ছাত্র সংসদে ভোটের ঘোষণা পুজোর আগেই
পুজোর আগেই কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্র সংসদ নির্বাচনের প্রক্রিয়া শুরুর ঘোষণা করা হবে বলে সোমবার বিধানসভায় জানালেন শিক্ষামন্ত্রী ব্রাত্য বসু। নির্বাচনের পদ্ধতি কী হবে, তা-ও পুজোর আগেই জানানো হবে বলে তিনি জানান।
বিধানসভায় এ দিন সিপিএমের রামেশ্বর দলুই শিক্ষামন্ত্রীর কাছে চানতে চান জিজ্ঞাসা করেন, ছাত্র সংসদ নির্বাচন বন্ধ আছে কেন? সিপিএমেরই বঙ্কিম হাজরা কলেজে গণতান্ত্রিক পরিবেশ ফেরানোর দাবি করেন। এরই সূত্রে ব্রাত্যবাবু জানান, ছাত্র সংসদ নির্বাচন বন্ধ করা হয়নি। গত ফেব্রুয়ারিতে সরকারি নির্দেশিকা জারি করে মাস ছয়েকের জন্য তা স্থগিত করা হয়েছিল। ফের ছাত্র সংসদ নির্বাচনের প্রক্রিয়া শুরুর ঘোষণা করা হবে পুজোর আগে।
গত ১২ ফেব্রুয়ারি গার্ডেনরিচে হরিমোহন ঘোষ কলেজের ছাত্র সংসদ নির্বাচনে মনোনয়ন জমা দেওয়াকে কেন্দ্র করে গোলমালে মারা যান কলকাতা পুলিশের সাব-ইনস্পেক্টর তাপস চৌধুরী। তার পরেই ছাত্র সংসদ নির্বাচন ছ’মাসের জন্য স্থগিত রাখার কথা ঘোষণা করে রাজ্য সরকার। জানানো হয়, মাধ্যমিক, উচ্চ মাধ্যমিক-সহ বড় পরীক্ষার মরসুমে ছাত্র সংসদ নির্বাচনে নিরাপত্তার জন্য পর্যাপ্ত পুলিশ দেওয়া সম্ভব নয় বলেই এই সিদ্ধান্ত। যদিও শিক্ষামন্ত্রী এ দিন বলেন, মূলত পঞ্চায়েত ভোটের কথা মাথায় রেখেই স্থগিত রাখা হয়েছিল ওই নির্বাচন। রাজ্য সরকারের তরফে কিন্তু বলা হচ্ছে, শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে হিংসা-হানাহানি থামাতেই স্থগিত রাখা হয়েছিল ছাত্র সংসদের নির্বাচন।
এই সব নির্বাচনে গণ্ডগোল রুখতে বেশ কিছু সুপারিশ করেছিল সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশে গঠিত লিংডো কমিশন। বাম সরকার সেই সব সুপারিশের ভিত্তিতে একটি নির্বাচনী বিধি তৈরি করলেও সে আমলে তা তা কার্যকর হয়নি। সরকার বদলের পরে অভিন্ন নির্বাচনী বিধি তৈরির প্রক্রিয়া নতুন করে শুরু হয়। এ জন্য কমিটি গড়ে উচ্চশিক্ষা সংসদ। সেই কমিটি ইতিমধ্যেই একটি খসড়া বিধি তৈরি করে উচ্চশিক্ষা দফতরে জমা দিয়েছে। তাতে দু’বছর অন্তর ছাত্র সংসদ নির্বাচন, প্রতিদ্বন্দ্বিতার জন্য ক্লাসে অন্তত ৭৫ শতাংশ হাজিরা, প্রচারে রাজনৈতিক দলের পোস্টার-পতাকা ব্যবহার না করার মতো বেশ কিছু নিয়মের কথা বলা হয়েছে।
তবে উচ্চশিক্ষা দফতর সূত্রের খবর, পুজোর আগে নির্বাচনী প্রক্রিয়া শুরুর যে ঘোষণা এ দিন শিক্ষামন্ত্রী করেছেন, তা ওই বিধি মেনে হবে না। ওই বিধি নিয়ে আলোচনা চলছে। বিধিগুলি বিল আকারে বিধানসভায় পেশ করে আইন প্রণয়ন করা হবে বলে দফতরের এক কর্তা জানান।
তা হলে গত ছ’মাস আটকে থাকা নির্বাচনের পদ্ধতিতে এ বার নতুনত্ব কী থাকছে? উচ্চশিক্ষা দফতরের এক সূত্রের খবর, এক-একটি বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীন সব কলেজে একই দিনে নির্বাচন, নির্বাচন করানোর দায়িত্বে জেলা প্রশাসনের কর্তাদের রাখা, ছাত্র সংসদ নির্বাচনে রাজনৈতিক দলের সংস্রব নিষিদ্ধ করার মতো কিছু নিয়ম কার্যকর করার কথা ভাবা হচ্ছে।
ছাত্র সংসদ নির্বাচন স্থগিত রাখার সিদ্ধান্ত ঘোষণা করায় আন্দোলন শুরু করে এসএফআই-সহ বিভিন্ন ছাত্র সংগঠন। দ্রুত ছাত্র সংসদ নির্বাচনের দাবিতে এসএফআইয়ের মিছিলে প্রাণ হারান ছাত্রনেতা সুদীপ্ত গুপ্ত। এর প্রতিবাদে দিল্লিতে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ও অর্থমন্ত্রী অমিত মিত্রকে হেনস্থার অভিযোগ ওঠে এসএফআইয়ের সাধারণ সম্পাদক ঋতব্রত বন্দ্যোপাধ্যায় ও অন্যদের বিরুদ্ধে। প্রেসিডেন্সি বিশ্ববিদ্যালয়ের মূল দরজার তালা ভেঙে ভিতরে ঢুকে তাণ্ডব চালানোর অভিযোগ ওঠে তৃণমূল ছাত্র পরিষদের বিরুদ্ধে।
প্রবীণ শিক্ষক-শিক্ষিকাদের অনেকে কিন্তু ছাত্র সংসদ নির্বাচন স্থগিত রাখার সিদ্ধান্তকে স্বাগতই জানিয়েছিলেন। তাঁদের মধ্যে অন্যতম যাদবপুর বিশ্ববিদ্যায়ের ইংরেজির এমেরিটাস অধ্যাপক সুকান্ত চৌধুরী সোমবার বলেন, “কোন নিয়মে নির্বাচন হবে, তা না জেনে বিশদে কিছু বলব না। তবে দু’টো জিনিস এই ছ’মাসে দেখা গিয়েছে। প্রথমত, ছাত্র সংসদ নির্বাচন বন্ধ থাকলেও ছাত্রভর্তিকে কেন্দ্র করে কলেজে কলেজে গোলমালে বিরতি নেই। দ্বিতীয়ত, নির্বাচন বন্ধ থাকায় ছাত্রছাত্রীদের কোনও স্বার্থ বিঘ্নিত হচ্ছে না। আমার মনে হয়, সরকার আরও ু অপেক্ষা করতে পারত। অন্তত এক বছর নির্বাচন স্থগিত রাখাই যেত।”
জাতীয় গ্রন্থাগারের প্রাক্তন ডিরেক্টর জেনারেল, বর্তমানে যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের ইংরেজির শিক্ষক স্বপন চক্রবর্তী মনে করেন, ক্যাম্পাসে ছাত্র রাজনীতির এবং সে জন্য ছাত্র সংসদ নির্বাচনের প্রয়োজন রয়েছে।
তবে তাতে ধাড়ি রাজনীতিকদের হস্তক্ষেপ, আস্ফালন রুখতে হবে। তাঁর কথায়, “ছাত্র সংসদের দখল নিয়ে টাকার বিনিময়ে নানা কাজ করার প্রবণতাকে আমি রাজনীতি বলি না। ওটা দুর্নীতি। কিন্তু ছাত্রদের মধ্যে রাজনৈতিক অনুসন্ধিত্‌সা জাগিয়ে তোলা দরকার, না হলে তারা শিখবে কী করে! সে জন্য যথার্থ ছাত্র রাজনীতির প্রয়োজন।”
হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের ইতিহাসের অধ্যাপক, প্রেসিডেন্সি বিশ্ববিদ্যালয়ের মেন্টর গ্রুপের চেয়ারম্যান সুগত বসু ছাত্র সংসদ নির্বাচন শুরু করার সরকারি সিদ্ধান্তকে কার্যত স্বাগত জানিয়েছেন। তিনি বলেন, “সরকার কী ভাবে এই প্রক্রিয়া চালাতে চায়, কী নিয়ম বলবত্‌ করা হয়, সেগুলি দেখা দরকার। সব দিক বিবেচনা করে নির্বাচন শুরু করা হলে আবার হিংসা হবে বলে মনে হয় না।”



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.