সিরিয়ায় হামলা চালানোর জন্য পুরো দস্তুর তৈরি মার্কিন সেনা। অপেক্ষা শুধু প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামার নির্দেশের। মঙ্গলবার এক ব্রিটিশ দৈনিককে এমনটাই জানালেন মার্কিন প্রতিরক্ষাসচিব চাক হেগেল। বুধবারের গণহত্যার জন্য গত কালই বিদেশসচিব জন কেরি কড়া ভাষায় নিন্দা করেছিলেন আসাদ সরকারের। একই সঙ্গে হুঁশিয়ারিও দিয়েছিলেন, “আন্তর্জাতিক আইন ভাঙলে তার ফল পেতেই হবে।” তার পর দিনই প্রতিরক্ষাসচিবের এমন মন্তব্যের পরে অনেকেই মনে করছেন, অল্প কয়েক দিনের মধ্যেই সিরিয়ার হানা দিতে পারে আমেরিকা ও তার মিত্র দেশগুলির সম্মিলিত বাহিনী।
এ দিন মার্কিন প্রতিরক্ষাসচিব জানান, হামলার রসদ ইতিমধ্যেই সুবিধাজনক জায়গায় পাঠানো হয়েছে। বাকি প্রস্তুতিও সারা। হেগেলের কথায়, “তিনি (ওবামা) সব কিছু খতিয়ে দেখেছেন।....আমরা প্রস্তুত।” |
সিরিয়ায় পাড়ি দিতে পারে আমেরিকার এমনই বিমানবাহী রণতরী। |
ওবামা-প্রশাসনের তরফে গত কালই প্রথম মুখ খুলেছিলেন মার্কিন বিদেশসচিব জন কেরি। জানিয়েছিলেন, সিরিয়ায় রাসায়নিক অস্ত্র নিয়ে যে হামলা চালিয়ে নির্বিচারে গণহত্যা করা হয়েছে, তা ‘অনস্বীকার্য’। এবং সেই জঘন্য অপরাধকে ঢাকা দিতে অন্যায় পথ বেছে নেওয়ার জন্য সিরিয়ার আসাদ সরকারের দিকেই আঙুল তুলেছিলেন তিনি। এ হেন দাবির সপক্ষে তাঁর মূল অস্ত্র, মার্কিন গোয়েন্দা দফতরের জোগাড় করা তথ্যপ্রমাণ। যা শীঘ্রই আমজনতার সামনে তুলে ধরা হবে বলে জানিয়েছেন কেরি। তার জবাবে মঙ্গলবার সিরিয়ার বিদেশমন্ত্রী ওয়ালিদ আল-মোয়াল্লেম বলেন, “নিজেদের বাঁচানোর অস্ত্র আমাদের কাছে আছে। আমরা সবাইকে চমকে দেব।” একই সঙ্গে কেরিকে ‘চ্যালেঞ্জ’ ছুঁড়েছেন ওয়ালিদ। রাসায়নিক হানার যে অকাট্য প্রমাণ পেয়েছেন কেরি, তা ভুয়ো বলে দাবি ওয়ালিদের।
সিরিয়ায় হানার প্রস্তুতি নিয়ে হেগেলের দাবির প্রমাণ ইতিমধ্যেই মিলেছে। পূর্ব ভূমধ্যসাগরে সক্রিয়তা বাড়িয়েছে মার্কিন নৌসেনা। চারটি ক্রুজ ক্ষেপণাস্ত্র-বহনকারী জনযান-সহ ক্ষেপণাস্ত্র ছুঁড়তে সক্ষম ডুবোজাহাজের অবস্থান পরিবর্তন করেছে তারা। আকাশপথে হামলা চালাতে তুরস্ক এবং সাইপ্রাসের বিমানঘাঁটিও ব্যবহার করা হতে পারে বলে ইঙ্গিত মিলেছে। গত কালই সাইপ্রাসের বিমানঘাঁটিতে সক্রিয়তা বাড়িয়েছিল ব্রিটিশ নৌসেনা। মঙ্গলবার জর্ডনে বিশ্বের অন্যতম শক্তিধর দেশগুলির সামরিক প্রধানদের বৈঠক বসে। আন্তর্জাতিক মহলের একাংশের ধারণা, সিরিয়ায় সেনা হামলার ‘ব্লু প্রিন্ট’ তৈরি হয়েছে ওই বৈঠকে। যদিও জর্ডন সূত্রে তা মানা হয়নি। অসমর্থিত সূত্রে খবর, সিরিয়ায় হামলার অন্যতম কেন্দ্রগুলিকে চিহ্নিত করার প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে। এত দিন সেগুলিকে নিয়ে প্রকাশ্যে আমেরিকা কিছুই বলেনি। হেগেলের মঙ্গলবারের মন্তব্যের পর ছবিটা অনেকটাই পরিষ্কার। |
মস্কোর উপকণ্ঠে আন্তর্জাতিক উড়ান মহড়া। |
তবে ওবামা-প্রশাসনের অন্যতম প্রতিনিধি হিসেবে কেরি এবং হেগেল যতই সেনা হামলার ইঙ্গিত দিন না কেন, সিরিয়া প্রশ্নে এখনও নীরব মার্কিন প্রেসিডেন্ট। সিরিয়ায় হামলা নিয়ে তিনি কবে নির্দেশ দেবেন, সেটাই এখন সবচেয়ে বড় প্রশ্ন। বুধবার আমেরিকা-রাশিয়া যে বৈঠক হওয়ার কথা ছিল, তা পিছিয়ে আগামী সপ্তাহে করার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন ওবামা। অর্থাৎ আগামী সপ্তাহে আমেরিকার ‘কম্যান্ডার-ইন-চিফ’ বাইরে থাকবেন। পাশাপাশি, এখনও নিজেদের তদন্ত শেষ করতে পারেনি রাষ্ট্রপুঞ্জের বিশেষজ্ঞ দল। দামাস্কাস থেকে তাঁরা বেরোনোর আগে সেখানে আমেরিকা-ব্রিটেন হামলা চালাবে, এমন সম্ভাবনা কমই।
এ দিকে, রাষ্ট্রপুঞ্জের পর্যবেক্ষক দল গত কালের হানার পরে দ্বিতীয় দিন নির্বিঘ্নেই আইন তারমা এবং জোবার ঘুরে দেখেছে। রাষ্ট্রপুঞ্জ সূত্রে খবর, ইতিমধ্যেই মূল্যবান নমুনাও জোগাড় করেছেন তাঁরা। সে নমুনা যে তিনটি দেশে পরীক্ষার জন্য পাঠানো হবে, তার মধ্যে ভারত অন্যতম। ভারতের গ্বালিয়রের ডিফেন্স রিসার্চ অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট এসট্যাব্লিশমেন্টে পরীক্ষার আবেদন জানিয়েছে রাষ্ট্রপুঞ্জ। বিদেশমন্ত্রকের সবুজ সঙ্কেত মিললেই হবে পরীক্ষা। কিন্তু সিরিয়ার সঙ্গে কূটনৈতিক সম্পর্ক বিঘ্নিত হবে তা ভেবেই এ বিষয়ে এখনও প্রতিক্রিয়া জানায়নি বিদেশ মন্ত্রক।
তদন্তের রিপোর্ট তৈরি হতে এখনও ঢের দেরি। তার আগেই অবশ্য রাসায়নিক অস্ত্র হানার প্রমাণ যোগাড় করে ফেলেছে আমেরিকা। তবে গৃহযুদ্ধে ইতি টানতে পুরোদস্তুর হামলা নাকি আসাদ সরকারকে খালি সতর্ক করতে বিক্ষিপ্ত ভাবে ক্ষেপণাস্ত্র ব্যবহার করা হবে, তা এখনও স্পষ্ট নয়। |