সিরিয়ায় সামরিক অভিযান চালানোর আবেদন জানিয়ে ব্রিটেনের আনা একটি প্রস্তাব নিয়ে আজ রাষ্ট্রপুঞ্জের নিরাপত্তা পরিষদ ঐকমত্যে পৌঁছতে পারেনি। আমেরিকা ও ফ্রান্স প্রস্তাবটিকে সমর্থন করলেও পরিষদের অন্য দু’টি দেশ রাশিয়া বা চিনের তরফে ভেটো দেওয়ার সম্ভাবনা প্রবল। রাশিয়া মনে করে এখনও সামরিক অভিযানের মতো পরিস্থিতি তৈরি হয়নি। রাষ্ট্রপুঞ্জের মহাসচিব বান কি মুনও সিরিয়া সরকারকে আরও সময় দেওয়ারই পক্ষপাতী।
ব্রিটেনের প্রস্তাবটি সম্পর্কে রাষ্ট্রপুঞ্জে সিরিয়ার প্রতিনিধি এ দিন ক্ষোভ জানান। তাঁর বক্তব্য, তারা এর আগে তিন বার রাষ্ট্রপুঞ্জকে জানিয়েছেন, বিদ্রোহীরা রাসায়নিক অস্ত্র ব্যবহার করেছে। তখন কিন্তু আন্তর্জাতিক মহল আমল দেয়নি। যদিও মার্কিন ভাইস-প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন আজ ঠিক উল্টো কথাই বলেছেন। তাঁর দাবি, আসাদ সরকারই রাসায়নিক অস্ত্র প্রয়োগ করেছে সাধারণ নাগরিকদের উপরে। |
রাসায়নিক হানায় আক্রান্ত এক মহিলাকে জিজ্ঞাসাবাদ করতে
হাসপাতালে রাষ্ট্রপুঞ্জের প্রতিনিধি দল। বুধবার জামালকায়। ছবি: রয়টার্স। |
সিরিয়ায় রাষ্ট্রপুঞ্জের বিশেষ দূত লাখদর ব্রাহিমি এ দিন তাৎপর্যপূর্ণ ভাবে বলেন, বিদ্রোহ দমনে বাশার আল-আসাদ সরকার ‘এমন কিছু’ ব্যবহার করেছিল যাতে শ’য়ে শ’য়ে মানুষ মারা গিয়েছেন। ইঙ্গিতটা রাসায়নিক অস্ত্রের দিকেই তবে, গণবিধ্বংসী ওই অস্ত্রের নাম নেননি তিনি। দামাস্কাসে তদন্তকারী রাষ্ট্রপুঞ্জের দলও রাসায়নিক অস্ত্র ব্যবহার হয়েছে কি না তা নিয়ে চূড়ান্ত রিপোর্ট দেয়নি। তবু ব্রাহিমির ঘোষণা সিরিয়ায় আন্তর্জাতিক সামরিক অভিযানের সম্ভাবনা বাড়িয়ে তুলবে বলেই মনে করছেন কূটনীতিকরা। মার্কিন সেনা যার প্রস্তুতিও সেরে ফেলেছে বলে গত কালই ঘোষণা করেছেন সে দেশের প্রতিরক্ষাসচিব চাক হেগেল।
তবে ইরাকে সাদ্দাম হুসেনকে বা আফগানিস্তানে তালিবানি শাসন হটাতে যেমন পুরোদস্তুর যুদ্ধই ঘোষণা করেছিল জর্জ ডব্লিউ বুশের রিপাবলিকান প্রশাসন, ডেমোক্র্যাটিক বারাক ওবামারা সে পথে না হেঁটে ‘সীমিত অভিযান’-এর পথ নিতে পারেন। মার্কিন প্রশাসন ও সংবাদমাধ্যম সূত্রেও ইঙ্গিত মিলেছে যে এখনই হামলা নয়, বরং সিরিয়ায় আসাদ-সরকার ফের যাতে রাসায়নিক হামলা করতে না পারে, সে দিকেই লক্ষ রাখবে তাদের সেনাবাহিনী। আসাদকে গদিচ্যুত করা কিংবা জোর করে আলোচনায় বসানোর কথা ভাবছে না মার্কিন প্রশাসন।
সিরিয়া নিয়ে আজ ফের মার্কিন প্রেসিডেন্টের সঙ্গে ফোনে কথা বলেন ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী ডেভিড ক্যামেরন। বিষাক্ত গ্যাস হানার অভিযোগ ওঠার পরে এই নিয়ে দ্বিতীয় বার কথা হল দুই রাষ্ট্রনেতার। ডাউনিং স্ট্রিটের তরফে বলা হয়েছে, ওবামা সিরিয়া নিয়ে ঠিক কী ভাবছেন, তা নিয়ে কথা হয়েছে। পরে ক্যামেরন এক বিবৃতিতে বলেন, “এখনও সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়নি। আমরা বা অন্য কোনও দেশ কোনও পদক্ষেপ করলে, তা আইন মেনেই করা হবে।” রাষ্ট্রপুঞ্জের বিশেষ দূত লাখদর ব্রাহিমিও আজ বলেন, অজানা কোনও (রাসায়নিক) বস্তুর কারণে দামাস্কাসের শহরতলি এলাকায় শ’য়ে শ’য়ে মানুষের মৃত্যু হয়েছে। তবে আসাদ-সরকারের উপরে হামলা চালানোর আগে রাষ্ট্রপুঞ্জের সম্মতি নিতে হবে।
রাষ্ট্রপুঞ্জের তদন্তকারী দল আজ ফের তদন্ত চালায় দামাস্কাসে। ছ’টা গাড়ি করে তারা ঘুরে দেখে শহরের আনাচে-কানাচে। তবে ঠিক কোথায় কোথায় তারা গিয়েছিল, তা গোপনই রেখেছে রাষ্ট্রপুঞ্জ। |