সাপের আতঙ্কে ত্রস্ত রানাঘাটের তিলডাঙা এলাকার মানুষ।
বর্ষায় কৃষিপ্রধান ওই এলাকায় বর্ষায় সাপের আনাগোনা বেড়ে গিয়েছে। মাটি বা বেড়ার দেওয়ালের ফাঁক গলে বিষধর সাপ ঢুকে পড়ছে ঘরের ভিতর। গত পনেরো দিনে এলাকায় সাপের ছোবলে মৃত্যু হয়েছে দু’জনের। দিন পনেরো আগে কল্পনা ঘোষ নামে বছর পঞ্চান্নর এক মহিলা গরমের কোপে বাড়ির বারান্দায় ঘুমিয়ে ছিলেন। ঘুমের ঘোরেই সর্পদষ্ট হন তিনি। সেই রাতেই তাঁকে ভর্তি করানো হয় রানাঘাট মহকুমা হাসপাতালে। অবস্থার অবনতি হলে পরদিন সকালে তাঁকে স্থানান্তরিত করা হয় কল্যাণী হাসপাতালে। কিন্তু সেখানে নিয়ে যাওয়ার পথেই মৃত্যু হয় কল্পনাদেবীর। দিন দশেক আগে রাতে ঘুমের মধ্যে সর্পদষ্ট হন দীপুবালা মণ্ডল নামে তিপান্ন বছরের এক মহিলা। বাড়ির লোকজন তাঁকে তড়িঘড়ি ভর্তি করান রানাঘাট মহকুমা হাসপাতালে। রোগীর অবস্থা ‘সিরিয়াস’ হওয়ায় চিকিত্সক তাঁকে কল্যাণীতে ‘রেফার’ করেন। সেখানে থেকে দীপুবালাদেবীকে স্থানান্তরিত করা হয় কলকাতার নীলরতন সরকার মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে। মাস দশেক আগে কল্পনাদেবীর এগারো বছরের নাতি প্রসেনজিত্ মণ্ডলের প্রাণ যায় সাপের ছোবলে। এ ছাড়াও গত এক বছরে ওই গ্রামের পায়েল মণ্ডল, সুনীল মণ্ডল, সুবোধ মণ্ডলের মৃত্যু হয়েছে সাপের ছোবলে। গত এক বছরে সাপের ছোবলে এতগুলো প্রাণ যাওয়ায় এলাকাবাসীরা রীতিমতো আতঙ্কিত। এক বছরে সর্পদষ্ট হয়ে এতগুলো লোকের প্রাণ যাওয়ায় রীতিমতো ক্ষিপ্ত গ্রামের মানুষ। তাঁরা আঙুল তুলছেন সরকারি হাসপাতালের চিকিত্সা ব্যবস্থার বিরুদ্ধে। স্থানীয় গ্রাম পঞ্চায়েত সদস্য কংগ্রেসের আনন্দ বিশ্বাস ক্ষোভ উগরে দিয়ে বলেন, “সাপের ছোবল মারা রোগীকে আর ওঝা-গুনিনের কাছে নিয়ে যাওয়া হয় না। হাসপাতালে ভর্তি করানো হয়। কিন্তু হাসপাতালে সঠিক চিকিত্সা পাওয়া যাচ্ছে না। রোগীর মৃত্যু হচ্ছে।”
গ্রামবাসীদের অভিযোগ অস্বীকার করে রানাঘাট মহকুমা হাসপাতালের সুপার রঞ্জিত্ দাস বলেন, “রোগীদের হাসপাতালে নিয়ে আসা হচ্ছে অনেক দেরিতে। ফলে চিকিত্সা করতে সমস্যা হচ্ছে। হাসপাতালে পর্যাপ্ত পরিমান এভিএস মজুত রয়েছে।”
জেলার উপ মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক (প্রথম) দিব্যেন্দু চক্রবর্তী বলেন, “রোগীদের দ্রুত হাসপাতালে নিয়ে এলে মৃত্যুর সম্ভাবনা থাকে না। কিন্তু হাসপাতালে নিয়ে আসতে দেরি হলে সমস্যা হয়। তবে হাসপাতালগুলিতে পর্যাপ্ত পরিমাণে সাপের বিষ প্রতিরোধক এভিএস মজুত রয়েছে।” |