সকাল ৯টা। বাস থেকে নেমেই কাজলবাবু ছুট লাগিয়েছিলেন যদি কোনওমতে ট্রেনটা পাওয়া যায়। কিন্তু বিধি বাম। ছুটতে ছুটতে এসে স্টেশনে ঢোকার মুহূর্তে তাঁকে গুডবাই জানিয়ে ততক্ষণে ক্যানিং প্ল্যাটফর্ম ছেড়ে গিয়েছে শিয়ালদহ লোকাল। সেদিনের মতো আর অফিস যেতে পারেননি কলকাতায় একটি রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাঙ্কের কর্মী কাজল সরকার। বস্তুত এটা কোনও বিচ্ছিন্ন ঘটনা নয়। ক্যানিং স্টেশন সংলগ্ন রাস্তায় যানজটে নাজেহাল মানুষের কাছে এটা রোজকার ঘটনা হয়ে দাঁড়িয়েছে।
দক্ষিণ ২৪ পরগনার অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ মহকুমাশহর ক্যানিংয়ে যানজটের সমস্যা দীর্ঘদিনের। রাজ্যের অন্যতম প্রধান পর্যটনকেন্দ্র সুন্দরবন এলাকায় প্রবেশের পথও এই শহর। কিন্তু উপযুক্ত পরিকল্পনার অভাবে যানজটের সমস্যার কারণে শুধু এই অঞ্চলের বাসিন্দাদেরই নয়, চরম ভোগান্তি হয় সুন্দরবনে বেড়াতে আসা পর্যটকদেরও। বাসন্তী, গোসাবা তথা সুন্দরবনের বিস্তীর্ণ এলাকার মানুষের কলকাতার সঙ্গে যোগাযোগের প্রধান মাধ্যম ক্যানিং রেলস্টেশন। জনসংখ্যা বৃদ্ধির পাশপাশি বেড়েছে বাস, অটো, ট্রেকারের সংখ্যা। কিন্তু মহকুমায় বাড়েনি রাস্তা। ফলে যে কটি রাস্তা রয়েছে তাতে গাড়ির চাপ বাড়ার পাশাপাশি তা সামলানোর মতো কোনও পরিকল্পনা মহকুমা প্রশাসনের তরফে না নেওয়ায় তাঁদের এই নিত্য ভোগান্তি বলে অভিযোগ সাধারণ মানুষের। |
তাঁদের আরও অভিযোগ, মহকুমার চারটি গুরুত্বপূর্ণ রাস্তা ক্যানিং-বারুইপুর রোড, ক্যানিং-বাসন্তী-ঝড়খালি রাস্তা, ক্যানিং-হেড়োভাঙা রোড ও ক্যানিং-জামতলা রোড, এই চারটি রাস্তাই এসে ক্যানিং স্টেশন এলাকায় পড়েছে। কিন্তু স্টেশন এলাকায় নির্দিষ্ট বাসস্ট্যান্ড, অটো-ট্রেকার স্ট্যান্ড না তৈরি হওয়ায় যত্রতত্র বাসগুলিতে যাত্রী ওঠানামা চলে। একই অবস্থা অটো-ট্রেকারের ক্ষেত্রেও। ফলে যানজটের কবলে পড়ে অনেকে ট্রেন মিস করেন। অসুস্থদের হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার ক্ষেত্রেও চরম সমস্যায় পড়তে হয় রোগীর বাড়ির লোকজনদের। এলাকার মানুষের অভিযোগ, মাতলা নদীর উপরে সেতু হওয়ায় একদিকে যেমন যাতাযাতের সুবিধা হয়েছে, তেমনই ক্যানিং স্টেশন এলাকায় গাড়ির চাপ আগের তুলনায় অনেক বেড়ে গিয়েছে। তার উপর বাস বা অটো বা ট্রেকারের কোনও স্ট্যান্ড না থাকায় রাস্তার উপরেই সেগুলি দাঁড়িয়ে থাকে। সর্বোপরি ক্যানিং এলাকায় রাস্তার দু’পাশ দখল করে যে ভাবে দোকান গজিয়ে উঠেছে তাতে অপরিসর রাস্তায় গাড়ি চলাচল করাই দুঃসাধ্য। সব দেখেও প্রশাসনের হেলদোল নেই।
নিত্যযাত্রী দিবাকর সরকার, অসীম গিরি, সুব্রত মণ্ডলেরা জানালেন, “সারা বছর এ ভাবেই ভোগান্তি চলে। তবে সমস্যা বাড়ে দুর্গাপুজোয় এবং তার পর। কারণ পুজোর ভিড়। আর পুজো কেটে গেলে শুরু হয়ে যায় পর্যটকদের মরসুম। বছরের পর বছর এমন দুর্বিষহ অবস্থা কাটাতে প্রশাসনকে আজ পর্যন্ত কোনও ভূমিকাই নিতে দেখা যায়নি।
ক্যানিংয়ে যানজটের সমস্যা যে মারাত্মক আকার নিয়েছে তা স্বীকার করেছেন মহকুমাশাসক শেখন সেনও। তিনি বলেন, “এটা বিরাট সমস্যা। পুজোর আগে যাতে এই সমস্যার সমাধান করা যায় সে জন্য সমস্ত রাজনৈতিক দলের সঙ্গে আলোচনা করা হবে।” এসডিপিও বিশ্বজিত্ মাহাতো বলেন, “বাস, অটো, ট্রেকারের কোনও নিদির্ষ্ট স্ট্যান্ড না থাকায় যানজটের সমস্যা বেড়ে গিয়েছে। তবু আমরা চেষ্টা করছি যাতে এই সমস্যার সমাধান করা যায়।”
প্রশাসনের এই উদ্যোগ যানজটের যন্ত্রণা থেকে সাধারণ মানুষকে মুক্তি দিতে পারে কি না সেটাই এখন দেখার।
|