সরকারি হাসপাতালের ওটি-তে অস্ত্রোপচার করতে করতে মাঝপথে রোগীকে নাসির্ংহোমে ভর্তি করার পরামর্শ দিয়েছেন সরকারি চিকিৎসক। শুধু তা-ই নয়, রোগীকে ভর্তি করানোর জন্য সাদা কাগজে ওই নার্সিংহোমের নাম লিখে নিজের সই-সাবুদ করে তা রোগীর আত্মীয়দের ধরিয়েও দেন। রোগী অবশ্য টাকায় না পোষানোয় ওই নার্সিংহোমে ভর্তি হতে পারেননি। তবে মুর্শিদাবাদ মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের শল্য চিকিৎসক প্রণয়মধুর সিংহের বিরুদ্ধে এই মর্মে লিখিত অভিযোগ করেছেন।
হাসপাতালের সুপার তথা সহ-অধ্যক্ষ মণিময় বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, “রোগী নিজে লিখিত অভিযোগ জমা দিয়েছেন। প্রাথমিক তদন্তে অভিযোগের সত্যতা রয়েছে বলে মনে হচ্ছে। তিন সদস্যের দল গড়ে তদন্ত করে পাঁচ দিনের মধ্যে রিপোর্ট জমা দেওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। বিষয়টি ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকেও জানানো হয়েছে।”
রোগী, বেলডাঙা থানার দেবকুণ্ড গ্রামের বাসিন্দা বাসের মিস্ত্রি আজিজুল শেখ। সোমবার হাতুড়ি দিয়ে একটি লোহার পাত পেটানোর সময়ে বেকায়দায় তাঁর বাঁ পায়ের হাঁটুর উপরে লোহার তীক্ষ্ন ছোট টুকরো ঢুকে যায়। সহকর্মীরা তাঁকে মুর্শিদাবাদ মেডিক্যালে ভর্তি করান। সোমবার রাতে প্রণয়মধুর সিংহ শুরু করেন অস্ত্রোপচার। |
দু’ঘণ্টা অস্ত্রোপচার চললেও সেই লোহার টুকরো বার করা যায়নি।
আজিজুল শেখের অভিযোগ, “ডাক্তারবাবু ওটি’র মধ্যেই আমাকে বলেন, নার্সিংহোমে মাইক্রো-সার্জারি করে ওই লোহার কুচি বার করতে হবে। প্রথমে বলেন সে জন্য ৮ হাজার, পরে বলেন ১০ হাজার টাকা খরচ হবে। বলেছিলাম, অত টাকা খরচ করতে পারব না। উনি তখন আমাকে বলেন, কলকাতার হাসপাতালে পাঠিয়ে দেব। খরচ বেড়ে যাবে।” হাসপাতাল সুপারের কাছে মঙ্গলবার এই মর্মে অভিযোগ করায় ওই চিকিৎসক তাঁকে ফের বকাঝকা করেন বলেও অভিযোগ আজিজুলের।
চিকিৎসক প্রণয়মধুর সিংহ অবশ্য বলেন, “মুর্শিদাবাদ মেডিক্যালে শিহ্যাম (Sheeham) যন্ত্র নেই। ওই যন্ত্র থাকলে রোগীর পায়ের পেশির ঠিক কোন জায়গায় লোহার কুচি ঢুকে রয়েছে তা দেখে নেওয়া যেত। বহরমপুর শহরের ওই নার্সিংহোমে যন্ত্রটি রয়েছে বলে জানি। তাই রোগীর স্বার্থেই সেখানে অস্ত্রোপচারের পরামর্শ দিই। এখন দেখছি, রোগীর উপকার করতে যাওয়া ভুল হয়েছে।” কিন্তু বিপিএল তালিকায় নাম থাকা আজিজুলের পক্ষে কি নার্সিংহোমে ভর্তির খরচ দেওয়া সম্ভব? প্রণয়মধুরবাবুর জবাব, “উনি যে বিপিএল-তালিকাভুক্ত আমি জানতাম না।” সুপারের কাছে তাঁর বিরুদ্ধে অভিযোগ জানানোয় আজিজুলকে বকাঝকা করার অভিযোগও মানেননি তিনি। হাসপাতাল সুপারও মেনেছেন, শিহ্যাম যন্ত্র থাকলে ওই অস্ত্রোপচারে সুবিধা হত। তিনি বলেন, “ওই যন্ত্রের দাম প্রায় ২২ লক্ষ টাকা। যন্ত্রটি পাঠানোর জন্য স্বাস্থ্যভবনকে লিখিত ভাবে জানানো হয়েছে।”
রাজ্য স্বাস্থ্য-শিক্ষা অধিকর্তা সুশান্ত বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, “হাসপাতালে যে ওই যন্ত্র নেই, সেটা কি ওই চিকিৎসক জানতেন না? না জেনেই কি উনি ওই অস্ত্রোপচার শুরু করেছিলেন? যন্ত্রটার কথা ওঁর কি মাঝপথে মনে পড়ল?” সুপার জানান, আজিজুলের পা থেকে লোহার কুচি এখনও বার করা যায়নি। হাসপাতালের শল্য চিকিৎসা বিভাগের প্রধান বুধবার ওই রোগীকে দেখেছেন। তাঁর পরামর্শমতো আগামী কয়েক দিন আজিজুলকে হাসপাতালে পর্যবেক্ষণে রাখার সিদ্ধান্ত হয়েছে। নতুন করে অস্ত্রোপচার হবে না তাঁকে কলকাতার কোনও হাসপাতালে পাঠানো হবে, সেই সিদ্ধান্ত পরে নেওয়া হবে।
আজিজুল বলছেন, “ডাক্তারবাবু যদি ওই যন্ত্র ছাড়া লোহার কুচি বার করতেই না পারবেন, তা হলে পা-টা কাটাছেঁড়া করলেন কেন?” |