আন্দোলনের নামে শিল্পায়নের গতিরোধ করলে রাজ্য সরকার তা বরদাস্ত করবে না বলে হুঁশিয়ারি দিয়েছিলেন শিল্পমন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায়। তার পরেও কোনও না কোনও অজুহাতে বর্ধমানে এসার অয়েলের কাজে বাধা দেওয়া চলছেই।
কয়েক দিন আগেই গলসির ফরওয়ার্ড ব্লক বিধায়কের নেতৃত্বে কাঁকসার সুভাষপল্লিতে এসারের পাইপলাইন পাতায় বাধা দেওয়া হয়েছিল। বৃহস্পতিবার কাঁকসার আকন্দারায় ফের কাজ বন্ধ করিয়ে দিয়ে বিক্ষোভ দেখালেন গ্রামবাসী। তাঁদের অভিযোগ, প্রতিশ্রুতি মতো গ্রামোন্নয়নের কাজ হয়নি। নিরাপত্তাকর্মীর পদে স্থানীয়দের নিয়োগের দাবিও তোলা হয়। গত ১১ অগস্ট এই আকন্দারাতেই তৃণমূলের নেতৃত্বে গ্রামোন্নয়নের দাবিতে কাজ বন্ধ করে দেওয়া হয়েছিল। পরের দিন শিল্পমন্ত্রী দুর্গাপুরে দু’পক্ষকে নিয়ে বৈঠকও করে যান। কিন্তু টানাপোড়েন পুরোপুরি মেটেনি।
রানিগঞ্জ কোল ব্লক থেকে কোল বেড মিথেন (সিবিএম) তুলে তা দুর্গাপুর শিল্পাঞ্চল ও পানাগড়ে নির্মীয়মাণ সার কারখানায় সরবরাহ করার প্রকল্প হাতে নিয়েছে এসার। কিন্তু কখনও রাজনৈতিক দলের ছত্রচ্ছায়ায়, কখনও বিচ্ছিন্ন ভাবে কাজে বাধা দেওয়া চলছেই। এদিন সকাল ৯টা নাগাদ আকন্দারায় বিক্ষোভ শুরু করেন জনা কুড়ি গ্রামবাসী। তাঁদের অভিযোগ, গ্রামের রাস্তা বর্ষায় বেহাল হয়ে গিয়েছে।
অথচ তার উপর দিয়েই চলাচল করছে এসার অয়েলের ভারী ভারী গাড়ি। ফলে রাস্তা আরও বেহাল হয়ে যাচ্ছে। |
গত অগস্টেও আকন্দরায় যে এসারের কাজে বাধা দেওয়া হয়েছিল, তার কেন্দ্রেও ছিল বর্ষায় ভারী গাড়ি ও ডাম্পার চলায় গ্রামের রাস্তা ভেঙে যাওয়ার অভিযোগ। প্রকল্পের দূষিত জল বয়ে আশপাশের জমিতে পড়ায় সেগুলি চাষের অযোগ্য হয়ে পড়ছে বলেও অভিযোগ তোলা হয়। এলাকায় পানীয় জলের বন্দোবস্ত করে দেওয়া ছাড়াও ঠিকাকর্মী ও নিরাপত্তারক্ষী হিসাবে স্থানীয় বাসিন্দাদের নিয়োগকে অগ্রাধিকার দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন এসারের আধিকারিকরা। কিন্তু কাজে মোটেই তা হয়নি দাবি করে ১১ অগস্ট তৃণমূলের কাঁকসা ব্লক কিষান খেতমজুর কমিটির সভাপতি আজিজুল মিদ্যার নেতৃত্বে বিক্ষোভ দেখানো হয়েছিল।
পরের দিন, ১২ অগস্ট দুর্গাপুরে এসারের প্রতিনিধি ও স্থানীয় তৃণমূল নেতৃত্বের সঙ্গে বৈঠক করেন শিল্পমন্ত্রী। বৈঠকের পরে তিনি বলেন, “এসারের কাজকর্মে কিছু কিছু সমস্যা হচ্ছে। মূলত ভুল বোঝাবুঝি থেকেই এ সব ঘটছে। বৈঠকে সব পক্ষের মধ্যে ঐকমত্য হয়েছে। ভবিষ্যতে আর কাজ বন্ধ হবে না।” বিক্ষোভকারীদের দাবি, শিল্পমন্ত্রীর মোদ্দা বক্তব্য ছিল, প্রকল্প এলাকার বাসিন্দাদের স্বার্থের কথা ভাবতে হবে বিনিয়োগকারীকেও। কিন্তু এসার অয়েল কর্তৃপক্ষ তা মানছেন না। রাস্তা সংস্কারের কোনও ব্যবস্থা হয়নি। এ দিন বিক্ষোভকারীদের তরফে স্থানীয় বাসিন্দা রণবীর বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, “কর্তৃপক্ষ গ্রামোন্নয়নের প্রতিশ্রুতি মানেননি। নিরাপত্তাকর্মীর পদে ১৫ জন লোক নিয়োগ করা হবে বলে শুনছি। আমাদের দাবি, ওই পদগুলিতে স্থানীয়দেরই নিয়োগ করতে হবে।” প্রতিশ্রুতি পালনে দ্রুত পদক্ষেপ করা না হলে ‘আন্দোলন’ চলবে বলেও তাঁরা হুমকি দেন।
পরে অবশ্য বিক্ষোভের খবর পেয়ে এক দল তৃণমূল কর্মী ঘটনাস্থলে চলে আসেন। তাঁদের বক্তব্য, কাজ বন্ধ করে আন্দোলনের পথে তাঁরা যে আর নেই, শিল্পমন্ত্রী তা জানিয়ে দিয়েছেন। কিন্তু গ্রামবাসীদের নাম করে বিরোধী রাজনৈতিক মনোভাবাপন্ন কয়েক জন প্রকল্পের কাজ বন্ধ করে দিয়েছেন। তৃণমূল কর্মী সৈয়দ আবদুল রহিম বলেন, “এমন আন্দোলনে যাঁরা আছেন তাঁদের সরে যেতে বলব। আলোচনার মাধ্যমে সমস্যা মেটাতে হবে।” ঘণ্টা দুয়েক পরে বিক্ষোভ উঠে যায়। কাজও ফের শুরু হয়।
এসার অয়েলের এক আধিকারিক বলেন, “ছোট ঘটনা। আলোচনার মাধ্যমে মিটিয়ে ফেলা হবে।” |
পুরনো খবর: এসারের কাজে বাধা |