হাজরাপাড়া শিশু শিক্ষাকেন্দ্র
পড়ুয়া ১০, মিড ডে মিলে বরাদ্দ ১২০
বেলডাঙার মাড্ডায় হাজরাপাড়া শিশুশিক্ষা কেন্দ্রে খাতায়-কলমে পড়ুয়ার সংখ্যা ১২০। কিন্তু বছর খানেক ধরে সে স্কুলে হাজিরা দেয় সাকুল্যে জনা বারো ছেলেমেয়ে।
স্কুল কর্তৃপক্ষ অবশ্য ওই শতাধিক ছাত্রের উপস্থিতির হার দেখিয়েই মিড ডে মিলের বরাদ্দ তুলে আসছে। ফলে স্কুলের রান্নাঘরে জনা দশ-বারো পড়ুয়ার ভাত-ডালের আয়োজন থাকলেও খাতায় কলমে সে স্কুলে নিত্য পাত পেড়ে খাচ্ছে একশো কুড়ি জন ছাত্রছাত্রী। প্রতি দিন প্রায় একশো জন ছাত্রছাত্রীর বাড়তি বরাদ্দের চাল-আনাজ যাচ্ছে কোথায়? গ্রামবাসীরা সে প্রশ্ন তুলতেই বিপাকে পড়েছে হাজরাপাড়ার ওই শিশু শিক্ষা কেন্দ্র।
গ্রামবাসীদের অভিযোগ, পড়ুয়াদের হাজিরা বেশি দেখাতে গ্রামের বহু মহিলাকেই একরকম জোর করে পরীক্ষায় বসিয়ে তাঁদের পাকা হাতে লেখা উত্তরপত্র পাঠানো হচ্ছে প্রাথমিক শিক্ষা সংসদের দফতরে। বিনিময়ে ওই সব গ্রামীণ মহিলাদের হাতে ‘শুভেচ্ছা-সহ’ হাতে তুলে দেওয়া হচ্ছে কেজি দুয়েক চাল, ডিম কিংবা মিষ্টির প্যাকেট।
ওই গ্রামের আশালতা দলুই বলেন, “আমি ওই শিশুশিক্ষা কেন্দ্রের পাশেই একটি বাড়িতে পরিচারিকার কাজ করি। স্কুলের দিদিমণিরা জোর করে আমাকে ডেকে পরীক্ষায় বসিয়ে দিলেন। আমি কি লিখতে পারি। ওঁরাই লিখে দিলেন। আমি যাতে মুখ না খুলি সে জন্য আমাকে দু’কেজি চাল দিলেন ওঁরা। তখন বুঝিনি কেন হঠাৎ আমায় দিয়ে এ সব করানো হল।” একই অভিজ্ঞতা গ্রামের নবনীতা হাজরা, তাপসী হাজরা ও পায়েল হাজরার। তাঁদের অভিযোগ, “দিদিমণিরা আমাদেরও পরীক্ষায় বসিয়েছিলেন। সহজ প্রশ্ন আমরা পারব না কেন। করে দিলাম। বিনিময়ে পেলাম, চাল-ডিম।” চাল-ডিমের ‘টোপে’ এ ভাবেই ওই শিশুশিক্ষা ছাত্র সংখ্যা খাতায় কলমে দেখানো হচ্ছে একশো-কুড়ি।
অভিযোগ অবশ্য উড়িয়ে দিয়েছেন ওই স্কুলের শিক্ষিকারা। শিশুশিক্ষা কেন্দ্রের প্রধান সহায়িকা ছায়া বিশ্বাস বলেন, “দুর্নীতির এ সব অভিযোগ সবই সাজানো।” তবে স্কুলে যে ছাত্রছাত্রীর সংখ্যা ক্রমশ কমছে তা অবশ্য মেনে নিয়েছেন তিনি। তা সত্ত্বেও একশো কুড়ি জনের বরাদ্দ চাল-আনাজ তোলা হচ্ছে কেন? ছায়াদেবী বলেন, “বাড়তি যা চাল-ডাল থাকে তা রান্নাঘরেই মজুত থাকে।” তাঁর দাবি, গড়ে চল্লিশ-পঞ্চাশজনের মতো রান্না চাপানো হয় স্কুলে। কেন? যুক্তি, এক সঙ্গে যদি ছেলেমেয়েরা এসে পড়ে তখন তো নতুন করে রান্না চাপানো যাবে না!
কিন্তু ওই স্কুলে হাজিরার সংখ্যা এমন কমে গিয়েছে কেন?
স্কুল কর্তৃপক্ষের সাফাই, “আমাদের স্কুলটি একেবারেই রাস্তার ধারে। সারাক্ষণ শব্দ। পড়ানোই দায়। তার উপর পরিবেশও ভাল নয়। তাই বাবা-মায়েরাই আর স্কুলে পাঠাতে চান না।”
এ দিন স্কুল কর্তৃপক্ষ স্কুল চত্বরের একটি গাছ কাটতে গেলে তা নিয়ে বিক্ষোভে ফেটে পড়েন গ্রামবাসীরা। তার জেরেই উঠে আসে মিড ডে মিল নিয়ে দুর্নীতির বিবিধ অভিযোগ। বেলডাঙা-১ পঞ্চায়েত সমিতির সদস্য কংগ্রেসের সত্যব্রত হাজরা বলেন, “মিড-ডে মিল নিয়ে ওই শিশু শিক্ষা কেন্দ্রে দুর্নীতি হচ্ছে বলে খবর পাওয়া যাচ্ছে। তার জেরেই এ দিনের বিক্ষোভ। এ দিন অভিভাবকেরা মিড ডে মিলের বেনিয়ম নিয়ে বিডিও-র কাছে নালিশও জানিয়েছেন।” বেলডাঙা-১ ব্লকের বিডিও সঞ্জয় বিশ্বাস বলেন, “শিক্ষক-শিক্ষিকাদের বিরুদ্ধে ওঠা দুর্নীতির অভিযোগগুলি খতিয়ে দেখা হবে।”



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.