স্কুলের পরীক্ষা শেষে আর বাড়ি ফেরা হল না দেগঙ্গার ষষ্ঠ শ্রেণির তিন ছাত্রীর।
সোমবার দুপুরের বৃষ্টি এবং বজ্রপাত থেকে বাঁচতে আরও কয়েক জনের সঙ্গে ওই ছাত্রীরা আশ্রয় নিয়েছিল একটি ঘরে। কিন্তু বজ্রপাতে তারা ঝলসে যায়। ওই তিন জন-সহ এ দিনের বৃষ্টি ও বজ্রপাতে উত্তর ২৪ পরগনা ও কলকাতার নানা প্রান্তে মৃত্যু হল ছ’জনের। আহতের সংখ্যা অন্তত ২৩।
বসিরহাটের হাড়োয়া হাদিপুর আদর্শ হাইস্কুলে এ দিন ষষ্ঠ শ্রেণির ইতিহাস ও ভূগোল পরীক্ষা ছিল। পরীক্ষা শেষে বাড়ি ফেরার সময় বৃষ্টির জন্য ১২ জন ছাত্রছাত্রী স্কুলের পাশে একটি ঘরে আশ্রয় নেয়। দুপুর পৌনে দু’টো নাগাদ ওই ঘরের পাশের একটি সজনে গাছে বাজ পড়ে। আলোর ঝলকানি ও বিকট শব্দে ছাত্রছাত্রীরা অসুস্থ হয়ে পড়ে। কয়েক জন ছাত্রছাত্রী ঝলসে যায়। স্কুলের শিক্ষিকারা দ্রুত তাঁদের উদ্ধার করে হাসপাতালে নিয়ে যান। |
হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে আহত এক ছাত্রীকে।—নিজস্ব চিত্র। |
চিকিত্সকরা পরীক্ষার পর চন্দনা মণ্ডল (১৪), রুপা সর্দার (১৩) এবং শিপ্রা পাড়ুই (১৩) নামে তিন ছাত্রীকে মৃত ঘোষণা করেন। চন্দনার বাড়ি দেগঙ্গার দেওয়ানআটিতে। রুমার বাড়ি ঝিকড়া আমতলায় এবং শিপ্রার বাড়ি চটকাবেড়িয়া গ্রামে।
দুর্ঘটনায় আহত নয় ছাত্রছাত্রীর মধ্যে দু’জনকে আশঙ্কাজনক অবস্থায় পরে কলকাতার আর জি কর হাসপাতালে ভর্তি করানো হয়েছে। হাড়োয়া হাসপাতালে ষষ্ঠ শ্রেণির ছাত্রী শিল্পী সর্দার বলে, “হঠাত্ বৃষ্টি শুরু হয়। আমরা একটা ঘরে ঢুকে যাই। হঠাত্ ভয়ঙ্কর শব্দ ও প্রচণ্ড আলোর ঝলকানি। আর কিছু মনে নেই। এখন গোটা শরীরে যন্ত্রণা করছে। কিছু শুনতে পাচ্ছি না।” মর্জিনা খাতুন নামে আর এক জখম ছাত্রী বলে, “কিছু ক্ষণ আগেই শিপ্রার সঙ্গে বসে পরীক্ষা দিচ্ছিলাম। আমার তিন বন্ধু আর নেই বিশ্বাস করতে পারছি না।”
এ দিন বজ্রপাতে আহত হয় রাজারহাটের উত্তর রামকৃষ্ণ আশ্রম অবৈতনিক প্রাথমিক স্কুলের জনা দশেক ছাত্রছাত্রীও। স্কুল থেকে বাড়ি ফেরার সময় বৃষ্টির থেকে বাঁচতে মাঠের ধারে একটা চালাঘরের নীচে দাঁড়ায় তারা। বাজ পড়ে ঠিক সামনে। ছ’জন জ্ঞান হারায়। হাসপাতালে প্রাথমিক চিকিত্সার পরে অবশ্য তাদের ছেড়ে দেওয়া হয়। বজ্রপাতে সল্টলেক এবং ধাপা এলাকায় দু’জনের মৃত্যু হয়। চার জন আহত হন। প্রগতি ময়দান থানা এলাকার ভৈসতলা দুর্গাপুর মাঠে চাষের কাজ করার সময় বজ্রপাতে ঘটনাস্থলেই মারা যান বছর পঁয়ত্রিশের রঞ্জন সোনার। অন্য দিকে, সল্টলেকের সংযুক্ত এলাকা কুলিপাড়াতে ভেড়িতে কাজ করছিলেন দুই শ্রমিক। বাজ পড়ায় ঘটনাস্থলেই মারা যান বছর পঞ্চান্নর নিতাই মণ্ডল। গুরুতর জখম হন তাঁর সঙ্গী। নিউ টাউনের কদমপুকুর এলাকায় একটি বাড়ি তৈরির কাজ করার সময় নাজির আহমেদ, রাকিল আলম ও চিরাগ আলম নামে বিহারের তিন শ্রমিকও আহত হন। সন্দেশখালির মণিপুর গ্রামে ধান রোওয়ার সময় বজ্রাঘাতে ঘটনাস্থলেই মৃত্যু হয় মহাদেব সর্দার (৩৯) নামে এক যুবকের। হিঙ্গলগঞ্জে দক্ষিণ গোবিন্দকাটি গ্রামে নিজের মাটির বাড়ির চালে বাজ পড়ায় গুরুতর আহত হন সুকুমার দাস। তিনিও স্থানীয় হাসপাতালে চিকিত্সাধীন। |