ওড়িশা, ঝাড়খন্ডের জঙ্গল পার হয়ে দক্ষিণবঙ্গের জেলাগুলিতে ঢুকে তান্ডব চালাচ্ছে অতিথি হাতির পাল। অন্য দিকে উত্তরবঙ্গের জঙ্গল থেকে মেচি নদী পার হয়ে নেপালে ঢুকে পড়া ভারতীয় হাতির মৃত্যুর ঘটনা ঘটছে। ‘অনুপ্রবেশে’র ওই জোড়া সমস্যা সামলাতে রাজ্যের দুই প্রান্তে এবার পরিখা ও বাঁধ তৈরির কথা ভাবছে বন দফতর। এই নিয়ে এ মাসেই দফতরের আধিকারিকদের নিয়ে কলকাতায় বৈঠক করতে চলেছেন রাজ্যের বনমন্ত্রী হিতেন বর্মন।বন দফতর সূত্রের খবর, আলোচনার ভিত্তিতে পরিবেশপ্রেমী সংগঠনগুলি পাশাপাশি বিশেষজ্ঞদের সঙ্গে কথা বলবেন বন কর্তারা। হাতি বিষয়ক পশ্চিমবঙ্গ, ওড়িশা ও ঝাড়খন্ডে প্রতিনিধিদের নিয়ে তৈরি টাস্ক ফোর্সেও সমস্যাটি নিয়ে কথা হবে। তার পরেই পরিকল্পনা চূড়ান্তের কথা ভাবা হচ্ছে।
বনমন্ত্রী জানান, বাঁকুড়া, পশ্চিম মেদিনীপুর, পুরুলিয়ার মতো জেলায় হাতির হানার ঘটনা মারাত্মক ভাবে বেড়ে গিয়েছে। জীবনহানি, শস্য ক্ষতি হচ্ছে। ওড়িশা ঝাড়খন্ড সীমান্ত লাগোয়া করিডরের কিছু এলাকায় পরিখা করে তাই ভিন রাজ্যের হাতির গতিবিধি নিয়ন্ত্রণ করার ব্যাপারে চিন্তাভাবনা করা হচ্ছে। একই নেপালে ঢুকে পড়া হাতির মৃত্যুর ঘটনা এড়াতে আমরা উত্তরবঙ্গের ওই করিডরে নদী বাঁধ করার ব্যাপারেও সেচ দফতরের সঙ্গে কথা বলছি। তিনি বলেন, “চলতি সপ্তাহেই কলকাতায় সমস্ত বিষয় নিয়ে আধিকারিকদের সঙ্গে বৈঠক করব।”
বন দফতর সূত্রেই জানা গিয়েছে, ওড়িশা ঝাড়খন্ড থেকে কয়েক বছর আগেও ফসলের মরসুমে হাতির পাল দক্ষিণবঙ্গের জঙ্গলে ঢুকে পড়ত। ওই অতিথি হাতির পালের আনাগোনা বেড়ে গিয়েছে। পশ্চিম মেদিনীপুরের গড়বেতা, বাঁকুড়ার বাঁকাদহ এলাকার জঙ্গল হয়ে এরাজ্যে ঢুকে পড়ছে হাতির পাল। গত চার বছরে হাতির হামলায় শুধু বাঁকুড়াতেই অন্তত ১৮ জনের মৃত্যু হয়েছে। প্রতি বছর শস্যহানি হচ্ছে।
সমস্যা মেটাতে আধিকারিকদের একটি মহলের তরফে ওই দুই রাজ্যের জঙ্গল এলাকার সঙ্গে এ রাজ্যের বনাঞ্চলে যাতায়াতের করিডর এলাকা কমিয়ে গতিবিধি নিয়ন্ত্রণ করার কথা প্রস্তাব বনমন্ত্রীকে দেওয়া হয়। অন্য দিকে উত্তরবঙ্গের মহানন্দা অভয়ারণ্যের কার্শিয়াং বনাঞ্চল লাগোয়া ভারত-নেপাল সীমান্তের মেচি নদী পার এ পারের হাতির পাল ঢুকছে। গত ১০ বছরে নেপালে ঢুকে পড়া কমপক্ষে ৮টি হাতি মৃত্যুর ঘঠনা ঘটেছে। রাজ্যের বনমন্ত্রী হিতেন বর্মন বলেন, “কয়েক বছর আগে বিদ্যুতের ফেন্সিং বসিয়ে ওই ব্যাপারে একটা চেষ্টা হয়েছিল। হাতির পাল এত বুদ্ধিমান যে গাছের গুড়ি উপড়ে ফেলে ফেন্সিং বিকল করে দেয়। ওই চেষ্টাটা কাজে লাগেনি।”
বন আধিকারিক ও পরিবেশপ্রেমী মহলে একাংশ জানাচ্ছেন, বিদ্যুতের বেড়া কাঁটাতার বেড়া থেকে হল্লাপার্টি করে হাতির গতিবিধি আটকানোর মত বহু পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে। এমনকী বাঁকুড়া সহ দক্ষিণবঙ্গের হাতি উপদ্রুত এলাকার জঙ্গলে চালতা বেল কাঁঠালের মতো গাছ লাগিয়ে লোকালয়ে যাওয়া রোখার চেষ্টা হয়েছে। সেই তালিকায় পরিখা নয়া সংযোজন। চা বাগান-সহ নানা গ্রামীণ জনপদে পরিখা তৈরি করে ভাল ফল মিলেছে। পরিবেশপ্রেমী সংস্থা ন্যাফের মুখপাত্র অনিমেষ বসু বলেন, “পরিখা করা যেতেই পারে। হাতির মতো প্রাণীরা যেহেতু বিস্তীর্ণ এলাকায় বেড়ায় তাই বিশেষজ্ঞদের মত নেওয়া উচিত। তবে নেপালে হাতি ঢোকা বন্ধ করতে বাঁধ দেওয়া কতটা কার্যকর হবে তা নিয়ে সংশয় আছে।” |