ছিনতাই বাড়ছে স্টেশন চত্বরে, পুলিশই চিন্তায়
স্টেশন চত্বর থেকে যাত্রীদের ব্যাগ ও দামি জিনিসপত্র ছিনতাই দিন দিন বেড়ে চলেছে। চলতি মাসে আসানসোল স্টেশনে এরকম ছ’টি ঘটনা ঘটেছে বলে জানিয়েছে পুলিশ। কয়েক জনকে গ্রেফতারও করা হয়েছে। কিন্তু তাতেও রাশ টানা যাচ্ছে না, বেপরোয়া ছিনতাইয়ে। চিন্তার ভাঁজ পড়েছে রেল পুলিশের কপালে। ফলে চলন্ত ট্রেন ও ভিড় প্ল্যাটফর্মে সাধারণ যাত্রীদের নিরাপত্তা বাড়াতে যৌথ ভাবে বিশেষ কিছু ব্যবস্থা নেওয়ার পরিকল্পনা করেছে জিআরপি ও আরপিএফ।
আসানসোল জিআরপি সূত্রে জানা গিয়েছে, চলন্ত ট্রেনের কামরা থেকে ব্যাগ ছিনতাইয়ের ঘটনায় শনিবার রাতেও এক দুষ্কৃতীকে ধরেছে আসানসোল জিআরপি। রবিবার সকালেও বাতানুকুল কামরার এক যাত্রীর ব্যাগ নিয়ে পালানোর সময় দু’জনকে হাতেনাতে ধরে জিআরপি। ওই ব্যাগে হাজার খানেক টাকা ছিল বলে পুলিশকে জানিয়েছেন ওই ব্যবসায়ী। ধৃত দু’জন, পঞ্চু গুপ্তা ও রাজেশ গুপ্তা আসানসোলের রামকৃষ্ণ ডাঙাল অঞ্চলের বাসিন্দা। পুলিশ জানিয়েছে, এ দিন প্ল্যাটফর্মে ট্রেন ঢোকার পরেই দুই দুষ্কৃতী নামার সময় ওই ব্যবসায়ীর ব্যাগটি ছিনিয়ে নিয়ে পালায়। ব্যবসায়ীর চিৎকার শুনে পুলিশ কর্মীরা এদের পিছু নেয় এবং ধরে ফেলে। এই ঘটনার দিন দুয়েক আগে ছিনতাই করে পালানোর সময় যাত্রীদের হাতে ধরা পড়ে মহম্মদ কুরবান নামে এক দুষ্কৃতী। পঞ্জাব মেলের বাতানুকুল কামরা থেকে ব্যাগ ছিনতাই করে পালাচ্ছিল সে। আসানসোলের চাঁদমারি এলাকার বাসিন্দা ওই দুষ্কৃতীকে প্ল্যাটফর্মেই ধরে ফেলার পরে উত্তম মধ্যম দিয়ে পুলিশের হাতে তুলে দেন যাত্রীরা।
আসানসোল জিআরপি থানার আইসি জয়ন্ত দত্ত জানান, পঞ্জাবের পাটিয়ালা থেকে হলদিয়া যাওয়ার পথে এক যাত্রীর ব্যাগ ছিনতাই হয়। বার্নপুর স্টেশনের কাছে গত ২২ অগস্ট পুরুলিয়া আসানসোল ট্রেনের যাত্রী রানিগঞ্জের লাল্টু সিংহের কাছ থেকেও টাকা ভর্তি ব্যাগ নিয়ে পালায় কিছু দুষ্কৃতী। গত ১৩ অগস্ট আসানসোল স্টেশন চত্বর থেকেই বমাল ধরা পড়ে মহম্মদ তানিস্ক নামের এক দুষ্কৃতী। আসানসোলের রেলপাড় অঞ্চলের বাসিন্দা ওই দুষ্কৃতী হাওড়াগামী জনতা এক্সপ্রেস ট্রেনের এক যাত্রীর ল্যাপটপ ছিনিয়ে নিয়েছিল। আর আগে ৬ অগস্ট আসানসোল স্টেশন থেকেই এক যাত্রীর মোবাইল ও ব্যাগ ছিনতাইয়ের অভিযোগে ধরা হয় স্থানীয় রেলপাড় এলাকার বাসিন্দা মহম্মদ আখতার নামে এক দুষ্কৃতীকে। প্রতিটি ঘটনার তদন্ত করে ছিনতাইয়ের পদ্ধতি নিয়ে একটা ধারণা হয়েছে পুলিশের। পুলিশ জানিয়েছে, ধৃত সকলেই রেলপাড় এলাকার বাসিন্দা। দীর্ঘ দিন ধরেই এই চক্র যাত্রীদের ব্যাগ ও মূল্যবান সামগ্রী ছিনিয়ে নেওয়ার কাজে জড়িত বলে পুলিশের অনুমান। পুলিশ জানায়, হাওড়া বা কলকাতামুখী দুরপাল্লার ট্রেনগুলি সাধারণত আসানসোলের ৫ অথবা ৬ নম্বর প্ল্যাটফর্মে দাঁড়ায়। এই দু’টি প্ল্যাটফর্মের গা ঘেঁষেই রয়েছে রেলপাড়ের বসতি অঞ্চল। তদন্তে নেমে পুলিশ জেনেছে, দুষ্কৃতীরা আগে থেকেই ট্রেনের কামরা নির্দিষ্ট করে রাখে। ট্রেন থামার অল্পসময়ের মধ্যেই এরা হাত সাফাই করে ছুটে প্ল্যাটফর্মের বাইরে বেরিয়ে যায় ও ঘিঞ্জি বসতি এলাকায় গা ঢাকা দেয়। পুলিশ জানিয়েছে, আসানসোল বড় জংশন স্টেশন হওয়ায় এখানে দুরপাল্লার ট্রেন বেশি সময় দাঁড়ায়। সেই ফাঁকে প্ল্যাটফর্মে ভিক্ষে করা কিছু অল্পবয়সী ছেলেমেয়ে কামরায় ওঠে। অযাচিত ভাবেই তারা ট্রেনের মেঝে ঝাড়পোছ করে যাত্রীদের কাছ থেকে পয়সা নেয়। এর মধ্যেই তারা যাত্রীদের জিনিসপত্র লক্ষ করে প্ল্যাটফর্মে দুষ্কৃতীদের খবর পৌঁছে দেয় পুলিশের অনুমান।
জয়ন্তবাবু জানান, যাত্রীদের কাছ থেকে অভিযোগ পেলেই তাঁরা তদন্তে নামেন ও দুষ্কৃতীদের ধরার চেষ্টা করেন। কিন্তু অনেক ক্ষেত্রেই রেল যাত্রীরা পুলিশের কাছে ছিনতাইয়ের অভিযোগ জানান না বলে তাঁর আক্ষেপ। ফলে পুলিশের কাছেও খবর আসে না। দুষ্কৃতীরাও পার পেয়ে যায়। রেলপাড়ের ওই চক্র ধরার চেষ্টা চলছে বলেও জানিয়েছে পুলিশ। এছাড়া ৫ ও ৬ নম্বর প্ল্যাটফর্ম থেকে দুষ্কৃতীরা যেন অবাধে স্টেশনে ঢুকতে না পারে তার জন্য আরপিএফ ও জিআরপি যৌথ ভাবে তল্লাশি চালাচ্ছে। ঠিক হয়েছে, দুরপাল্লার ট্রেন প্ল্যাটফর্মে ঢোকার আগেই এই যৌথ বাহিনী নির্দিষ্ট কিছু জায়গায় ব্যারিকেট করে দাঁড়াবে। ট্রেন প্ল্যাটফর্ম ছেড়ে বেরিয়ে না যাওয়া পর্যন্ত পুলিশ নজরদারি রাখবে।



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.