কেন্দ্র-রাজ্য দ্বন্দ্ব মেটাতে আসরে নারায়ণন
লোকসভা নির্বাচনের আগে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সরকারের সঙ্গে মনমোহন সিংহ সরকারের সংঘাত ক্রমশ চরমে উঠছে। শুধু গঙ্গা-পদ্মার ভাঙন নয়, নগরোন্নয়ন থেকে শুরু করে নয়াচরের বিদ্যুৎ কেন্দ্র, জঙ্গলমহল থেকে জাতীয় সড়ক রক্ষণাবেক্ষণের মতো প্রায় এক ডজন বিষয় নিয়ে দু’পক্ষের বিরোধ ক্রমশ বাড়ছে। কেন্দ্রের সরকারের সঙ্গে মমতার সরকারের এই বিরোধে মধ্যস্থতাকারীর ভূমিকা পালন করতে এ বারে উদ্যোগী হয়েছেন রাজ্যপাল এম কে নারায়ণন। তিনি মনমোহন-সরকারের সঙ্গে কথা বলছেন। মুখ্যমন্ত্রীও রাজভবনে গিয়ে রাজ্যপালের সঙ্গে এই সব বিষয়ে আলোচনা করে এসেছেন।
কিন্তু রাজ্যপালের পক্ষে কি এই বিবাদ মেটানো সম্ভব হবে? আনুষ্ঠানিক ভাবে তিনিই রাজ্যে কেন্দ্রের প্রতিনিধি। রাষ্ট্রপতি প্রণব মুখোপাধ্যায়ের সঙ্গে রাজ্যের সমস্যাগুলি নিয়ে কথাও বলছেন তিনি। রাখীপূর্ণিমার দিন রাজভবনে গিয়েছিলেন মুখ্যমন্ত্রী। সেখানে রাজ্যপালের সঙ্গে তাঁর এই বিষয়গুলি নিয়ে বিশদে আলোচনা হয়েছে। নারায়ণন আগেও রাজ্যের ঋণের বোঝা নিয়ে কেন্দ্রের সঙ্গে কথা বলেছিলেন। কিন্তু ফল মেলেনি। এ বারে কি ফল মিলবে?
মমতার সরকার ক্ষমতায় আসার পর থেকেই কেন্দ্রের সঙ্গে টানাপোড়েনের শুরু। তখন প্রধান বিষয় ছিল রাজ্যের ঋণের বোঝা কমাতে বিশেষ আর্থিক প্যাকেজ এবং মোরাটোরিয়ামের দাবি। রাজ্যের সেই দাবি এখনও পূরণ হয়নি। মুখ্যমন্ত্রী এবং রাজ্যের অর্থমন্ত্রী অমিত মিত্রের বক্তব্য, রাজ্য থেকে কর বাবদ কেন্দ্র যে আয় করছে, সেই অর্থ রাজ্যকে দেওয়া হচ্ছে না। যখন তৃণমূল কেন্দ্রে সরকারের শরিক ছিল, তখনও এই বিরোধের ফয়সালা হয়নি। তৃণমূলের আরও অভিযোগ, মমতা রেলমন্ত্রী থাকার সময় রাজ্যের জন্য যে সব প্রকল্প ঘোষণা করেছিলেন, সেগুলিতে এখন আর অর্থ বরাদ্দ করা হচ্ছে না। এর মধ্যেই আজ গঙ্গা-পদ্মার ভাঙন রুখতে কেন্দ্রীয় সাহায্যের দাবি জানিয়ে লোকসভায় সরব হয়েছেন তৃণমূল সাংসদ সৌগত রায়।
বাম জমানাতেও দিল্লির সঙ্গে রাজ্য সরকারের এই বিরোধ দেখেছেন এ রাজ্যের মানুষ। মাসুল সমীকরণ নীতির ফলে পূর্বাঞ্চলের বঞ্চনার অভিযোগ নিয়ে বামেরা দীর্ঘদিন ধরে সওয়াল করেছেন। যুক্তরাষ্ট্রীয় কাঠামোয় কেন্দ্র-রাজ্য সম্পর্কে রাজ্যের জন্য বেশি ক্ষমতার দাবি জানিয়ে সিপিএমের দলিলও তৈরি হয়েছে। এখন তৃণমূল জমানাতেও কার্যত তারই পুনরাবৃত্তি দেখছেন রাজ্যবাসী। কেন্দ্রীয় সরকার অবশ্য মমতার সরকারের দাবি মানতে নারাজ। রাজ্যের জন্য কেন্দ্রীয় আর্থিক সহায়তার প্রশ্নেও কোনও বৈষম্য করা হচ্ছে না জানিয়ে অর্থমন্ত্রী পি চিদম্বরম বলেন, “কেন্দ্রীয় সরকার রাজ্যগুলিকে যে অর্থ দেয়, তা ত্রয়োদশ অর্থ কমিশনের সুপারিশ মেনেই দেওয়া হয়। পশ্চিমবঙ্গের মতো ঋণগ্রস্ত রাজ্যগুলির জন্য বিশেষ কিছু করা যায় কি না, তা চতুর্দশ অর্থ কমিশনকে খতিয়ে দেখতে বলা হয়েছে।” কেন্দ্রের দাবি, গ্রামীণ উন্নয়নেও কোটি কোটি টাকা রাজ্যের জন্য বরাদ্দ করা হচ্ছে। কেন্দ্রীয় গ্রামোন্নয়ন মন্ত্রী জয়রাম রমেশ বারবারই বার্তা দিচ্ছেন, উন্নয়নের প্রশ্নে রাজনীতির রং দেখা হবে না।
কেন্দ্র-রাজ্য বিরোধিতার তালিকায় আর্থিক প্যাকেজের পাশাপাশি গত দু’বছরে আরও বহু বিষয় যোগ হয়েছে। তার মধ্যে গোর্খাল্যান্ড, স্থল সীমান্ত চুক্তি বা জঙ্গলমহল থেকে কেন্দ্রীয় বাহিনী তুলে নেওয়ার মতো গুরুতর বিষয় যেমন রয়েছে, তেমনই
নয়াচরের বিদ্যুৎ কেন্দ্র বা ব্যারাকপুরে পানীয় জল সরবরাহর জন্য কেন্দ্রের বিভিন্ন মন্ত্রকের ছাড়পত্র পাওয়ার ক্ষেত্রে লাল ফিতের ফাঁসের সমস্যাও যোগ হয়েছে। মমতার অভিযোগ, গোর্খাল্যান্ড আঞ্চলিক প্রশাসন তৈরির জন্য ত্রিপাক্ষিক চুক্তি হলেও কেন্দ্র একতরফা ভাবে গোর্খা জনমুক্তি মোর্চার নেতাদের সঙ্গে কথা বলছে। মনমোহন-সরকার বাংলাদেশের সঙ্গে স্থল সীমান্ত চুক্তিতে সিলমোহর বসাতে চাইলেও মুখ্যমন্ত্রীর যুক্তি, ওই চুক্তি হলে পশ্চিমবঙ্গ যত জমি পাবে, হারাবে তার থেকে বেশি। তাই তাড়াহুড়ো না করে আগে স্থানীয় বাসিন্দাদের মত নেওয়া হোক। জঙ্গলমহল থেকে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রক বাহিনী তুলে নিতে চাওয়াতেও আপত্তি তুলেছে রাজ্য। প্রতিরক্ষা মন্ত্রকের সঙ্গেও একাধিক বিষয়ে মমতার সরকারের বিরোধ এখন তুঙ্গে। উত্তর ২৪ পরগনার ব্যারাকপুর থেকে কলকাতা ময়দান নানা বিষয়ে বিরোধ চলছে। ব্যারাকপুরের ক্যান্টনমেন্ট এলাকা দিয়ে জল সরবরাহের জন্য পাইপ বসাতে গিয়ে সমস্যায় পড়তে হয়েছিল রাজ্যকে। সেনাবাহিনীর অনুমতি মিলছিল না। এখনও সেই সমস্যা পুরোপুরি মেটেনি বলে রাজ্যের নগরোন্নয়ন দফতরের দাবি। যার ফলে জওহরলাল নেহরু নগর পুনরুজ্জীবন মিশনে টাকা পেতে সমস্যা হচ্ছে বলে অভিযোগ রাজ্যের। বায়ুসেনার অনুমতি না মেলায় ব্যারাকপুরে একটি জলাধার তৈরিতেও সমস্যা হচ্ছে। পঞ্চায়েত দফতরের অভিযোগ, গ্রামোন্নয়নের জন্য অর্থ দেওয়া হলেও তাতে নানা রকম শর্ত আরোপ করা হচ্ছে। আবার বাবুঘাট এলাকায় গঙ্গাপাড়ের সৌন্দর্যায়নের জন্য সেনাবাহিনীর ছাড়পত্র পেতে মমতাকে দিল্লি এসে প্রতিরক্ষামন্ত্রী এ কে অ্যান্টনির সঙ্গে বৈঠক করতে হয়েছে। এক সময় ময়দানের অধিকার নিয়ে মুখ্যমন্ত্রী বুদ্ধদেব ভট্টাচার্যকে কেন্দ্রের কাছে চিঠি লিখতে হতো। এখন স্বাধীনতা দিবসের প্যারেডে মুখ্যমন্ত্রী আঞ্চলিক সেনা-কর্তাদের কাছে ক্ষোভ প্রকাশ করছেন।
পরিকাঠামো ক্ষেত্রেও কেন্দ্রের অসহযোগিতার জন্য সমস্যায় পড়তে হচ্ছে বলে অভিযোগ রাজ্যের মন্ত্রীদের। রাজ্যের জাতীয় সড়কগুলির রক্ষণাবেক্ষণ নিয়ে জাতীয় সড়ক কর্তৃপক্ষের মনোভাবেও বিরক্ত রাজ্য সরকার। নয়াচরে পেট্রোরসায়ন তালুকের বদলে সেখানে বিদ্যুৎ প্রকল্প ও ইকো-পার্ক তৈরি করতে চাইছেন প্রসূন মুখোপাধ্যায়। তাতে পরিবেশ মন্ত্রকের ছাড়পত্র মেলেনি। মমতার পরিকল্পিত পর্যটন দফতরের বিভিন্ন প্রকল্পেও কেন্দ্রের ছাড়পত্র মিলছে না।
সব মিলিয়ে সংঘাতের আবহ। এই পরিস্থিতির মোকাবিলায় রাজ্যপাল কতটা সফল হন, সেটাই দেখার।

গেরোর ১২









১০
১১
১২

সাইবার-জনমতে জোর
ইউপিএ সরকারের বিরুদ্ধে সোশ্যাল মিডিয়ায় জনমত গড়ে তোলার ডাক দিলেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। মঙ্গলবার তৃণমূল ছাত্র পরিষদের সমাবেশে তিনি বলেন, “দিল্লিতে যে সরকার আছে, তারা রাজনীতির স্বার্থে দেশটাকে বেচে দিচ্ছে। যাদের প্রতিবাদ করা উচিত ছিল, তারা তা করছে না।” এই নিয়ে দলের ছাত্রদের সাইবার-জনমত গড়ে তোলার ডাক দিয়ে মমতা বলেন, “বাংলা থেকে দেশ বাঁচানোর ডাক দিন। আপনারা যারা যারা ফেসবুক, ইন্টারনেট, ই-মেল করেন, তাঁদের বলছি দেশের মানুষকে সংঘবদ্ধ করুন। এ দেশ যারা বিক্রি করে দিচ্ছে তাদের বিরুদ্ধে জনমত গঠন করুন।” মুখ্যমন্ত্রীর বক্তব্য প্রসঙ্গে কংগ্রেস নেতা মানস ভুঁইয়ার তির্যক মন্তব্য, “কংগ্রেস থেকেই ওঁর যে উত্থান, তা মমতা ভুলে গিয়েছেন নাকি! কংগ্রেসের সঙ্গে জোট করেই যে আপনি মুখ্যমন্ত্রী হয়েছেন, এটাও ভুলে গেলেন কি?”



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.