এক শীতের বিকেলে ব্যাডমিন্টন খেলে স্কুল থেকে ফেরার পথে নিখোঁজ হয়েছিল ১৩ বছরের মেয়ে মেগুমি ওকোতা। ১৯৭৭ সালের ওই ঘটনার পর থেকে দুশ্চিন্তা আর খোঁজই নিত্যসঙ্গী তার বাবা-মায়ের। পুলিশি তদন্ত আর একাধিক পরস্পরবিরোধী রিপোর্টে কোনও সদুত্তর মেলেনি। শেষ পর্যন্ত রাষ্ট্রপুঞ্জের তদন্ত শুরু হওয়ায় কিছুটা আশা দেখছেন মেগুমির বাবা-মা।
 |
মেগুমি ওকোতা |
ঘটনার পর পুলিশি তদন্তের প্রথম রিপোর্ট প্রকাশ হতেই গড়িয়ে যায় কুড়িটা বছর। তাতে জানা যায়, উত্তর কোরিয়ার চর হিসেবে কাজ করানোর জন্য অপহরণ করা হয়েছিল মেগুমিকে।
১৯৯৭ সালে সেই রিপোর্ট মেলার আগে পর্যন্ত প্রতিটি ফোনের শব্দে চমকে উঠতেন সাকি। পুলিশের তরফে বারবারই ডাক এসেছে অজ্ঞাতপরিচয় মৃতদেহ শনাক্তকরণের। সাকি বললেন, “খুন হয়ে যাওয়া দেহ হোক, বা মাছ ধরার জালে ধরা পড়া কঙ্কাল, জাপানের যে কোনও প্রান্তে মৃতদেহ মেলার খবর পেলেই ছুটে গিয়েছি।” খোঁজ মেলেনি। এটুকুও জানতে পারেননি, মেয়েটা বেঁচে আছে নাকি নেই।
তদন্ত চলতে থাকে নিজের গতিতে। ২০০২ সালে জাপানের তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী জুনিচিরো কইজুমি কোরিয়া সফরে গেলে উত্তর কোরিয়ার তৎকালীন শাসক কিম-জং-ইল স্বীকারও করে নেন, ১৯৭০ থেকে ১৯৮০ সালের মধ্যে ১৩ জন জাপানি নাগরিককে অপহরণ করা হয়েছিল। তাঁদের মধ্যেই ছিল মেগুমি। বলা হয়, অপহৃতদের মধ্যে মেগুমি-সহ আট জনের মৃত্যু হয়েছে। এমনকী, মেগুমির বিয়ে হয়েছিল, তার একটি সন্তানও রয়েছে। পিয়ংইয়ংয়ের কাছে বিস্তৃত তথ্য জানতে চেয়ে আবেদন করে জাপান প্রশাসন।
পরে মেগুমির পরিবারকে কিছু হাড় পাঠানো হয় পিয়ংইয়ংয়ের তরফে, সঙ্গে মেগুমির ছবি। সাকি জানিয়েছেন, “সেই প্রথম তরুণী মেগুমিকে ছবিতে দেখলাম। নিজেদের ক্ষমা করতে পারিনি, মেয়ের জন্য কিছু না করতে পারার জন্য।” কিন্তু পরে ডিএনএ টেস্ট করিয়ে জানা যায়, হাড়গুলি পুরুষ মানুষের। মেগুমির নয়।
ফের বুক বাঁধার পালা। তা হলে কি জীবিত আছে মেগুমি?
অবশেষে রাষ্ট্রপুঞ্জের দ্বারস্থ হয়েছে মেগুমির পরিবার। পিয়ংইয়ংয়ের মানবাধিকার সংক্রান্ত নথিপত্র এই প্রথম খতিয়ে দেখছে রাষ্ট্রপুঞ্জের তদন্তকারী দল। সেই দলের প্রধান মাইকেল কার্বি সংবাদমাধ্যমকে বলেছেন, “মেগুমি এবং তার মতো আরও অপহৃতের পরিবারগুলির কাছে সত্যিটা পৌঁছে দিতে আমরা দায়বদ্ধ।”
সত্যিটা হয়তো জানা যাবে এক দিন। কিন্তু তাতে কি প্রতীক্ষার অবসান হবে? উত্তর মিলবে সব প্রশ্নের? সাকি বললেন, “মাত্র ১৩ বছরের মেয়ে ছিল ও। ওকে কি ভুল করে অপহরণ করা হয়েছিল? না কি অন্য কুমতলব ছিল?” অনেক প্রশ্ন। অপেক্ষায় রয়েছেন মা। যদি উত্তর আসে। যদি মেয়েটাই ফিরে আসে! |