বিবেক দেবরায়-এর ‘দ্রুত বিচারের দৌড়ে পশ্চিমবঙ্গ পিছিয়েই’ (৭-৮) লেখাটি পড়লাম। কেন্দ্রীয় আইন মন্ত্রকের দেওয়া তথ্য অনুযায়ী আমাদের দেশে উচ্চ ও নিম্ন আদালতে প্রায় তিন কোটি মোকদ্দমা নিষ্পত্তির অভাবে অদ্যাবধি বকেয়া পড়ে আছে। এর মধ্যে কোনও কোনও মামলার বয়স তিন দশকেরও বেশি। এ নিয়ে বহু বার গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন দেশের প্রধান বিচারপতিসমেত অন্য বিচারপতিরা। ‘জমে থাকা মামলার সংখ্যায় বিশ্বে প্রথম’ তকমায় ভূষিত করা হয়েছে ভারতকে। স্মর্তব্য, বিচারপ্রার্থীদের সুবিচারপ্রপ্তি সুনিশ্চিত করতে আশ্বাস প্রদানের পাশাপাশি বিচারকদের শূন্য পদ পূরণ করার উপর প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিংহ সবিশেষ জোর দেওয়ার পরেও দেখা যাচ্ছে অব্যবস্থা সমানে ক্রিয়াশীল।
পশ্চিমবঙ্গে বিচারক, সাব-ডিভিশনাল জজ (জুনিয়র) ও ম্যাজিস্ট্রেটের সংখ্যা প্রয়োজনের তুলনায় অনেক কম থাকায় নিম্ন থেকে উচ্চ আদালতে ফয়সালা না-হওয়া মামলার সংখ্যা ২০ লক্ষাধিক। এর মধ্যে কয়েক যুগ আগে রুজু করা এমন মোকদ্দমাও আছে অদ্যাবধি যার শুনানিই শুরু হয়নি। পাশাপাশি লোকআদালতের কাজকর্মে স্থবিরতা দেখা দেওয়ায় আদালতের বাইরের মামলাগুলোও সত্বর মেটানো যাচ্ছে না। বিচারে দীর্ঘসূত্রিতার দরুন অগণিত দরিদ্র-নিম্নবিত্ত মক্কেলদের চূড়ান্ত হয়রানি এবং অবিচারের সম্মুখীন হতে হচ্ছে। রায় বেরোনোর আগেই অনেকে মারা গিয়েছেন। আবার রায়ের প্রতীক্ষায় বহু জনকে দীর্ঘ দিন জেলের ঘানি টানতে হচ্ছে। বিচারাধীন মামলার দ্রুত নিষ্পত্তিসাধনের উদ্দেশ্যে ১৯৯৯ সালের জুলাই মাসে তৎকালীন কলকাতা হাইকোর্টের প্রধান বিচারপতিকে প্রধান উপদেষ্টা করে এ রাজ্যে ২৫ সদস্যের একটা কমিটি গঠন করা হয়েছিল। ১৪ বছর বাদেও দেখা যাচ্ছে, বিচারকের অভাবে উচ্চ থেকে নিম্ন আদালতগুলিতে এক অস্বাভাবিক পরিস্থিতির উদ্ভব হয়েছে।
বিশেষ ধরনের কিছু মামলার দ্রুত ফয়সালার জন্য কয়েক বছর আগে ভারতে প্রবর্তিত হওয়া ‘প্লি বার্গেনিং কোর্ট’ বা তৃতীয় বিশেষ আদালত গত বছর দুর্গাপুজোর আগেই উত্তরবঙ্গের জলপাইগুড়িতে পশ্চিমবঙ্গে প্রথম চালু করে দিয়েছিল তৃণমূল সরকার। সেখানে বেশ কয়েকটি মোকদ্দমার নিষ্পত্তিও হয়েছে। এতে উৎসাহিত হয়েই রাজ্য আইন মন্ত্রক সব জেলাতেই আদালতের উপর মামলার চাপ লাঘব করতে তৃতীয় বিশেষ আদালত চালু করে দিয়েছে। আর এক ধাপ এগিয়ে রাজ্যের আইনমন্ত্রী বলেছেন, ‘এই কোর্টের বিশেষ সুবিধা হল, মামলার দ্রুত নিষ্পত্তি হয়। জেলা আদালতগুলির প্রচুর সময় বেঁচে যায়। চাপও কমে।’ সর্বোপরি, মুখ্যমন্ত্রী আশা প্রকাশ করেছেন, সারা রাজ্যে প্লি বার্গেনিং কোর্ট চালু হওয়ায় রাজ্যের জেলখানায় বিচারাধীন বন্দির সংখ্যা হ্রাস পাবে এবং আদালতে জমে-ওঠা মামলার সংখ্যা অনেক কমে যাবে। লোক আদালতের সঙ্গে তৃতীয় আদালতের তফাত হল, যে মামলায় অভিযুক্তের গ্রেফতার হওয়ার কথা এবং অপরাধী সাব্যস্ত হলে সর্বোচ্চ সাত বছরের কারাদণ্ড হতে পারে, সেই মামলারও সমাধান হতে পারে প্লি বার্গেনিং কোর্টে। এর পরেও দেখা যাচ্ছে, নিম্ন আদালতগুলির কাজকর্মের মূল্যায়নের মাপকাঠি এমনই অদ্ভুত যে, রফা করার পদ্ধতি চেয়ে মামলা চালু রাখার পদ্ধতির ওপরেই সবিশেষ জোর দেওয়া হয়। আর সেই কারণেই তৃতীয় আদালতের বিষয়ে উচ্চ ও নিম্ন আদালত আদৌ উৎসাহিত নয়। সেই সঙ্গে ব্যবহারজীবীরাও আপন স্বার্থে দীর্ঘ দিন ধরে মোকদ্দমা জিইয়ে রাখায় যাঁদের জন্য তৃতীয় বিশেষ আদালত, তাঁদের কাছে এর সুফল পৌঁছচ্ছে না।
মানসকুমার রায়চৌধুরী। কলকাতা-২৬
|
সম্প্রতি প্রয়াত ইতিহাসবিদ অধ্যাপক বরুণ দে সম্পর্কে বিভিন্ন প্রতিবেদন বেরিয়েছে। একটি কথা বিশেষ কোথাও দেখিনি। ১৯৭৮ সালে তিনি রাজ্য সরকারের জেলা গেজেটিয়ার্স দফতরের রাজ্য সম্পাদক হিসাবে কার্যভার গ্রহণ করেন। সেই সময় এই দফতরটি কর্মীর অভাবে ধুঁকছিল। তাঁরই প্রচেষ্টায় অর্থ দফতর নতুন ষোলোটি পদ মঞ্জুর করায় দফতরটির পুনর্জন্ম হয়েছিল বলা যায়। তার পরেই গেজেটিয়ার্স প্রকাশনার কাজে গতি এসেছিল। যত দূর মনে পড়ে, তিনি বছর তিনেক এই পদে কর্মরত ছিলেন। বর্তমান এবং অবসরপ্রাপ্ত কর্মীরা আজও তাঁর এই প্রয়াস শ্রদ্ধার সঙ্গে স্মরণ করেন।
শম্ভুনাথ মুখোপাধ্যায়। ধুকুড়িঝাড়া, দক্ষিণ চব্বিশ পরগনা |