সঙ্কটে দুই জেলার পাটচাষিরা
নেই পর্যাপ্ত বৃষ্টি, পাট শুকোচ্ছে মাঠেই
র্যাপ্ত বৃষ্টি না হওয়ায় মুর্শিদাবাদ জেলার চাষিদের এখন মাথায় হাত। বৃষ্টির অভাবে এ বছর এখনও পর্যন্ত পাট পচানোর জন্য খালবিল, নয়ানজুলিতে পর্যাপ্ত জল জমেনি। ফলে মাঠের পাট শুকোচ্ছে মাঠেই। জল মজুত করে পচানো পাটের দামও মিলছে না। একই রকম গিয়েছে গত বছরও। দু’ বছরের লোকসানের বোঝায় হাঁসফাঁস দশা পাটচাষির।
প্রায় এক ছবি নদিয়া জেলারও। মে-জুন মাসে পর্যাপ্ত বৃষ্টি বলেও গত জুলাই মাসে সারা ভারতে সবথেকে কম বৃষ্টি হয়েছিল এই জেলায়। প্রতি বছর যেখানে জুলাই মাসে ২১৮ মিলিমিটার বৃষ্টি হয়, সেখানে এই বছর মাত্র ১০৮ মিলিমিটার বৃষ্টি হয়েছে এই মাসে।
মুর্শিাদাবাদ জেলা কৃষি দফতর সূত্রে জানা গিয়েছে, পাট পচানোর জন্য জুলাই ও অগস্ট মাসে পর্যাপ্ত বৃষ্টিপাতের প্রয়োজন। গত ২০১১ সালের জুলাই ও অগস্ট মুর্শিদাবাদ জেলায় মোট ৬৩৮.৮ মিলিমিটার বৃষ্টি হয়। ২০১২ সালের ওই দু’মাসে বৃষ্টিপাতের পরিমাণ কমে দাঁড়ায় ৩৮৬ মিলিমিটার। এই বছর তার পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ৩০৯ মিলিমিটারে। মুর্শিদাবাদ জেলার মুখ্য কৃষি আধিকারিক শ্যামল মজুমদার বলেন, “এ বছর জেলার ৫টি মহকুমার মধ্যে সব চেয়ে কম বৃষ্টিপাত হয়েছে বহরমপুর, ডোমকল ও লালবাগ মহকুমায়। জেলায় এ বার এক লক্ষ দশ হাজার হেক্টর জমিতে পাটচাষ হয়েছে। সিংহভাগ চাষ হয়েছে ওই তিনটি মহকুমাতে। এখন পর্যন্ত শতকরা বড়জোর ৪৫ ভাগ পাট কেটে পচাতে দেওয়া হয়েছে।” স্বাভাবিক নিয়ম অনুাসারে ভাদ্র মাসের প্রথম সপ্তাহের মধ্যে জমির সব পাট কেটে নেওয়া হয়। শাখাপ্রশাখা গজিয়ে গিয়ে পাটগাছে ফুল-ফল দেখা দিলে পাটের গুনমান ও ফলন কমে যায়।
জলের অভাবে পড়ে রয়েছে পাট। ছবি: কল্লোল প্রামাণিক।
দৌলতাবাদ থানার নওদাপাড়ার পাটচাষি গোলাম গফ্ফার বলেন, “প্রতি আটি পাট পচানোর জন্য জলের ভাড়া গুনতে হচ্ছে ৫ টাকা। জমি থেকে গর্তে পাট বয়ে নিয়ে যাওয়ার জন্য মজুরি লাগছে ২০০ টাকা।” সিপিএমের কৃষকসভার মুর্শিদাবাদ জেলা নেতা আলাউদ্দিন মোল্লা বলেন, “পাট পচানোর জল নেই। পাটের ফলন নেই, দামও নেই। কুইন্টাল প্রতি পাটের দাম ২ হাজার টাকারও কম।” কংগ্রেসের কিষানসভার জেলা সভাপতি কাশেম আলি বলেন, “জলের অভাবে এখন পর্যন্ত চাষি সিকি ভাগ পাটই কাটতে পারেনি। জমিতেই শুকোচ্ছে পাট।”
নদিয়ার কৃষি দফতর সূত্রে খবর, রানাঘাট ও কল্যাণী মহকুমায় প্রায় ৯০ শতাংশ বৃষ্টিপাত হয়েছে। তাই সেখানে ৮৫-৯০ শতাংশ জমির পাট পচাতে পেরেছেন চাষিরা। কিন্তু তেহট্ট মহকুমায় ছবিটা ঠিক উল্টো। এখনও পর্যন্ত তেহট্টে বৃষ্টি হয়েছে ৭০ শতাংশ। ফলে পাট পচানোর ক্ষেত্রে সমস্যায় পড়েছেন চাষিরা। নদিয়া জেলার কৃষি অধিকর্তা অরুণ বসু বলেন, “মঙ্গলবার জেলায় ভাল বৃষ্টি হয়েছে। কিন্তু তেহট্ট মহকুমার অবস্থার বিশেষ পরিবর্তন হয়নি। এই মহকুমা ছাড়া জেলার অন্যত্র পাট চাষে তেমন সমস্যা নেই।”
পাটচাষের অর্ধেক জমিতে শ্রাবণ মাসের মাঝামাঝি থেকে শেষ সপ্তাহের মধ্যে পাট কেটে নিয়ে সেই জমিতে আমনধানের চাষ করা হয়। বৃষ্টির আকালের কারণে পাট পচানোর মতো জল না মেলায় এ বছর পাটগাছের গোড়ায় কাস্তের টানই পড়েনি। ফলে মেলেনি আমনধান চাষের জমিও।
সরকারি উদ্যোগে পাট পচানোর কোনও ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি কেন? কয়েকদিন আগে বহরমপুর সার্কিট হাউসে বসে রাজ্যের সেচমন্ত্রী রাজীব বন্দ্যোপাধ্যায় সাংবাদিক বৈঠকে বলেছিলেন, “কেবল সেচ দফতরই আছে, তা তো নয়! রয়েছে কৃষি দফতরও। পাটচাষির সমস্যা ও পাট পচানোর সমস্যার কথা তাঁদের বলেছি।” কৃষি দফতরের মুর্শিদাবাদ জেলার মুখ্য আধিকারিক শ্যামল মজুমদার অবশ্য বলেন, “পাট পচানোর জন্য সরকারি ভাবে কোনও ব্যবস্থার কথা এখন পর্যন্ত আমার জানা নেই। তেমন কোনও সরকারি নির্দেশ হাতে পাইনি।”

পুরনো খবর:



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.