ভাঁড়ারে টান, তবু টেন্ডার ছাড়া বিজ্ঞাপনের অনুমতি
টানাটানির সংসারে রাজ্য সরকারকে সাশ্রয়ের রাস্তা দেখিয়েছে ই-টেন্ডার। কোষাগারে হাঁড়ির হাল দুর্গাপুর পুরসভারও। কিন্তু নানা বাসস্ট্যান্ডে বিজ্ঞাপনের বোর্ড টাঙাতে ই-টেন্ডার তো বহু দূর, কোনও টেন্ডার না ডেকেই অনুমতি দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে তাদের বিরুদ্ধে। শহরের নানা বাসস্ট্যান্ডে নির্দিষ্ট দু’টি সংস্থাকে বিজ্ঞাপন দেওয়ার অনুমতি দেওয়া হয়েছে। এই রকম স্বজনপোষণের ফলে পুরসভাই কয়েক লক্ষ টাকা রাজস্ব হারাচ্ছে বলে দাবি করেছেন বিজ্ঞাপন দিতে ইচ্ছুক অন্য নানা সংস্থার কর্তারা।
২০১২ সালে বামফ্রন্টের থেকে পুরবোর্ড দখল করে তৃণমূল। দায়িত্বে এসে তারা অভিযোগ করে, বিগত পুরবোর্ড কয়েক কোটি টাকা দেনা রেখে গিয়েছে। তাই নানা উন্নয়নমূলক কাজকর্মে চাহিদা মতো অর্থ বরাদ্দ করা যাচ্ছে না। পুরসভার আয়ের একটা অংশ আসে বাসস্ট্যান্ডের জায়গা বিজ্ঞাপনের জন্য ভাড়া দিয়ে। বিগত বামবোর্ডের বিরুদ্ধে অভিযোগ ছিল, টেন্ডার ছাড়াই পছন্দের বিজ্ঞাপন সংস্থাকে খেয়ালখুশি মতো অনুমতি দিয়ে দিত তারা। সম্প্রতি অভিযোগ উঠেছে, তৃণমূলের নেতৃত্বাধীন নতুন বোর্ডও সেই পথেই হাঁটছে।
বিতর্কের সূত্রপাত সম্প্রতি একটি বিজ্ঞাপন সংস্থাকে পুরসভার পাঠানো একটি চিঠিকে ঘিরে। সেই সংস্থা ২৪ এপ্রিল পুরসভার কাছে শহরের প্রধান ২০টি বাসস্ট্যান্ডে ১০ বছরের জন্য বিজ্ঞাপন দেওয়ার অনুমতি চেয়ে আবেদন করে। পুরসভার শর্ত হল, যারা বিজ্ঞাপনের কাজে বাসস্ট্যান্ড ব্যবহার করবে, তাদেরই বাসস্ট্যান্ডের রক্ষণাবেক্ষণ ও ছোটখাট সংস্কার করতে হবে। সেই শর্তেই রাজি ছিল সংস্থাটি। ১৪ অগস্ট পুরসভা ওই সংস্থাকে চিঠি দিয়ে ১৫টি বাসস্ট্যান্ডে বিজ্ঞাপন লাগানোর অনুমতি দেয়। সেখানে লেখা হয়েছে, ওই সংস্থা পুরসভার সঙ্গে তাদের চুক্তি নবীকরণের আবেদন করেছিল। তা এক বছরের জন্য মঞ্জুর করা হল। সে জন্য বাসস্ট্যান্ড পিছু ৩ হাজার টাকা হিসেবে মোট ৪৫ হাজার টাকা জমা দিতে বলা হয়।
এখন প্রশ্ন উঠেছে, সংস্থাটি যেখানে এ বছরই প্রথম আবেদন করেছে সেখানে নবীকরণের প্রশ্ন এল কোথা থেকে। এর আগে ২৬ জুন পুরসভা অন্য এক বিজ্ঞাপন সংস্থাকে বাসস্ট্যান্ড পিছু বার্ষিক ৫ হাজার টাকা ১০ বছরের মেয়াদে ৫টি বাসস্ট্যান্ড বিজ্ঞাপনের জন্য ব্যবহারের অনুমতি দেয়। এর পরেই ১৫ বাসস্ট্যান্ড ব্যবহারের অনুমতি পাওয়া সংস্থাটি পুরসভার কাছে চিঠি দিয়ে দাবি করে, তারা যে ২০টি বাসস্ট্যান্ডের জন্য অনুমতি চেয়ে আবেদন করেছিল তার মধ্যে এই ৫টিই ছিল সবচেয়ে সম্ভাবনাময়। সুতরাং, তাদের বাকি ১৫টির জন্য ভাড়ার পরিমাণ কমিয়ে দিতে হবে। অভিযোগ, ওই সংস্থার আবেদন মেনে এক ধাক্কায় বার্ষিক দু’হাজার টাকা করে কমিয়ে দেয় পুরসভা। ১৪ অগস্ট চিঠি দিয়ে পুরসভা ওই সংস্থাকে জানায়, ১৫টি বাসস্ট্যান্ডের জন্য ৪৫ হাজার টাকা জমা দিলেই চলবে।
পুরসভার কাছে বহু সংস্থাই বিজ্ঞাপন দেওয়ার অনুমতি চেয়ে দরবার করে। তেমনই কয়েকটি সংস্থার কর্তাদের দাবি, পুরো প্রক্রিয়াটির মধ্যে যথেষ্ট অস্বচ্ছতা রয়েছে। তাঁদের মতে, টেন্ডার ডেকে যে সংস্থা সর্বোচ্চ দর দেবে তাকেই অনুমতি দেওয়া উচিত। তাঁরা আরও দাবি করেন, বর্তমান বাজারদর অনুযায়ী দুর্গাপুরে কোনও বাসস্ট্যান্ড পিছু মাসে কয়েক হাজার টাকা দর ওঠা একেবারেই অস্বাভাবিক নয়। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কয়েক জন কর্তার বক্তব্য, “সেই জায়গায় বছরে কাউকে পাঁচ হাজার, কাউকে তিন হাজার টাকায় বিজ্ঞাপন দেওয়ার অনুমতি দিয়ে দেওয়া হচ্ছে।” পুরসভার বিরুদ্ধে স্বজনপোষণের অভিযোগ তুলে তাঁদের অভিযোগ, “খোঁজ নিলে দেখা যাবে ওই সব সংস্থার পিছনে শাসকদলের কোনও নেতা রয়েছেন।”
বিনা টেন্ডারে বাসস্ট্যান্ডে বিজ্ঞাপনের অনুমতি দেওয়ার কথা স্বীকার করেছেন দায়িত্বপ্রাপ্ত মেয়র পারিষদ মধুসূদন মণ্ডল। তবে তাঁর দাবি, একাধিক সংস্থা আবেদন জানিয়েছিল। তাদের মধ্যে থেকে বেছে দু’টি সংস্থাকে ২০টি বাসস্ট্যান্ডে বিজ্ঞাপন দেওয়ার অনুমতি দেওয়া হয়েছে। প্রথম বার আবেদন করা সংস্থাকে কী ভাবে চুক্তি নবীকরণের চিঠি পাঠানো হল, সে প্রসঙ্গে তাঁর বক্তব্য, “এমনটা হওয়ার কথা নয়। খোঁজ নিয়ে দেখছি।”



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.