তিনি হাসপাতালের চিকিৎসক বা কোনও কর্মী নন। একজন ‘দালাল’। তিনি রোগীর শরীরে রক্ত সঞ্চালন করার চেষ্টা করেন। এর ফলে রোগীর ডান হাতের শিরা ফুলতে থাকে এবং রোগীর অবস্থা খারাপ হতে থাকে বলে অভিযোগ ওঠে রামপুরহাট মহকুমা হাসপাতালে। এই ক্ষোভে নরেশ দাস নামে হাসপাতালের এক অস্থায়ী কর্মীকে মারধর এবং ওয়ার্ড মাস্টারের অফিস ঘরের টেবিল চেয়ার উল্টে দেন রোগীর আত্মীয়রা।
বুধবার দুপুরের এই ঘটনার জন্য হাসপাতালের কর্মীরা পর্যাপ্ত চিকিৎসক থেকে নার্স ও চতুর্থ শ্রেণির কর্মীর অভাবকেই দায়ী করেছেন। হাসপাতাল সুপার হিমাদ্রি হালদার এ দিন অনুপস্থিত ছিলেন। সুপারের দায়িত্বে থাকা চিকিৎসক কাজলকান্তি দাস বলেন, “রক্তাল্পতা নিয়ে ভর্তি হওয়া রোগীর দেহে এক অস্থায়ী কর্মী রক্ত চালাতে গিয়ে শরীরে রক্ত প্রবেশ করছিল না। এতে রোগীর সঙ্গে থাকা লোকজন ক্ষোভ প্রকাশ করে আমাদের এক অস্থায়ী কর্মীকে মারধর করেন এবং ওয়ার্ড মাস্টারের অফিস ঘরের টেবিল চেয়ার উল্টে দেন। |
পুলিশ এসে পরিস্থিতি সামাল দেয়। পরে অবশ্য বিক্ষোভকারীরা ঘটনার জন্য ক্ষমা চেয়েও নেয়।” প্রহৃত কর্মী নরেশ দাস বলেন, “দুপুর ১টা নাগাদ মহিলা বিভাগে গিয়ে দেখি, রোগীর শরীরে একজন রক্ত চালাচ্ছে। কিন্তু ঠিক মতো রক্ত না যাওয়ায় রোগী যন্ত্রনায় কাতরাচ্ছিলেন। আমি নার্সকে বলে নীচে জরুরি বিভাগের চিকিৎসককে ডাকতে যাই। এর মধ্যে চিকিৎসক উপরে উঠে আসতেই রোগীর আত্মীয়রা আমাকে মারতে মারতে উপর থেকে নীচে নিয়ে আসেন।” নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক নার্স বলেন, “কর্তব্যরত চিকিৎসকদের রোগীর দেহে রক্ত চালানোর কথা। তা না হওয়ায় রোগীর শরীরে রক্ত প্রবেশ করছিল না।”
হাসপাতাল সূত্রে জনা গিয়েছে, এ দিন সকালে মুর্শিদাবাদ জেলার পাঁচগ্রামের বাসিন্দা নাসিদা বিবি নামে এক বধূ রক্তাল্পতা নিয়ে চিকিৎসক বঙ্কু দত্তর অধীনে ভর্তি হন। বঙ্কুবাবু বলেন, “রোগীকে পরীক্ষা করার পরে আমি রক্ত চালানোর জন্য সব রকম ব্যবস্থা করে হাসপাতাল থেকে চলে আসি। পরে কী হয়েছে আমার জানা নেই।” রোগীর আত্মীয় নিলুফার ইয়াস্মিন, শিউলি খাতুনদের অভিযোগ, “চিকিৎসকদেরই সঙ্গে থাকা একজন দালাল রোগীর শরীরে রক্ত চালিয়েছে। এক জন অনভিজ্ঞ রক্ত চালাতে গিয়ে রোগীর অবস্থা খারাপ হয়ে গিয়েছিল।” ওই সময় মহিলা বিভাগে উপস্থিত ছিলেন গৌতম ঘোষ নামে এক চিকিৎসক। তিনি বলেন, “চিকিৎসকের সংখ্যা কম থাকলে অস্থায়ী কর্মীরা যাতে ইঞ্জেকশন দেওয়া বা রক্ত চালানোর কাজ করতে পারেন, সে জন্য তাঁদের প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়ে থাকে।” তবে এই ভাবে অস্থায়ী কর্মীদের দিয়ে কি এই সব কাজ করানো যায়? এ প্রশ্নের উত্তরে সিএমওএইচ রাধানাথ মাড্ডি বলেন, “ঘটনার কথা জানা নেই খোঁজ নিয়ে দেখব। তবে অনভিজ্ঞ লোকদের নিয়ে এ ধরনের কাজ করা উচিৎ নয়।” |