|
|
|
|
ক্লাসেই কুকুর-শেয়াল, হেলায় বেহাল মাদ্রাসা |
নিজস্ব সংবাদদাতা • কোচবিহার |
কখনও গরমে ঘেমে একসা। কখনও বৃষ্টিতে ভিজে ফিরতে হয় বাড়িতে। শেয়াল-কুকুরের বাসা ওই ঘরেই। তার পরেও পড়াশোনার অদম্য ইচ্ছে স্থানীয় হাওয়ারগাড়ি ও পুসনাডাঙা এলাকার পিঙ্কি খাতুন, জ্যোস্না খাতুন, মজিবুল হোসেনকে সকাল সাড়ে ১০টায় টেনে নিয়ে যায় স্কুলে। প্রশাসনের অবহেলায় শিক্ষাকেন্দ্রগুলির হাল ক্রমশই বেহাল হয়ে পড়েছে বলে অভিযোগ উঠেছে।
পুসনাডাঙা-হাওয়ারগাড়ি ফাকরুল উলুম মাদ্রাসা শিক্ষাকেন্দ্র। পাট আর শোলার বেড়া দেওয়া ছোট চারটি ঘর। তার কোনওটার ভেঙে পড়ছে। বেড়ার অর্ধেক খসে পড়েছে। মাঝখানের বেড়াগুলি নেই। ভেঙে পড়া বেড়ার মধ্যে দিয়ে অবাধে ঘরে ঢুকছে কুকুর, শেয়াল। ওই ঘরে বসেই ক্লাস করছে পিঙ্কি, জোৎস্নার মত প্রায় ১০০ জন ছাত্রছাত্রী। এখানেই শেষ নয়, গত আট মাস ধরে মাদ্রাসার শিক্ষক সাম্মানিক পাচ্ছেন না। শুধু এই একটি মাদ্রাসাই নয়, কোচবিহার জেলার ২৭টি মাদ্রাসা শিক্ষাকেন্দ্রের এই হাল বলে অভিযোগ উঠেছে। শিক্ষকরা জানান, অধিকাংশ মানুষ কৃষিজীবী। বহু পরিবারে কেউই পড়াশুনো করেননি। তবে পরিবারের ছেলেমেয়েরা এখন পড়াশোনার জন্য মাদ্রাসায় আসছে। সেখানে প্রশাসনের নজরদারি তা অত্যন্ত জরুরি।
কোচবিহারের জেলাশাসক মোহন গাঁধী বলেন, “মাদ্রাসাগুলিতে একবার টাকা দেওয়ার পর সেখান থেকে তা ব্যবহারের সার্টিফিকেট দিতে হয়। তা হাতে পেলে পরবর্তী টাকা দেওয়া হয়। সে ক্ষেত্রে সময়মত টাকা পাওয়ার কথা। বিষয়টি খতিয়ে দেখা হবে।” পশ্চিমবঙ্গ মাদ্রাসা শিক্ষক সমিতির কোচবিহার জেলা সম্পাদক মাইনুল আমিন চৌধুরী জানান, অনেক কষ্টে দিন কাটছে। ছাত্রছাত্রীদের দেখে চোখে জল আসে। ওদের বসার জায়গাটুকু দিতে পারছি না। আর আমরা শেষবার ডিসেম্বর মাসের বেতন পেয়েছি মার্চ মাসে। প্রশাসনে সব জানানো হয়েছে।
প্রশাসন সূত্রের খবর, ২০০৯-এ কোচবিহার জেলায় ২৭টি মাদ্রাসা শিক্ষাকেন্দ্রকে সরকারি ছাড়পত্র দেওয়া হয়। সে সময় থেকে মাদ্রাসাগুলিতে শিক্ষকদের ৮১০০ টাকা, শিক্ষাকর্মীদের ৫১০০ টাকা করে দেওয়া হয়। শুরু থেকে টাকা অনিয়মিতভাবে দেওয়া হচ্ছে বলে অভিযোগ। পুসনাডাঙা-হাওয়ারগাড়ি ফাকরুল উলুম মাদ্রাসা শিক্ষাকেন্দ্রের প্রধান শিক্ষক পশ্চিমবঙ্গ মাদ্রাসা শিক্ষক সমিতি জেলা সভাপতি হাকিমুদ্দিন মিঁয়া বলেন, “স্কুলে ৭ শিক্ষক এবং ২ শিক্ষাকর্মী। ১০০ উপর পড়ুয়া। আমরা পুরোপুরি সাম্মানিকের উপর নির্ভরশীল।” স্কুলের ছাত্রী পিঙ্কি খাতুন বলে, পড়তে আমার খুব ভাল লাগে তাই প্রতিদিন স্কুলে যাই। বিদ্যুৎ নেই। গরমে ক্লাস করতে খুব কষ্ট হয়। বৃষ্টি হলে ক্লাস করতে পারি না। ঘরে কুকুর, শেয়ালের গন্ধ পাওয়া যায়।” আর এক ছাত্রী জ্যোস্না খাতুনের দাবি, নতুন ঘর হলে ভাল হয়। স্কুল সূত্রের খবর, মিডমিলের রান্না ঘরও বেহাল। |
|
|
|
|
|