ঝাড়খণ্ডে ঠায় দাঁড়িয়ে বাংলায় বর্ষাল নিম্নচাপ |
নিজস্ব সংবাদদাতা • কলকাতা |
যেতে পারি, কিন্তু কেন যাবো!
যেতে যে সে পারে, মঙ্গলবার সাততাড়াতাড়ি বাংলার সীমানা পেরিয়ে গিয়ে তার প্রমাণ দিয়েছিল নিম্নচাপ। কিন্তু হঠাৎ ব্রেক কষে ‘কেন যাবো’ প্রশ্ন তুলেই যেন সে থমকে গেল ঝাড়খণ্ডে! আর যেতে যেতে মাঝপথে তার এই দাঁড়িয়ে পড়ার জেরে বৃষ্টি থেকে পুরোপুরি রেহাই পেল না বাংলা। তবে হাওয়া অফিসের আশ্বাস, নিম্নচাপের শক্তি বাড়ার সম্ভাবনা আর তেমন নেই।
এর আগের কয়েকটি নিম্নচাপ বেশ কয়েক দিন শিকড় গেড়ে বসায় একটানা বর্ষণ চলছিল। সেই তুলনায় এ বারের নিম্নচাপটি দ্রুত বিদায়ের পথ ধরায় আবহবিদদের ধারণা হয়েছিল, ওড়িশা ও ঝাড়খণ্ড হয়ে বুধবার সকালের মধ্যেই সে পৌঁছে যাবে ছত্তীসগঢ়ে। অর্থাৎ পশ্চিমবঙ্গ-ওড়িশা উপকূল দিয়ে স্থলভূমিতে ঢোকা নিম্নচাপগুলির ভবিষ্যৎ যা হয়, এটিরও তা-ই হবে। কিন্তু সোমবার রাতে বঙ্গোপসাগরে তৈরি হওয়া এই নিম্নচাপটির অন্য পরিকল্পনা ছিল। ওড়িশা থেকে মঙ্গলবার রাতেই সে পৌঁছে গিয়েছিল ঝাড়খণ্ডে। কিন্তু সেখানেই ঠায় দাঁড়িয়ে পড়ে।
ফল যা হওয়ার, তা-ই হল। বুধবারেও বৃষ্টি চলল কলকাতা-সহ প্রায় গোটা রাজ্যে। মহানগরীতে এ দিন বৃষ্টির পরিমাণ কমলেও সারা দিন আকাশ ছিল মেঘে ঢাকা। ভারী বৃষ্টি হয়েছে হাওড়া এবং পূর্ব ও পশ্চিম মেদিনীপুরে। আলিপুর আবহাওয়া দফতর জানাচ্ছে, আপাতত ঝাড়খণ্ড থেকে ওই নিম্নচাপের সরে যাওয়ার কোনও সম্ভাবনা দেখা যাচ্ছে না। সে থমকে যাওয়ায় আজ, বৃহস্পতিবারেও দক্ষিণবঙ্গের জেলাগুলিতে বৃষ্টি হবে।
ঝাড়খণ্ডে ঢুকে পড়ার পরেও নিম্নচাপ এ ভাবে দাঁড়িয়ে গেল কেন? |
আলিপুর আবহাওয়া দফতরের অধিকর্তা গোকুলচন্দ্র দেবনাথ জানান, গাঙ্গেয় পশ্চিমবঙ্গ এবং ঝাড়খণ্ডে মৌসুমি বায়ু এই মুহূর্তে অতি সক্রিয়। তার টানেই নিম্নচাপটি থমকে গিয়েছে। পশ্চিমবঙ্গে মৌসুমি বায়ুর আরও অন্তত দু’দিন অতি সক্রিয় থাকার কথা। এবং তার টানে নিম্নচাপটিরও নট নড়নচড়ন অবস্থা কাটবে না। এই দু’দিনের মধ্যে ঝাড়খণ্ড থেকে তার সরে যাওয়ার সম্ভাবনা কম। তবে আশার কথা একটাই। গোকুলবাবু জানাচ্ছেন, এক জায়গায় দাঁড়িয়ে থাকলেও শক্তি বাড়ানোর মতো প্রাকৃতিক অবস্থা নেই ওই নিম্নচাপের। একই জায়গায় দাঁড়িয়ে থেকে সে দুর্বল হয়ে যাবে।
কিন্তু নিম্নচাপ দুর্বল হওয়ার আগেই মঙ্গলবার রাত থেকে বুধবার সকাল পর্যন্ত কলকাতা-সহ দক্ষিণবঙ্গের বিভিন্ন এলাকায় দফায় দফায় বৃষ্টি হয়েছে। হাওড়ার উলুবেড়িয়ায় ১২০ মিলিমিটার, পূর্ব মেদিনীপুরের হলদিয়ায় ১২০ এবং কাঁথিতে ১১০, হাওড়ার উলুবেড়িয়ায় ১০০, নদিয়ার কৃষ্ণনগরে ১১০, দক্ষিণ ২৪ পরগনার ডায়মন্ড হারবার ও বারুইপুর দু’জায়গাতেই ৯০, বীরভূমের রামপুরহাটে ৭০, বর্ধমানে ৬০ এবং কলকাতায় ৫০ মিলিমিটার বৃষ্টি রেকর্ড করা হয়েছে। আবহাওয়া দফতর জানাচ্ছে, বৃহস্পতিবার বাঁকুড়া, পুরুলিয়া, পশ্চিম মেদিনীপুর, বর্ধমানে ভারী বৃষ্টির সম্ভাবনা আছে। বিক্ষিপ্ত বর্ষণ হতে পারে দক্ষিণবঙ্গের অন্যত্র।
রাজ্যের সেচ দফতর সূত্রের খবর, পূর্ব মেদিনীপুরের পাঁশকুড়া এলাকায় বন্যা-পরিস্থিতির কিছুটা উন্নতি হলেও তমলুকের পরিস্থিতি একই রকম রয়েছে। এ দিন তমলুকে বন্যা-পরিস্থিতি দেখতে গিয়েছিলেন রাজ্যের সেচমন্ত্রী রাজীব বন্দ্যোপাধ্যায়। তিনি বলেন, “এ দিন বৃষ্টি না-হলে পাঁশকুড়ায় জল পুরোপুরি নেমে যেত। কিন্তু বৃষ্টি চলায় কিছু কিছু জায়গায় এখনও জল দাঁড়িয়ে রয়েছে।” তিনি জানান, তমলুকের চারটি খাল ভাল কাজ করছে। কিন্তু গঙ্গাখালি খাল ঠিকমতো কাজ করছে না। ওই খাল কেটে কী ভাবে জল বার করা যায়, তা নিয়ে ভাবনাচিন্তা চলছে।
তবে পরপর নিম্নচাপের ধাক্কা সত্ত্বেও পূর্ব মেদিনীপুর ছাড়া রাজ্যের অন্য কোনও জেলায় বন্যা-পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়নি বলে জানান সেচমন্ত্রী। তাঁর দাবি, রাজ্যের সব নদীর জলই মোটামুটি বিপদসীমার নীচে রয়েছে।
|