পুরসভার হাতে টাকা রয়েছে। তবুও তারা ঠিকাদারদের বকেয়া মেটাতে পারছে না কেন সেই প্রশ্ন তুলেছেন উত্তরবঙ্গ উন্নয়নমন্ত্রী গৌতম দেব। বুধবার সাংবাদিক বৈঠক করে মন্ত্রীর দাবি, পুরসভার হাতে বিভিন্ন প্রকল্পের অন্তত ২০ কোটি টাকা রয়েছে। অথচ তা না দিতে পারায় আর্থিক প্রতিবন্ধকতার যে কারণ দেখাচ্ছেন পুর কর্তৃপক্ষ তা ঠিক নয়। সরকারের তরফে কোনও আর্থিক প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করা হয়নি। তা ছাড়া টাকা না পাওয়ার ঠিকাদাররাও নিজেদের কাজ করতে পারছেন না বলে দাবি করেন মন্ত্রী। তাতে মন্ত্রী ঠিকাদারদের পাশে দাঁড়ালেন বলে মত ক্ষমতাসীন কংগ্রেসের কাউন্সিলরদের একাংশের।
মন্ত্রী বলেন, “ঠিকাদারদের মোটা টাকা বকেয়া রয়েছে। তা দিলেই তাঁরা ফের কাজ করবেন। পুরসভার হাতে বিভিন্ন প্রকল্পের টাকা রয়েছে। অথচ আর্থিক প্রতিবন্ধকতার কথা বলে টাকা দিচ্ছেন না তাঁরা। সরকারের তরফে যে কোনও প্রতিবন্ধকতা নেই শীঘ্রই তা জানিয়ে দেওয়াও হবে।” মন্ত্রী জানিয়ে দেন, পুরসভা না পারলে তাদের জানিয়েই পুজোর আগে শিলিগুড়ি জলপাইগুড়ি উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ ও উত্তরবঙ্গ উন্নয়ন দফতরের মাধ্যমে তারা বিভিন্ন পুজো মণ্ডপ এলাকার রাস্তাগুলির মেরামতি করবেন। যারা পুরসভায় তালিকাভুক্ত ঠিকাদার তাঁরা চাইলেই এসজেডিএ বা উত্তরবঙ্গ উন্নয়ন দফতরের কাজ করতে পারেন। মেয়র গঙ্গোত্রী দত্ত বলেন, “এখনই কিছু বলছি না। দলের সঙ্গে আলোচনা করেই বলব।” তবে এ দিন কেন্দ্রীয় নগরোন্নয়ন দফতরের প্রতিমন্ত্রী দীপা দাশমুন্সি শিলিগুড়িতে বলেন, “রাজ্যে ক্ষমতায় থেকে তৃণমূল টাকা দিয়ে সব কিছু করতে চাইছে। কংগ্রেসের দল ভাঙিয়ে কাউন্সিলরদের তাদের দিকে টানতে চাইছে। তবে এখন পর্যন্ত কংগ্রেসের কাউন্সিলররা এক সঙ্গেই রয়েছেন এটা বলতে পারি।”
এই পরিস্থিতিতে আগামী ৩১ অগস্ট মাসিক সভা ডেকেছেন চেয়ারম্যান নান্টু পাল। কয়েক মাস ধরেই নান্টুবাবুর ডাকা বৈঠকগুলিতে কংগ্রেস কাউন্সিলররা যোগ দিচ্ছেন না। এই বৈঠকেও মেয়র, তাঁর পারিষদ ও কংগ্রেস কাউন্সিলররা যোগ না দিলে রাজ্য সরকারের তরফে চিঠি দিয়ে পরিস্থিতি জানতে চাওয়া হবে। মন্ত্রী বলেন, “সরকার সব নজরে রেখেছে। দরকারে কড়া ব্যবস্থা হবে।”
মন্ত্রীর অভিযোগ, যে পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে পুর কতৃর্পক্ষই তার জন্য দায়ী। মাসিকসভা না করাতেই সমস্যা দেখা দিয়েছে। বিল্ডিং প্ল্যান পাস, পার্কিংয়ের বরাত দেওয়ার মতো অনেক কাজ আটকে পড়েছে। বাজেট পাস নিয়ে বিতর্কের জেরে পুর কর্তৃপক্ষই পুর দফতরকে কিছু কাজ করার ক্ষেত্রে অনুমতি চায়। উত্তরে তাদেরকে প্রথমে ১৬টি কাজের ব্যাপারে সম্মতি দেওয়া হয়। পরে তা কয়েকটি বাড়ানো হয়েছে। তা না হলে কর্মীদের বেতন হত না।
সম্প্রতি আর্থিক প্রতিবন্ধকতা এবং ঠিকাদারদের পাওনা মেটানোর ব্যাপারে সমস্যা নিয়ে উত্তরবঙ্গ উন্নয়ন মন্ত্রীর সঙ্গে বৈঠক করেন মেয়র। তাকে সমস্যা মেটানোর আর্জি জানান মেয়র। মন্ত্রী সমস্যার কথা লিখিত ভাবে পুর কর্তৃপক্ষকে জানাতে বলেন। বিষয়টি তিনি পুর দফতরকেও বলবেন বলে জানান। তাতেই ক্ষমতাসীন কংগ্রেসের পুরবোর্ডের কর্তারা মনে করেন মন্ত্রী তাদের সাহায্য করবেন। কিন্তু বাস্তবে পরিস্থিতি যে জটিল হচ্ছে এ দিন মন্ত্রী বক্তব্যে সেটাই তারা টের পাচ্ছেন।
এমনকী এ দিন গৌতমবাবু জানিয়ে দেন, প্রয়োজনীয় কাউন্সিলর সংখ্যা না থাকায় বর্তমান সংখ্যালঘু পুরবোর্ডের বিরুদ্ধে অনাস্থা আনতে পারছেন না। তবে ২০১৪ সালের ৪ অক্টোবর পর্যন্ত এই বোর্ডের মেয়াদ। তার আগেই নির্বাচন হবে। ৬ মাস আগে থেকেই তা করা য়ায়। সেই মতো এপ্রিল থেকেই যে কোনও সময় পুর নির্বাচন হতে পারে। দেড় মাস আগে নির্বাচনের বিজ্ঞপ্তি জারি হবে। তা হলে ওই আর্থিক বছরের বাজেটও পুরসভা পেশ করতে পারবে না। পুর কর্তৃপক্ষের উপর চাপ বাড়িয়ে মন্ত্রী দাবি করেন, পুরসভার হাতে সুসংহত বস্তি উন্নয়ন প্রকল্পের ফেজ -২-এর ৪ কোটি এবং ফেজ-৩-এর ১০ কোটি ৭৬ লক্ষ টাকা রয়েছে। ইউআইডিএসএসএমটি কেন্দ্রীয় প্রকল্পে নিকাশি তৈরির কাজের আড়াই কোটি টাকা রয়েছে। পানীয় জলের মতো বস্তি এলাকায় পরিকাঠামো গড়তে ২ কোটি ৩০ লক্ষ টাকা রয়েছে। সাংসদ তহবিলের ১৩ লক্ষ টাকা তাঁরা খরচ করতে পারে। সে সব যাতে খরচ করতে সমস্যা না হয় পুর দফতর তা চিঠি দিয়ে জানাবে। তিনি জানান, উত্তরবঙ্গ উন্নয়ন দফতর ১ কোটি ২০ লক্ষ টাকা বিভিন্ন কাজে দিয়েছেন। তার মঝ্যে ৩৭ লক্ষ টাকা পুরসভা খরচ করতে পারেনি। বিআরজিএফ ফান্ডে ৯ লক্ষ টাকা রয়েছে। |