রাজবাড়ির মনসাপুজো
জলপাইগুড়ি রাজবাড়ির মনসা পুজোর সঙ্গে জড়িয়ে এই শহরের ঐতিহ্য। প্রচলিত ধারণা, রাজা শিষ্য সিংহ ১৯১৫ সালে রাজ্য প্রতিষ্ঠার সময় থেকে রাজবাড়িতে মনসাপুজো শুরু করেন। সেই সময় রাজবাড়ির মনসাপুজো হত রীতিমতো জাঁকজমক করে। এক মাস আগে বিভিন্ন মহলে প্রজাদের কাছে পেয়াদা পাঠিয়ে নির্দেশ দেওয়া হত পুজোর উপকরণ পাঠানোর। সে নির্দেশ পালিতও হত। প্রজারা উপস্থিত থাকতেন পুজোতে। পুজোর উপকরণকে বলা হত বেদামী। বলিদান প্রথা চালু ছিল। পুজোর তিন দিন রাজবাড়ি চত্বরে মেলা বসত। পুজো শেষে কলার ভেলায় প্রতিমা চাপিয়ে বিসর্জন দেওয়া হত রাজবাড়ির পুকুরে।
পুজোর কাজ এবং প্রতিমা নির্মাণের কাজ চলত বংশপরম্পরা ধরে। সে সময় স্পেশ্যাল ট্রেন চলত হলদিবাড়ি থেকে। সময়ের সঙ্গে সঙ্গে বদলেছে রাজবাড়ির পুজোও। এখন পুজোর জন্য রয়েছে আলাদা জায়গা। উপকরণ জোগাড় করেন রাজবাড়ির লোক। জরুৎকারু মুনির ডান দিকে থাকেন পদ্মা। বাঁ দিকে গৌরবর্ণা নেতা। বড় মনসা হিসেবে পুজো করা হয় নেতাকে। পদ্মাকে পুজো করা হয় ছোট মনসা হিসেবে। এখন শুধু পুজোর প্রথম দিনে বলি দেওয়া হয়পাঁঠা, আখ, হাঁস বা পায়রা। পুজোয় এখনও মেলা বসে। সে মেলায় আসেন প্রচুর মানুষ। রাজবাড়ির মনসাপুজো আর মেলা যেন চুপিসারে শোনায় ভুলে যাওয়া এক ইতিহাস। সেই ইতিহাস বদলে যাওয়া সময়ের।
এই ভাবেও ফিরে আসা যায়
স্কুলে সরস্বতীর অঞ্জলি দিয়ে সে বার আর বাড়ি ফেরেনি অঞ্জনা। দিলরুবা প্রেমের গ্রিটিংস পেয়ে আজানের মাঠে ফিরে যায়নি আর। আর অন্য দিকে ফুলি, টগররা কাঁটাতার পেরিয়ে অন্ধকারে আরও অন্ধকার হয়েছে বারবার। যাদের সাতচল্লিশ, বাহাত্তর কিংবা বারোর মধ্যে কোনও বেসিক ফারাক নেই। তবু থার্ডটাইম মেয়ে হবার পর আর শাঁখ বাজেনি। ভাগচাষির উঠোন জুড়ে কে যেন মন-খারাপ ছিটিয়ে দিয়েছিল শুধু। তাই এ বার শ্রাবণে মিসিংয়ের দশ বছর পেরোনোর পরও বাবা-মা স্মৃতিকে মনে রাখতে পারেনি, চায়ও না। সে দিন অবাক করে আত্মজার হারিয়ে যাবার পরও কোনও মিসিং ডায়েরি হয়নি। এ ভাবেই দিন দিন হারিয়ে যাচ্ছে গ্রাম শহরের মিনিরা। যাদের বাক্যে বলা বারণ, তারা ‘স্টেটলেস, দেশহারা’। কিন্তু একদিন সেই নিরুদ্দেশের ঘরেই চাবি হাতে এগিয়ে এলেন রহমত সূরজ। যার জানালার পর্দাও আড়াল করতে পারেনি কাঁটাতার, যার চোখের সামনে রাত শাসন করে জিরো পয়েন্ট সূরজ দাশই ও পার বাংলা থেকে তাজনুর, ইয়াসিন, ভবেশ, জেসমিনাদের ঘর চিনিয়ে দিল। রাত যত গভীর হয়েছে, সূরজও তার গভীরতা বাড়িয়ে আলো হাতে ছুটে গেছে রেসকিউয়ে। ভেবেছিল কবিতা লিখে পেয়ারার ডালে পারিজাত ফোটাবে, তা হয়নি। বরং চারপাশের টিন এজারদের বিয়ে রুখে ওদের সীমান্ত পেরোনো আঁচলে দিয়ে চলেছে বরেন্দ্রভূমির জুঁই, কপালে অখ্যাত ঝিঙেফুলের পরশ। এ ভাবেই কোনও একদিন স্বাধীনতার আগের রাতে ২৫২ কিমি সীমানা ঘেরা জেলায় ভোর হল। দরজা খুলে দিল স্পার (SPAR)।
১৪ অগস্ট জন্ম নিল সোসাইটি ফর পার্টিসিপেটরি অ্যাকশন অ্যান্ড রিকালেকশন। হারিয়ে যাওয়া ভয়ের সঙ্গে রাত্রিটা প্রাসঙ্গিক বলেই সে দিন সূরজ পাশে ছিল, আজও আছে। মাত্র ছয় জোড়া হাত নিয়েই সে দিন নারী ও শিশু পাচারে প্রাচীর তুলে দিয়েছিল কেউ। কখনও সিকিম থেকে বন্ডেড লেবার তেরোর গোপাল, আবার প্রেমের ফাঁদপাতা ভুবনে উধাও বন্যাকে হরিয়ানার রেডলাইট এরিয়া থেকে ফিরিয়ে সেলাই মেসিন কিনে দিয়েছে স্পার। শিশুর সীমানা নেই। ওরা জানে না কতটা রেখা দীর্ঘ হলেও চক ফুরোবে না কোনও দিন। তবু চলে দীর্ঘতর হাত ঘোরানোর খেলা। আর এ ভাবেই আনমনা আঠারো কাঁটাতার পেরোনোকে মায়ের কোলে ফিরিয়ে দিয়েছে স্পার। সূরজের ইচ্ছায় বাংলাদেশ হাইকমান্ডকে লেখা সেই আরজির চিঠি আজ ইতিহাস, আইকন দক্ষিণ দিনাজপুরের! কেননা উদ্যোগ উন্মুক্ত হলে এমনই হয় বারবার। আর তখন প্রবল ঝড়েও ঝাউফুল ঝরে পড়ে না। সুরজের হাত ধরে নেমে আসে মাটিতে। নিশ্চিন্তে ঘুমিয়ে পড়ে করপুটে। সংলাপ লিখলে একটা আস্ত চিত্রনাট্য হয়ে যেত। প্রয়োজন হয়নি। কারণ আলো-আইকন সবটাই সূরজের মূর্ত। পাশেই নারী ও শিশুকল্যাণ দফতর। রয়েছে রিহ্যাব প্যাকেজ। স্বীকৃতি নয়, ফিরে আসা এক এক জনকেই মেডেল মনে হয় ওর আজ। যা পরিয়ে দেওয়া যায় না, পরে নিতে হয়। বিরল কিনা সময়ই বিচার করবে। কিন্তু সব কিছুকে সরিয়ে দুর্গমতাই যার হাওয়াই চপ্পল, রাতজাগা যার ঘুমের অভ্যেস, সেখানে কোনও রেফারেন্সই অবান্তর। শুধু ভাইফোঁটার দিন একশো বোনের ফোঁটায় হোমে বসে হোলিটা এগিয়ে আসে সূরজের লাইফলাইনে। সবেবরাত-শরতকে মিলিয়ে দিল নো ম্যানসল্যান্ড। সূরজের নো ম্যানসল্যান্ড, নোল্যান্ডসওর আলো কাঁটাতার মানে না। এখানে প্রহরা অসম্ভব, অবাস্তব!
লেখা: সন্দীপন নন্দী

মনের মতো স্পোর্টস লাইব্রেরি
সালটা ১৯৮৩। ক্রিকেটার পঙ্কজ সাহা ভিজিটার’স বুকের পাতায় লিখলেন, জে ওয়াই সি সি স্পোর্টস ক্লাবের পুরস্কার বিতরণী উৎসবে এসে আমি খুব আনন্দ পেয়েছি। আমার সবথেকে বেশি ভাল লেগেছে এখানকার লাইব্রেরি। আমার মনে হয় ইয়ং প্লেয়ারদের এই সব খেলার বইগুলি খুব উপকারে লাগবে।
শুধু কি পঙ্কজ সাহা! শৈলেন্ন মান্না, মেওয়ালাল, চুনী গোস্বামী, পি কে ব্যানার্জির মতো ক্রীড়াব্যক্তিত্বদের কাছ থেকে মর্যাদা পেয়ে এসেছে জলপাইগুড়ি ইয়ং কালচারাল ক্লাব স্পোর্টস লাইব্রেরিটি। এটি গড়ে ওঠে ১৯৮২ সালে। প্রতিষ্ঠা-পুরুষ শহরের বিশিষ্ট নাগরিক অলক মুখোপাধ্যায়। খেলাধুলো সম্পর্কিত পাঁচ শতাধিক বইয়ের সংগ্রহ রয়েছে। বইগুলি ফুটবল, ক্রিকেট থেকে হকি, জুডো, ক্যারাটে, গল্ফ, তাস, দাবার দুনিয়াকে চিনিয়ে দেয়। ইতিহাস থেকে বিজ্ঞান, নিয়মকানুন, বিরল অভিজ্ঞতার স্মৃতির মতো নানা ধরনের লেখাজোখা রয়েছে পাতায় পাতায়।
রয়েছে ভারতীয় ফুটবলের ইতিহাস, স্পোর্টস গাইড, জিমন্যাস্টিক অ্যান্ড মুভমেন্ট, খেলাধুলার নিয়মকানুন, হকির নিয়ম ও আম্পায়ারিংয়ের মতো বইগুলি। হাতে তুলে নিতে পারেন ফুটবলের অ্যালবাম, ওরিয়েন্ট লংম্যানের হর্স রেসিং, এম জে আকবর সম্পাদিত দ্য অলিম্পিক্স, কল্যাণ মুখোপাধ্যায়ের লেখা ক্রীড়বিজ্ঞান, রোনাল্ড হাটকিনসন -এর যোগা এ ওয়ে অফ লাইফ, জন আল্ট সম্পাদিত দ্য অক্সফোর্ড কম্পেনিয়ন টু স্পোর্টস অ্যান্ড গেমস, ভিক্টর রাসিয়েস প্রনার সমাজতান্ত্রিক দেশে খেলাধুলা, স্পোর্টস ফটোগ্রাফির মতো বই। গ্রান্থাগারটি ক্রীড়ামোদীদের অনেক কৌতূহল মেটানোর পাশাপাশি খেলাখুলার সঙ্গে জড়িত ব্যক্তিদের অনেকটা পথ এগিয়ে যেতে সাহায্য করবে।
লেখা: অনিতা দত্ত



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.