|
|
|
|
|
লুঙ্গিতে লাস্যময়ী
সে আপনি যে পোশাকই পরুন না কেন!
অ্যাটিটিউডটাই আসল। পরামর্শ ঋতা ভিমানি-র |
|
গ্রুমিং বললে প্রথমেই কী মনে হয় আপনার? আপাদমস্তক সেজে যে ভাবে আমাদের নায়ক-নায়িকারা পার্টিতে যান, সেটা? তাঁদের পরিপাটি করা কেশবিন্যাস থেকে পেশাদার মেক আপ (যা তাঁরা নিজেরাই অবলীলায় করে ফেলেন) আর তাঁদের ডিজাইনার পোশাকআশাক? তাঁদের অ্যাটিটিউডের কথা কিন্তু না বললেই নয়।
হতে পারে এটা এক ধরনের গ্রুমিং। গ্রুমিংয়ের ব্যাপারে বলতে গেলে আত্মবিশ্বাসের কথা তো বলতেই হবে। আত্মবিশ্বাস দেখেই তো সবাই প্রশংসা করবেন আপনার। তাই আত্মবিশ্বাস গ্রুম করাটা খুব প্রয়োজন। সব সময় পজিটিভ থাকুন। কী ভাবে পোশাক পরছেন বা কী ভাবে নিজের স্টাইলিং করছেন, সেটা কিন্তু খুব গুরুত্বপূর্ণ একটা জিনিস। তবে একজন অভিনেতাকে সাধারণ মানুষরা কী ভাবে দেখছেন সেটাও কোনও অংশে কম গুরুত্বপূর্ণ নয়। সত্যি বলতে জনসাধারণ তাঁদের আশা-আকাঙ্ক্ষা, তাঁদের স্বপ্নগুলো একজন অভিনেতার অভিনয়ের মাধ্যমে পরদায় দেখতে পান।
কেন এ সব বলছি! হতে পারে আমি একজন পেশাদার যে প্রতিদিন কাজে দৌড়োয়। বা এক স্কুল শিক্ষক, যে পুরো পরিবারের খাবারদাবার বানিয়ে রেখে স্কুলে গিয়ে বাচ্চাদের নানা সংবেদনশীল মুহূর্তের মুখোমুখি হয়। বা আমি ঘরে থাকা এক গৃহবধূ, যার কাজ শুরু হয়, স্বামী অফিসে, ব্যবসার কাজে বা ইউনিভার্সিটি বেরিয়ে গেলে।
এই সব ছোটখাটো জায়গা থেকেই কিন্তু অ্যাটিটিউড গ্রুমিংয়ের বিষয়টা দরকারি হয়ে পড়ে।
গ্রুমিং জীবনের সর্বত্র। বাড়িতে নিজের স্বামী, শ্বশুর-শাশুড়ি থাকলে আপনি এক রকম ভাবে ব্যবহার করেন। সেটাও গ্রুমিং ছাড়া অন্য কিছু নয়।
এর মানে একটাই। সব সময় সতর্ক থাকতে হবে আপনাকে। অনেক গৃহবধূ আছেন, যাঁদের দেখবেন বাড়িতে নাইটি বা কাফতান পরে, এলোমেলো চুলে ঘুরে বেড়াচ্ছেন। জানতে চাইলে অজুহাত দেবেন ব্রেকফাস্ট বা লাঞ্চ রেডি করতে হয় তাঁকে, দৌড়োদোড়ি করে বাচ্চাদের স্কুলের জন্য তৈরি করতে হয়। তাঁর স্বামী অফিসে বা ব্যবসার কাজে যাবেন, তাই এত তাড়া থাকে যে চাইলেও কিছু করে উঠতে পারেন না।
যদি আপনি তরুণী গৃহবধূ হন, তা হলে একজোড়া ট্রাউজার্স আর স্মার্ট একটা টপ ঘরে পরে থাকুন। বা ঘুম থেকে উঠে চটজলদি স্নান সেরে নিয়ে পরে ফেলুন একটা লুঙ্গি। আর উপরে গলিয়ে নিন লম্বা একটা শার্ট বা কুর্তি। এর পর আরামসে দিনের কাজ শুরু করুন। রান্নাঘরে যান, বাচ্চাদের তৈরি করুন। আপনাকে দেখতেও যেমন মিষ্টি লাগবে, তেমনই সুন্দর একটা পরিবেশও তৈরি হবে। অবশ্য যদি শাড়ি পরে আপনার বেশি আরাম লাগে, তা হলে শাড়িই পরে নিন। |
|
চেন্নাই এক্সপ্রেস: লুঙ্গি স্টাইলে শাহরুখ-দীপিকা। |
আমার বন্ধু তাপসী যেমন একটা পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন শাড়ি পরে সব সময় টিপটপ থাকে। সকালে ওর কর্তা আর ভাসুরকে চা দেওয়া থেকে শুরু করে ছেলে-মেয়ে-বৌমা সবাইকেই এক এক করে অ্যাটেন্ড করে ও। সবাই বেরিয়ে গেলে বারান্দায় চায়ের কাপ আর পেপার নিয়ে বসে। সারাদিনের ব্যস্ততা শুরু হওয়ার আগে ওটাই ওর এক টুকরো অবসর।
অল্পবয়সিরা বাড়িতে পালাজো প্যান্টস পরতে পারে। খুব ক্যাজুয়াল পোশাক। আর আভিজাত্যও আছে। বাড়িতে কেউ এলে আপনাকে পালাজো প্যান্ট আর একটা সুন্দর টপে দেখলে তাদের ভাল লাগবেই!
ড্রেসিং সেন্সের আর একটা অসাধারণ নমুনা হতে পারে লুঙ্গি। বাড়িতে তো বটেই, পার্টিতেও অনায়াসে পরতে পারেন। যাঁরা হিন্দি ছবির ফ্যান, তাঁরা এত দিনে নিশ্চয়ই ‘চেন্নাই এক্সপ্রেস’ সিনেমায় ‘লুঙ্গি ডান্স’ দেখে ফেলেছেন। তবে ওই নাচে যে লুঙ্গিগুলো দেখিয়েছে, সেগুলোর কথা কিন্তু আমি বলছি না। আমি বলছি ফর্ম্যাল লুঙ্গি বা সারঙের কথা। আর আমার মনে হয় আপনারা বুঝতেই পারছেন এমন একটা রোজকার ব্যবহারের জিনিসের কথা আমি বলছি, যেটা ক্যাজুয়াল হতে পারে। আবার ফেব্রিকটা কী রকম, তার উপর নির্ভর করে যথেষ্ট আড়ম্বরপূর্ণও হতে পারে। আর অবশ্যই কী ধরনের টপ আপনি ম্যাচ করে পরছেন, সেটাও যথেষ্ট গুরুত্বপূর্ণ।
আমার মনে পড়ছে রীতু কুমার কী ভাবে ষাট-সত্তরের দশকে লুঙ্গিকে একটা খুব আকর্ষণীয় পোশাক হিসেবে জনপ্রিয় করে তুলেছিলেন। দুর্ভাগ্যবশত একটা ফ্যাশন নিয়ে আমরা কিছু দিন হইহই করি। পরে উত্তেজনা থিতিয়ে যেতেও বেশি সময় লাগে না। এ ক্ষেত্রেও একই ঘটনা ঘটেছিল। তবু, আর একবার ফিরে তো এল সেই ট্রেন্ড! আমার এক বন্ধু ওয়ার্ল্ড ব্যাঙ্কে কাজ করে আর সব সময়ই একটা
সারং আর ফর্ম্যাল টপ পরে ঘুরে বেড়ায়। সম্প্রতি আমাকে বলছিল
ওর কেনিয়া ট্রিপের গল্প। কী ভাবে প্লেন লেট করায় ওই বেড়ানোর পোশাকেই ওকে মিটিংয়ে যেতে হয়েছিল। সারঙের সঙ্গে ম্যাচ করে ও গলায় পরেছিল একগাছি মুক্তোর মালা। সেদিন মিটিংয়ে কিন্তু ওই ছিল ‘বেস্ট ড্রেসড্’।
ভুটান থেকে এই পোশাকটা আমাকে একজন এনে দেবে বলেছে। আমিও তখন ফর্ম্যাল বিভিন্ন অনুষ্ঠানে ওই পোশাকেই যাব ঠিক করেছি।
সারং ঘরে পরার একটা আদর্শ ঢিলেঢালা পোশাক। আমি আমারগুলো কিনি তাইল্যান্ড থেকে। দামেও সস্তা, আর খুব আরামদায়ক আর উজ্জ্বল মনভরানো সব রঙের।
স্টাইল স্টেটমেন্ট যতটা না বাইরের, ততটাই মনের ব্যাপার। যে ভাবেই পোশাক পরুন, আপনাকে দেখে কখনও যেন মনে না হয় এই বুঝি অপ্রস্তুত হয়ে পড়লেন। বা এই এক্ষুনি আপনাকে একটা বিজনেস মিটিং করতে হবে। বা এই বুঝি আপনি অতিথি আপ্যায়ন করবেন কী মুদিখানার জিনিস কিনতে দৌড়বেন।
অ্যাটিটিউডটাই আসল। ঘরেও। বাইরে তো বটেই। |
|
|
|
|
|