনের ঔজ্জ্বল্য দীর্ঘমেয়াদি করতে পারে রাজ্যের নয়া শিল্পনীতি। ঊর্ধ্বসীমা আইনের ঝক্কি এড়িয়ে শহরের মধ্যে জমি পাওয়ার সুযোগ, প্রকল্পের প্রতি স্তরে সময় বেঁধে প্রশাসনিক অনুমোদন কিংবা হাওড়ার মতো চিরাচরিত কিন্তু এখন নুইয়ে পড়া শিল্পাঞ্চলে লগ্নির জন্য বিশেষ সুবিধা ঘোষণা রাজ্যের শিল্পায়নে নতুন দিশা দেখাবে বলেই মনে করছে পশ্চিমবঙ্গের শিল্পমহল।
দীর্ঘ প্রতীক্ষার পর বৃহস্পতিবারই শিল্প ও বিনিয়োগ নীতি ঘোষণা করেছে রাজ্য। শিল্পমহল মনে করছে, মুম্বই সম্মেলনের ‘সাফল্যের রেশ’ থাকতে থাকতেই নয়া শিল্পনীতি ঘোষণার এই সময় নির্বাচন যথেষ্ট তাৎপর্যপূর্ণ। শিল্পপতি তথা ইন্ডিয়ান চেম্বারের কর্তা সঞ্জয় বুধিয়া বলেন, “মুম্বই সম্মেলনের পর এটাই উপযুক্ত সময়। রাজ্য সম্পর্কে শিল্পমহলে যে আগ্রহ তৈরি হয়েছে, তার সদ্ব্যবহার করতে সাহায্য করবে এই নীতি। বিভিন্ন আর্থিক সুযোগ-সুবিধার পাশাপাশি নির্দিষ্ট সময়ে কাজ শেষ করতে প্রশাসনিক সহায়তা লগ্নিকারীদের উৎসাহ দেবে।”
নতুন শিল্পনীতিকে স্বাগত জানিয়েছে সিআইআই-ও। বণিকসভাটির পূর্বাঞ্চলীয় কর্তা সৌগত মুখোপাধ্যায়ের মতে, এই নীতিতে ছোট ও মাঝারি শিল্পের উন্নয়ন এবং পরিকাঠামো ও শিল্পগুচ্ছ তৈরিতে জোর দিয়েছে রাজ্য। আগ্রহ দেখিয়েছে সরকারি-বেসরকারি যৌথ উদ্যোগে। এর ফলে রাজ্যে নতুন দিশা পাবে শিল্প। এ ছাড়া ব্যবসা শুরুর জন্য
৯৯ পাতার কাগজপত্রের কাজ সাত পাতায় নামিয়ে আনারও প্রশংসা করেছেন তিনি।
অনেকেরই মত, শিল্পায়নের ক্ষেত্রে অন্যতম সমস্যা জমি ঘিরে বিতর্ক। শিল্পের জন্য জমি নিতে সরকার সাহায্য না-করলে, লগ্নি আসা মুশকিল বলে দাবি তাঁদের। নয়া শিল্পনীতিতেও যে রাজ্য জমি অধিগ্রহণ প্রসঙ্গে নিজেদের অবস্থান বদলেছে, এমনটা নয়। কিন্তু সেখানে অন্তত কিছু ক্ষেত্রে সরকার নমনীয় মনোভাব দেখিয়েছে বলেই শিল্পমহলের অভিমত।
যেমন, এই মুহূর্তে কলকাতার বাইরে থাকা বেঙ্গল চেম্বারের প্রেসিডেন্ট কল্লোল দত্তের ধারণা, শহরে সরকারি জমিতে শিল্প গড়ার ক্ষেত্রে উর্ধ্বসীমা আইনের ঝামেলা পোহাতে না-হলে, লগ্নিকারীরা উৎসাহিত হবেন। তিনি বলেন, “এখনও নয়া নীতি দেখিনি। তবে যা শুনেছি, তাতে মনে হয় লগ্নিকারীদের উৎসাহিত করার চেষ্টা করেছে রাজ্য। সরকারি জমিতে শিল্প গড়ার ক্ষেত্রে ঊর্ধ্বসীমা আইন থেকে রেহাই মিললে ভাল হয়।” পেটেন্টের খরচেও ভর্তুকি দেওয়ার কথা বলেছে সরকার। কল্লোলবাবুর মতে, এতে উদ্ভাবনী ভাবনা উৎসাহিত হবে। হাওড়ায় লগ্নির জন্য বাড়তি আর্থিক সুবিধা দেওয়ার ভাবনাকেও স্বাগত জানিয়েছেন তিনি।
হাওড়ায় লগ্নির জন্য বাড়তি সুবিধাকে সমর্থন করছেন ভারত চেম্বারের প্রেসিডেন্ট অশোক আইকত-ও। অশোকবাবু বলেন, “কলকাতা থেকে দূরের জেলায় শিল্পের জন্য (বিশেষত ইঞ্জিনিয়ারিং শিল্প) জমি মিললেও, পরিকাঠামো-সহ বিভিন্ন সমস্যার কারণে সেখানে যেতে চান না লগ্নিকারীরা। কলকাতায় বসে সেই কারখানা চালানোও সমস্যা। কিন্তু হাওড়ায় জমি পাওয়া কলকাতার তুলনায় সহজ। আবার কলকাতায় থেকে সেখানে কারখানা চালানোও সুবিধা। কিন্তু এতদিন এই জেলায় বিনিয়োগ করলে বাড়তি আর্থিক সুবিধা মিলত না। নয়া নীতিতে হাওড়া বি-তালিকাভুক্ত হলে সেই সুবিধা মিলবে। ফলে সেখানে শিল্পের দ্রুত বিকাশ হওয়ার সম্ভাবনা।”
এমসিসি চেম্বার অফ কমার্সের প্রেসিডেন্ট দীপক জালানের দাবি, সার্বিক ভাবে রাজ্যের শিল্পায়নে গতি আনবে এই নয়া নীতি। শিল্প গড়ার ক্ষেত্রে হাওড়া, পুরুলিয়া, কোচবিহারের মতো জেলায় বাড়তি সুবিধা দেওয়ার প্রতিশ্রুতি লগ্নি টানবে বলেই তাঁর বিশ্বাস। |