‘ফেরার’ দিল মহম্মদকে গ্রেফতারের পর ছোট আঙারিয়া মামলা ফের জীবন পেয়েছিল। গত এপ্রিলে শুরু হয়েছিল শুনানিও। কিন্তু দু’দিনের মাথায় দিন পিছোতে শুরু করে। এপ্রিলের পর থেকে লম্বা ব্যবধানে চারটি দিন নেওয়ার আবেদন জানান দিল মহম্মদের পক্ষের আইনজীবী। প্রতি বারই বেশি সময় দেওয়া যাবে না, এ বারই শেষ সময় বলে জানান মেদিনীপুরের পঞ্চম অতিরিক্ত জেলা ও দায়রা বিচারক ইন্দ্রনীল ভট্টাচার্য। তারপরেও মামলার শুনানি পিছনোর প্রবণতা কমানো যায়নি। সোমবার অভিযুক্তপক্ষের আইনজীবী আদালতের একটি শুনানির নির্দেশের জন্য দিন চেয়ে আবেদন জানান। সিবিআইয়ের আইনজীবী তাপস বসু তার তীব্র প্রতিবাদ জানিয়ে এ দিনই শুনানি শুরুর আবেদন করেন। এই ঘটনায় বিরক্তিও প্রকাশ করেন বিচারক।
বিচারক অভিযুক্ত পক্ষের আইনজীবীদের সাফ জানিয়ে দেন, ‘এ বারও সময় দেওয়ার অর্থ আমি নিজের দেওয়ার নির্দেশকেই অমান্য করছি। তবু আর একবার সময় দিলাম। কতদিন এ ভাবে চলতে পারে? এরপরেও যদি হাইকোর্টের নির্দেশ না মানলে আমার কিছুই করার থাকবে না। আমি শুনানি শুরু করে দেব।” সিবিআইয়ের আইনজীবীও ক্ষোভ প্রকাশ করে আদালতে জানান, অভিযুক্তপক্ষ অকারণে মামলার শুনানি পিছিয়ে নিয়ে যেতে নানা কৌশল অবলম্বন করছেন। বিচারকও অভিযুক্তপক্ষকে মনে করিয়ে দেন, জেল হাজতে তাঁদেরই মক্কেল রয়েছে। তাই তাঁদেরই উচিত, দ্রুত শুনানি সম্পন্ন করা।
অভিযুক্তপক্ষের আইনজীবী বিশ্বনাথ ঘোষ জানান, “আমাদের বিষয়টি হাইকোর্টে উঠেছে। কিন্তু সময়ের অভাবে বিচারক সামান্য অংশই শুনতে পেরেছিলেন। আশা করি, শীঘ্রই একটা নির্দেশ পাব। আমরাও চাই দ্রুত শুনানি হোক। ওই নির্দেশ পাওয়ার পরেই দ্রুত শুনানিতে যাব।” এ ব্যাপারে পরবর্তীকালে আর কোনও দিন দেওয়া হবে না জানিয়ে বিচারক নির্দেশ দেন যে, ৯ সেপ্টেম্বর ফের শুনানি হবে।
কী কারণে হাইকোর্টে গিয়েছিলেন অভিযুক্তপক্ষ? এই মামলার শুনানি আগেও একবার হয়েছিল। অভিযুক্তদের বেশিরভাগকেই পলাতক দেখিয়ে চার্জশীট দিয়েছিল সিবিআই। ২০০৯ সালের ২৮ মে সেই মামলায় সাক্ষ্য প্রমাণের অভাবে ধৃতেরা সকলেই বেকসুর খালাস পেয়ে যান। দ্বিতীয়বার শুনানির শুরুতেই ঘটনার প্রধান প্রত্যক্ষদর্শী বক্তার মণ্ডলকে জেরা করেন সিবিআইয়ের আইনজীবী। তাঁর জেরা শেষে অভিযুক্তপক্ষের আইনজীবীকে জেরা করার (ক্রস এক্সামিন) কথা জানায় আদালত। তখনই বিশ্বনাথবাবুরা আদালতে জানান যে, প্রথম দফায় বিচার চলাকালীন বক্তার মণ্ডলের সঙ্গেই আসিয়া বিবি, রফিক মণ্ডল ও সিদ্দিক মণ্ডল, যাঁরা সাক্ষ্য দিয়েছিলেন, তাঁদের চারজনেরই পরপর সাক্ষ্য নিতে হবে। এক সঙ্গেই সকলকে ক্রস এক্সামিন করতে চান তাঁরা। এর তীব্র বিরোধিতা করে সিবিআইয়ের আইনজীবী জানান, কোন কোন সাক্ষীকে তিনি জিজ্ঞাসাবাদ করবেন তা নির্ধারণ করার এক্তিয়ার তাঁরই। এ ব্যাপারে কেউ তাঁকে কোনও নির্দেশ দিতে পারে না। আদালত সিবিআইয়ের আইনজীবীর মতামত শোনার পর অভিযুক্তপক্ষের আইনজীবীর আবেদন খারিজ করে দেন। তারই বিরুদ্ধে হাইকোর্টে যান অভিযুক্তপক্ষ।
৮ ও ৯ এপ্রিল পরপর দু’দিন যা শুনানি হয়েছিল। ৯ এপ্রিল ক্রস এক্সামিনের বিষয় আসার পরেই সেই যে হাইকোর্টে যাওয়ার বিষয় ওঠে, তারপর থেকেই কেবলই তারিখের পর তারিখ পড়ছে। এই ঘটনায় ক্ষুব্ধ সিবিআই আইনজীবীর বক্তব্য, “যাঁরা প্রথমবার দ্রুত শুনানি করার জন্য উঠে পড়ে লেগেছিলেন, এখন তাঁরাই নানা বাহানায় শুনানি পিছিয়ে দিতে তৎপর। আশা করি, এবার দ্রুত শুনানি হবে।”
|