সারদা-সহ চিটফান্ড কান্ডের ছায়া এই বার দুর্গা পুজোর প্রস্তুতিতেও। অন্তত কোচবিহারের পুজোর বাজার তেমনই বলছে। ফলে জেলার কুমোরটুলিতে যেমন প্রতিমা তৈরির বরাতের হিড়িক নেই তেমনি স্পনসর না পেয়ে বাজেট কমানোর কথা ভাবছেন বিভিন্ন পুজো কমিটির কর্তারা। এ অবস্থায় পুজোর জলুস কমে যাওয়ার আশঙ্কা করছেন বাসিন্দাদের একাংশ। রাজ্যের পরিষদীয় সচিব রবীন্দ্রনাথ ঘোষ বলেন, “জেলায় ওই সব সংস্থার কমিশনভোগীর সংখ্যা ছিল অন্তত ৫০ হাজার। সেটা বন্ধ হওয়ায় কিছুটা প্রভাব তো পড়বেই।”
কোচবিহার শহর বটেই, জেলার প্রত্যন্ত এলাকার বিগ বাজেটের পুজো আয়োজকদের বড় অংশের ভরসা স্পনসর বা বিজ্ঞাপন। ফি বছর মণ্ডপে সংস্থার পোস্টার ব্যানার হোর্ডিং দেওয়া হত। এবার সারদা কাণ্ডের প্রভাব তো বটেই, কোচবিহারে ৫০টি অর্থলগ্নি সংস্থার ব্যবসা শিকেয় উঠেছে। ফলে অন্তত পঞ্চাশ হাজার মানুষ এজেন্ট বা সংশ্লিষ্ট সংস্থার কর্মী কাজ হারিয়েছেন। আবার বাসিন্দার একাংশ আমানতকারী হিসাবে টাকা রেখে প্রতারিত হয়েছেন। সব মিলিয়েই পুজোর আয়োজনে তাই মন্দার ছাপ। কুমোরটুলিতে গেলেই যা আরও স্পষ্ট হবে। কোচবিহার পুরাতন পোস্ট অফিস পাড়া দুর্গাপুজো কমিটির গত বছর যুগ্ম সম্পাদক রাকেশ চৌধুরী বলেন, “বিগ বাজেটের পুজোগুলির বড় আর্থিক ভরসা ছিল বিভিন্ন অর্থলগ্নি সংস্থার বিজ্ঞাপন। এবার সারদা-কাণ্ড থেকে স্থানীয় বহু সংস্থা পাততাড়ি গোটানোয় স্পনসর পাওয়া মুশকিল হয়ে পড়েছে। যার জেরে আমাদেরও বাজেট কমানোর কথা ভাবতে হচ্ছে মাথাভাঙার আজাদ হিন্দ সংঘের কর্তা গত বারের পুজোর সম্পাদক প্রদ্যোত সাহা বলেন, “গতবার আমাদের সুবর্ণ জয়ন্তী বর্ষে স্পনসর বিজ্ঞাপন থেকে আড়াই লক্ষ টাকা এসেছিল বাসিন্দাদের চাঁদা উঠেছিল ১৫ লক্ষ টাকা। এ বার চিটফান্ড কাণ্ডের জেরে সামগ্রিক ভাবে প্রভাব পড়ছে পুজোয়।” আয়োজনের জলুস কমার আশঙ্কা করে বক্সিরহাটের সুভাষপল্লি পুজো কমিটির কর্তা স্বপন সাহা, “বলেন কী ভাবে খরচ সামাল দেওয়া যাবে তা নিয়ে ভাবতে হচ্ছে।”
কোচবিহার কুমোরপাড়ায় প্রতিমার বরাত দেওয়ার জন্য এ বার আর তেমন ভিড় চোখে রড়ছে না। মৃশিল্পীদের একাংশ জানাচ্ছেন, গত কয়েক বছর ধরেই বড় এজেন্ট কিংবা অর্থলগ্নি সংস্থার কর্তারা প্রতিমার দায়িত্ব নিতেন। পুজোর ভিড়কে তাদের কাজে লাগিয়ে প্রচারের আলোয় থাকতে বিপুল টাকা ডোনেশন দিতেন। কিন্তু এ বার সে বালাই নেই। ফলে পুজোর ৪০ দিন আগেও প্রতিমার বরাত মিলছে না। মৃশিল্পী সুজিত পাল বলেন, “অন্য বার পুজোর দুই মাস আগে ১০ টি প্রতিমার বরাত হয়ে যেত। এ বার এখনও দুটি বরাত এসেছে। অর্থলগ্নি সংস্থাগুলি উঠে না গেলে এ পরিস্থিতি হত না।” মৃৎশিল্পী অশোক পালের কথায়, “এ বার যারা আসছেন দাম শুনে ফিরে যাচ্ছে। ১০টি প্রতিমার বরাত এসেছে। গত বছর তা দ্বিগুণের বেশি ছিল।” |