বিপুল জয়ের পর এ বার পঞ্চায়েতের কাজে স্বচ্ছতা রাখায় নজর দিচ্ছেন মুখ্যমন্ত্রী তথা তৃণমূল নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। সোমবার দু’দফায় ১১টি জেলা পরিষদের বিজয়ী তৃণমূল সদস্যদের সঙ্গে বৈঠকে এই বার্তাই দিয়েছেন মমতা। আজ, মঙ্গলবার বাকি ৬ জেলা পরিষদে দলের জয়ী সদস্যদের নিয়ে বৈঠক করার কথা তাঁর।
দল ও প্রশাসনকে দুর্নীতিমুক্ত রাখতে মুখ্যমন্ত্রী বরাবরই সচেষ্ট। সেই লক্ষ্যেই এ দিন দুই বঙ্গের ১১ জেলা পরিষদের সদস্যদের সঙ্গে বৈঠকে কিছু পরামর্শ দিয়েছেন মমতা। স্বচ্ছতা রক্ষার্থে জেলা পরিষদের সভাধিপতি এবং সহ-সভাধিপতিদের সম্পত্তির খতিয়ান দেওয়ার নির্দেশ দিয়েছেন তিনি। আগামী লোকসভা ভোটের কথা মাথায় রেখেই জেলা পরিষদ তথা পঞ্চায়েতের মাধ্যমে রাজ্যে উন্নয়নমূলক কাজের অগ্রগতিকেই তিনি যে প্রাধান্য দিতে চান, বৈঠকে তা-ই স্পষ্ট করেছেন তিনি। সে কারণেই জেলা পরিষদের কাজকর্মের অগ্রগতি পর্যালোচনা করতে ‘নজরদারি কমিটি’ তৈরি করার কথা বৈঠকে ঘোষণা করা হয়েছে। তিন মাস অন্তর এই কমিটি জেলা পরিষদের কাজ পর্যালোচনা করবে। সরকারি এক জন আধিকারিক (মুখ্যমন্ত্রীর কথায় ‘এগ্জিকিউটিভ অফিসার’) সেখানে থাকবেন বলে মমতা বৈঠকে জানান। |
কোন জেলা পরিষদে কে |
জেলা |
সভাধিপতি |
সহ-সভাধিপতি |
কোচবিহার |
পুষ্পিতা রায় ডাকুয়া |
ললিত প্রামাণিক |
দক্ষিণ দিনাজপুর |
ললিতা টিগ্গা |
কল্যাণ কুণ্ডু |
হুগলি |
মেহবুব রহমান |
চামেলি মুর্মু |
বীরভূম |
বিকাশ রায়চৌধুরী |
রাখি লেট |
বাঁকুড়া |
অরূপ চক্রবর্তী |
বিভাবতী টুডু |
হাওড়া |
করবী ধুল |
অজয় ভট্টাচার্য |
বর্ধমান |
দেবু টুডু |
প্রিয়া সূত্রধর |
পুরুলিয়া |
সৃষ্টিধর মাহাতো |
মীরা বাউড়ি |
|
এ বার পঞ্চায়েত ভোটে ব্যাপক সাফল্য পেলেও গোষ্ঠী-দ্বন্দ্ব থেকে শুরু করে দলের নির্দেশ অমান্য করে প্রার্থী দাঁড় করানোর মতো বিষয় প্রকাশ্যে এসেছে। ক্ষমতায় আসার দু’বছরের মধ্যে পঞ্চায়েত ভোটে দলে উপদলীয় কাজকর্ম নিয়ে তৃণমূল নেতৃত্বের একাংশ উদ্বিগ্ন। টাউন হলে এ দিন দুপুরে উত্তরবঙ্গের ৫ জেলা বিকেলে দক্ষিণবঙ্গের ৬ জেলার জয়ী জেলা পরিষদ প্রার্থীদের সঙ্গে বৈঠকে মুখ্যমন্ত্রী জানান, যিনি যত বড় নেতাই হন, দলবিরোধী কাজে যুক্ত থাকলে বার করে দেওয়া হবে। তৃণমূল নেত্রী জয়ী জেলা পরিষদ সদস্য ও দলের নেতাদের বলেছেন, দলাদলি বা মতপার্থক্য নয়। ঐক্যবদ্ধ ভাবে কাজ করতে হবে।
বীরভূমের নেতা ও জেলা পরিষদের সদস্যদের সঙ্গে বৈঠকে তৃণমূলের জেলা সভাপতি অনুব্রত মণ্ডল ছিলেন না। তাঁর ঘনিষ্ঠ বিকাশ রায় চৌধুরীকেই সভাধিপতি মনোনীত করেন মুখ্যমন্ত্রী। বৈঠকে মন্ত্রী চন্দ্রনাথ সিংহের সঙ্গে দলের বিধায়ক মনিরুল ইসলাম থাকলেও অনুব্রত-বিরোধী বলে পরিচিত সিউড়ির বিধায়ক স্বপন ঘোষকে আমন্ত্রণ জানানো হয়নি। নেতৃত্বের মতে, লোকসভা ভোটের আগে দলের ঐক্যবদ্ধ ছবি মানুষের কাছে তুলে ধরার লক্ষ্যেই মমতা জেলা পরিষদের সভাধিপতি, সহ-সভাধিপতি ও দলনেতা বেছেছেন। গুরুত্ব দিয়েছেন মহিলা ও অনগ্রসর সম্প্রদায়ের প্রতিনিধিদের। জলপাইগুড়ি ও উত্তর দিনাজপুরে বিরোধী দলনেতা হিসাবে উত্তরা বর্মন ও গৌতম পালকে মনোনীত করা হয়েছে। মালদহে দলনেতা হয়েছেন উজ্জ্বল চৌধুরী।
কর্মীদের প্রতি মমতার পরামর্শ, মানুষ প্রত্যাশা নিয়ে, ভালবেসে যে ক্ষমতা তৃণমূলকে দিয়েছে, তা পূরণ করতে হবে। দক্ষিণবঙ্গের বাকি ৬ জেলা পরিষদের সদস্যদের সঙ্গে বৈঠকের আগে আজ ময়দানে গাঁধী মূর্তির পাদদেশে দলীয় ছাত্র সংগঠনের সমাবেশে মুখ্যমন্ত্রীর বক্তৃতা করার কথা। সেখানে দলের ছাত্র-যুবদের জন্য নতুন বাংলা গড়ার দিশা দেওয়া হবে বলে নেতাদের ধারণা। বৃহস্পতিবার ক্ষুদিরাম অনুশীলন কেন্দ্রে দলের সাংসদ, বিধায়ক ও ব্লক সভাপতিদের নিয়ে মমতার বৈঠকের কর্মসূচি আছে। শাসক দলের এই ঠাসা কর্মসূচির জন্য বিধানসভার অধিবেশন এই সপ্তাহের জন্য আজই মুলতুবি হয়ে যেতে পারে।
|