ক্রিকেট মাঠে অস্ট্রেলিয়ানদের বিশ্রী আচরণ সম্পর্কে আমাদের একটা ধারণা আছে। ক্রিকেট-কেচ্ছা ঘাঁটতে বসলে বেশির ভাগ লোকের হয়তো সঙ্গে সঙ্গে মনে পড়ে যাবে, কয়েক দশক আগের টেস্ট ম্যাচে ডেনিস লিলি-র মাঠের মধ্যেই জাভেদ মিয়াঁদাদকে লাথি মারার সেই ন্যক্কারজনক ঘটনা! কিন্তু ওভালে গত সোমবার অ্যাসেজ সিরিজের শেষ দিন জনাকয়েক ইংল্যান্ড ক্রিকেটার যে কাণ্ড করেছে, সে রকম বিকৃত মানসিকতার প্রকাশ ক্রিকেট মাঠে কখনও দেখিনি! ম্যাচ শেষে অ্যান্ডারসন-ব্রড-পিটারসেন প্রমুখের পিচের মধ্যিখানে বিয়ার পান করে গণপ্রস্রাব!
এই কি ব্রিটিশ নব প্রজন্ম? ওই ইংরেজ ক্রিকেটাররা নাকি অ্যাসেজ জয়ের আনন্দে ওই কম্মোটি করেছে! বিশেষ আনন্দে বিরল কর্মকাণ্ড। বিশেষ আনন্দে আজকাল ইংরেজরা এ ধরনের কাজ করে বুঝি? দশ বছর আগেও ইংরেজ ক্রিকেটারদের মধ্যে এত অধঃপতন দেখিনি। ভাবা যায়! এরাই লক্ষ লক্ষ ক্রিকেট অনুরাগীর চোখে সম্মাননীয়! এরাই পিটার মে, মাইক ব্রিয়ারলি, ডেভিড গাওয়ারদের উত্তরসূরি! ব্রিয়ারলিদের তুলনায় অ্যান্ডারসনরা প্রচুর বেশি পাউন্ডের মালিক সন্দেহ নেই। কিন্তু প্রকৃত শিক্ষাদীক্ষা ভীষণ রকম কম। সে জন্য কেবল ক্রিকেটটা ভাল খেলার জন্যই ধরাকে সরা জ্ঞান করে। ‘যা ইচ্ছে তাই করব’, ‘যা করেছি বেশ করেছি’ গোছের মানসিকতা।
মানছি ইংল্যান্ড ক্রিকেটারদের পিচের ওপর গণপ্রস্রাবের কোনও ভিডিও ফুটেজ নেই। নির্ভরযোগ্য কোন সাক্ষীও হয়তো খুঁজে পাওয়া যাবে না। কিন্তু ম্যাচ শেষে দল বেঁধে ইংরেজ ক্রিকেটাররা যে ওভাল মাঠের পিচের ওপর বসে বিয়ার পান করেছে তার ছবি তো টুইটারে ইংল্যান্ড দলের উইকেটকিপার ম্যাট প্রায়র নিজেই পোস্ট করেছে! যে কোনও খেলোয়াড়ের কাছে তার খেলার মাঠটা হল সবচেয়ে পবিত্র জায়গা। ধর্মীয় স্থানের সমান। ধর্মীয় স্থানে বসে নেশা করাও যায় কি?
স্বাভাবিক ভাবেই ক্রিকেটারদের তরফে ইসিবি প্রেস রিলিজ দিয়েছে। তাতেও খুব কায়দা করে পিটারসেনদের গণপ্রস্রাবের ব্যাপারটা উল্লেখ না করে বল্গাহীন জয়োৎসব পালনের কথা বলে তার জন্য ক্ষমা চাওয়া হয়েছে। পরিষ্কার চেষ্টা নিজেদের প্লেয়ারদের বাঁচানোর। এর পর হয়তো ওভাল মাঠের কর্তৃপক্ষের কাছেও ইসিবি ক্ষমা চেয়ে নেবে। বোঝানোর চেষ্টা চলবে তেমন কিছু ঘটেনি। যার আসল উদ্দেশ্য আইসিসি-র কাছ বার্তা দেওয়া যে, দয়া করে ব্যাপারটা নিয়ে বেশি ঘাটাঁঘাঁটি কোরো না।
কিন্তু নিজে একজন ম্যাচ রেফারি হিসেবে জানি, ওই ক’জন ইংরেজ ক্রিকেটারের ওপর আইসিসি তার কোড অব কন্ডাক্ট ইচ্ছে করলেই প্রয়োগ করতে পারে। এ ক্ষেত্রে আইসিসি-র চিফ এক্সিকিউটিভ অফিসার অ্যান্ডারসনদের বিরুদ্ধে ‘লেভেল টু’-র ২.২.১১ ধারায় প্রথমে একটা অভিযোগ আনতেই পারে। কোড অব কন্ডাক্টের এই ধারায় স্পষ্ট করে বলা আছে, ক্রিকেটারদের কোনও আচরণ যেটা ক্রিকেট খেলাটার স্পিরিটের পরিপন্থী অথবা খেলাটা অপমানিত হয়, সেটা ঘটালে সেই প্লেয়ারকে সংশ্লিষ্ট সিরিজের ম্যাচ রেফারি শাস্তি দিতে পারেন। সে ক্ষেত্রে দোষী ক্রিকেটারের পঞ্চাশ থেকে একশো শতাংশ ম্যাচ-ফি জরিমানা এবং একটি টেস্ট অথবা দু’টো ওয়ান ডে ম্যাচ নির্বাসন হবে।
উদাহরণ পেতে বেশি পিছনে তাকাতে হবে না। এই অ্যাসেজ সিরিজেই অস্ট্রেলিয়ার কোচ ডারেন লেম্যানের বিপক্ষের ক্রিকেটার সম্পর্কে কটূ মন্তব্যের জন্য কোড অব কন্ডাক্টের ‘লেভেল ওয়ান’ ধারায় ম্যাচ ফি-র কুড়ি শতাংশ জরিমানা করেছিল আইসিসি।
এখন দেখার, এ বার আইসিসি কী করে? এত দিন দেখে এসেছি ইংল্যান্ড, অস্ট্রেলিয়া, নিউজিল্যান্ড, দক্ষিণ আফ্রিকার বিরুদ্ধে আইসিসি খুব একটা কঠিন পদক্ষেপ নেয় না। আইসিসি-তে শ্বেতাঙ্গদের লোকবল খুব বেশি। সে কারণে দেখেছি ওরা শ্বেতাঙ্গ দেশগুলোর প্রতি সব সময় ভীষণ রকম নরম। যত কঠোর ভারত-পাকিস্তানের ক্ষেত্রে। তাই ইংরেজ ক্রিকেটারদের এই বিকৃত আচরণের পরেও যদি তাদের আইসিসি শাস্তি না দেয় আমি অন্তত অবাক হব না।
শাস্তি দেওয়া উচিত অবশ্যই। কিন্তু আইসিসি দেবে কি?
|
ক্ষমা চাইলেন পিটারসেনরা
সংবাদসংস্থা • লন্ডন |
গণপ্রস্রাব কাণ্ডে শেষ পর্যন্ত ক্ষমা চাইলেন ইংল্যান্ড ক্রিকেটাররা। তবে সরাসরি নয়। গণপ্রস্রাবের কথা উল্লেখ না করে ‘পাগলামির’ জন্য ক্ষমা চেয়েছেন তাঁরা। তাও দেশের ক্রিকেট বোর্ডের মাধ্যমে। এ দিনই ইংল্যান্ড ও ওয়েলস বোর্ডের তরফে প্রকাশিত হয়েছে বিজ্ঞপ্তি। বলা হয়েছে, “ক্রিকেট আমাদের সকলের প্রিয়। অ্যাসেজ জয়ের পর সারে, ওভাল বা কোনও ব্যক্তিবিশেষকেই অসম্মান করার উদ্দেশ্য আমাদের ছিল না। এটা মানতেই হবে উত্তেজনার এই সিরিজ জয়ের পর আনন্দটা আমাদের অনেকেই পাগলামির পর্যায়ে নিয়ে গিয়েছিল। তবে এই আনন্দ প্রদর্শনের জন্য কেউ আহত কিংবা দুঃখিত হয়ে থাকেন তার জন্য আমরা ক্ষমা চাইছি।”
|