জমির সীমায় খানিক ছাড়, উৎসাহ
ভাতাও বাড়ল মমতার শিল্পনীতিতে
থা ছিল ঘোষণা হবে হলদিয়ায় ‘বেঙ্গল লিডস’-এর আসরে। কার্যক্ষেত্রে সেই শিল্প সম্মেলনের সাত মাস পরে বৃহস্পতিবার রাজ্যের নয়া শিল্পনীতি অনুমোদন করল মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের মন্ত্রিসভা। সেই নীতিতে জমি অধিগ্রহণ-সহ বিভিন্ন বিষয়ে তৃণমূলের ঘোষিত অবস্থান থেকে সরে আসার কথা বলা না-হলেও কিছু কিছু ছাড়ের দিকে তাকিয়ে আশান্বিত হচ্ছে শিল্পমহল।
শুধু নীতির প্রশ্নে ছাড়ই নয়, শিল্প টানতে উৎসাহ ভাতার পরিমাণও বাড়িয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী। এখন তুলনায় কম লগ্নি করেই উৎসাহ ভাতা দাবি করা যাবে। তিন বছরের মধ্যে সেই ভাতা দিতে না পারলে নজিরবিহীন ভাবে বাজার দরে সুদ দেওয়ার অঙ্গীকার করা হয়েছে শিল্পনীতিতে।
পঞ্চায়েত ভোটে বিপুল সাফল্যের পরে মুম্বইয়ে দেশের প্রথম সারির শিল্পপতিদের মুখোমুখি হয়েছিলেন মমতা। আমন্ত্রণ জানিয়েছিলেন পশ্চিমবঙ্গে বিনিয়োগ করার জন্য। শিল্পমহলের একাংশের মতে, রাজ্যের উন্নয়নের জন্য শিল্প যে একান্ত প্রয়োজন, সে কথা ক্রমশ উপলব্ধি করতে শুরু করেছেন মমতা। রাজনৈতিক বাধ্যবাধকতার কারণে জনমোহিনী অবস্থান থেকে পুরোপুরি সরে আসছেন না ঠিকই, কিন্তু তাঁর দৃষ্টিভঙ্গিতে ইতিবাচক পরিবর্তনের একটা ইঙ্গিত মিলতে শুরু করেছে। লগ্নিকারীদের চাহিদা বুঝে খানিকটা নমনীয়ও হচ্ছেন তিনি। যার প্রতিফলন ঘটেছে এ দিন বৃহৎ, ক্ষুদ্র ও বস্ত্র শিল্পের জন্য ঘোষিত তিনটি পৃথক নীতিতে।
সাংবাদিকদের মুখোমুখি মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। সঙ্গে রয়েছেন পার্থ চট্টোপাধ্যায়, অমিত মিত্র
এবং মুখ্যসচিব সঞ্জয় মিত্র। বৃহস্পতিবার মহাকরণে। দেবাশিস রায়ের তোলা ছবি।
শিল্প সম্পর্কে তৃণমূলের নীতি নিয়ে শিল্পপতিদের আপত্তি বিবিধ। প্রথম আপত্তি জমি অধিগ্রহণ প্রশ্নে। বেসরকারি শিল্পের জন্য তাঁর সরকার এক ছটাক জমিও অধিগ্রহণ করবে না বলে জানিয়ে দিয়েছেন মমতা। বিশেষ আর্থিক অঞ্চলের তকমা না-দেওয়ার ব্যাপারে তাঁর অনড় অবস্থান ঘিরেও অসন্তোষ রয়েছে শিল্পমহলে। তৃণমূল সূত্রে বলা হচ্ছে, লগ্নিকারীদের এই উদ্বেগ সম্পর্কে মুখ্যমন্ত্রী অবহিত। কিন্তু রাজনৈতিক কারণে এই দুই ক্ষেত্রে এখনই তাঁর পক্ষে কিছু করা সম্ভব নয়। তবে জমির সমস্যার বিষয়টি যে তাঁর মাথায় রয়েছে, তার ইঙ্গিত শিল্পমহলের আর এক দুশ্চিন্তা শহরাঞ্চলে জমি ঊর্ধ্বসীমা আইনের ব্যাপারে শিল্পনীতিতে খানিকটা নরম অবস্থান নেওয়া।
বহু দিন ধরেই লোকসানে চলা একাধিক রাষ্ট্রীয় পরিবহণ সংস্থায় সংস্কার চাইছিল সরকার। সে জন্য ওই সব সংস্থার বাড়তি জমি বাণিজ্যিক কাজে ব্যবহারের পক্ষে রায় দিয়েছিল পরিবহণ সংক্রান্ত মন্ত্রিগোষ্ঠী। এ দিনের মন্ত্রিসভার বৈঠকে সেই সিদ্ধান্ত অনুমোদিত হয়েছে। বলা হয়েছে, কলকাতা শহরের ১ থেকে ১০০ নম্বর ওয়ার্ডের মধ্যে থাকা পরিবহণ সংস্থার জমি যে বেসরকারি সংস্থা কিনবে, তারা ঊর্ধ্বসীমা আইনের (সাড়ে সাত কাঠার বেশি জমি রাখার ক্ষেত্রে বিধিনিষেধ) আওতায় আসবে না। মহাকরণ সূত্রে বলা হচ্ছে, প্রাথমিক ভাবে ট্রাম কোম্পানির জমি লিজ দেওয়ার ক্ষেত্রে নিলামের পথে হাঁটবে সরকার।
আপাতত শুধু কলকাতা শহরে সরকারি পরিবহণ সংস্থার জমির ক্ষেত্রেই ঊর্ধ্বসীমা আইনে ছাড় দেওয়ার কথা বলা হলেও পরবর্তী কালে প্রতিটি প্রস্তাব আলাদা করে খতিয়ে দেখে ছাড় দেওয়া হতে পারে বলে জানাচ্ছেন প্রশাসনের পদস্থ কর্তারা। ঠিক যে ভাবে গ্রামাঞ্চলে ২৪ একরের বেশি জমি রাখার ক্ষেত্রে ভূমি অধিগ্রহণ আইনের ১৪ ওয়াই ধারা মোতাবেক ছাড় দেওয়ার কথা বলেছে তৃণমূল সরকার। সেই সুবিধা পেয়ে লগ্নিও করেছে কয়েকটি শিল্প সংস্থা। মুখ্যমন্ত্রী বলেন, “অতিরিক্ত জমি রাখার আবেদন দেখে ১০ হাজার একর জমির ঊর্ধ্বসীমায় ছাড় দিয়েছি। আরও কয়েকশো একর তথ্যপ্রযুক্তি পার্ক, শিল্প পার্কের জন্য রাখা আছে।” তবে প্রকল্প দেখে অনুমোদনের ক্ষেত্রে রাজনৈতিক হস্তক্ষেপ ও দুর্নীতির আশঙ্কা থাকছেই শিল্পমহলের।
লগ্নিকারীদের আস্থা অর্জনে কিছু আর্থিক সুবিধার কথাও ঘোষণা করা হয়েছে শিল্পনীতিতে। উৎসাহ ভাতা খাতে বকেয়ার পরিমাণ এখন প্রায় ৮০০ কোটি টাকা। বেশ কিছু শিল্পসংস্থা ২০ বছরের উপর ওই ভাতা পায়নি। শিল্প দফতরের এক কর্তা জানান, নতুন নীতিতে উৎসাহ ভাতা চেয়ে কোনও সংস্থা আবেদন করলে সরকার তিন বছরের মধ্যে মেটানোর চেষ্টা করবে। না হলে ওই সংস্থাকে প্রাপ্য উৎসাহ ভাতার উপরে ৮% সুদ দেবে সরকার। এমন ব্যবস্থা অন্য কোনও রাজ্যে নেই। এ বার থেকে ১০ কোটি টাকার উপরে বিনিয়োগ হলেই ‘ইন্ডাস্ট্রিয়াল প্রোমোশনাল অ্যাসিস্ট্যান্স’ (আইপিএ) দেওয়া হবে। আগে মূল বিনিয়োগ ৫০ কোটি টাকার উপরে হলে তবেই এই সুবিধা মিলত।
শিল্পনীতিতে এ বার স্ট্যাম্প ডিউটি, রেজিস্ট্রেশন এবং পণ্য প্রবেশ করে ছাড়ের ব্যবস্থা রাখা হয়েছে। আগে বিনিয়োগের পরিমাণ, কর্মসংস্থানের সংখ্যা, পিছিয়ে পড়া এলাকায় শিল্প স্থাপনের নিরিখে, ভ্যাট এবং বিদ্যুৎ শুল্কে ছাড় দেওয়া হতো। সেই সব ছাড়ও থাকছে। শিল্পমন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায় বলেন, “সময়ে প্রকল্প শেষ করা এবং উৎপাদন ক্ষমতাকেও ছাড় পাওয়ার ক্ষেত্রে অন্যতম শর্ত হিসেবে রাখা হয়েছে।” এ প্রসঙ্গে মুখ্যমন্ত্রী বলেন, “আগে দেখা যেত, অনেক ক্ষেত্রে কাগজে-কলমে শিল্প গড়া হচ্ছে সরকারের ঘর থেকে উৎসাহ ভাতা পেতে। এতে সরকারের টাকাই খরচ হয়, কোনও কাজ হয় না। আজ আমরা সিদ্ধান্ত নিয়েছি, উৎপাদনের উপর নির্ভর করে উৎসাহ ভাতা দেওয়া হবে। উৎপাদন বাড়লে কর্মসংস্থান বাড়বে, শিল্পের লাভ হবে। বহু বিষয়ে ছাড় দিতে পারব।”
মুখ্যমন্ত্রী জানান, পশ্চিম মেদিনীপুরের গোয়ালতোড়, বর্ধমানের পানাগড় ও পুরুলিয়ার রঘুনাথপুরে শিল্প উপনগরী তৈরি হবে। দক্ষিণ দিনাজপুর, কোচবিহার ও পুরুলিয়ায় কেউ শিল্প গড়তে উৎসাহ দেখায় না। তাই ওই সব জেলায় শিল্প গড়লে বিশেষ ছাড় দেওয়া হবে। বিনিয়োগে উৎসাহ দিতে হাওড়াকে জেলার শ্রেণিবিন্যাসে ‘বি জোন’-এ নিয়ে আসা হয়েছে। এর ফলে ওই জেলায় শিল্প দফতরের হাতে থাকা জমিতে শিল্প গড়লে বাড়তি সুবিধা মিলবে।
কিন্তু জমি সংক্রান্ত জটিলতা পুরোপুরি না-কাটলে বড় শিল্প কি পশ্চিমবঙ্গ সম্পর্কে উৎসাহী হবে? মুখ্যমন্ত্রী বড় শিল্পের থেকেও ছোট-মাঝারি শিল্পে জোর দেওয়ার পক্ষপাতী। সে জন্য এ দিন বস্ত্র এবং ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্পের জন্য আলাদা নীতিও ঘোষণা করা হয়েছে। মুখ্যমন্ত্রী বলেন, “ক্ষুদ্র শিল্পেও আমাদের প্রথম হতে হবে। সরকার এক কোটি কর্মসংস্থানের লক্ষ্যমাত্রা ধার্য করেছে।” ভারী শিল্পেও পাঁচ বছরে ৬৬ লক্ষ কর্মসংস্থান হবে বলে জানান তিনি। শিল্পমহল প্রাথমিক ভাবে নয়া শিল্পনীতিকে স্বাগত জানালেও আশার আলো দেখছে না বিরোধীরা। সূর্যকান্ত মিশ্র বলেন, “সাম্প্রতিক কালে দেশে যা হচ্ছে, এই নীতিতে তাকে হিসেবে আনা হয়নি। বলা হচ্ছে ১০ বছরে এত লক্ষ চাকরি হবে। কিন্তু ১০ দিনে দেশে কী হবে আমরা জানি না!”

পুরনো খবর:



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.