দশ কোটি টাকা না দিলে অপহরণ করে প্রাণে মেরে ফেলা হবে, ব্যবসায়ীকে এমন হুমকি-চিঠি দেওয়ার অভিযোগে তিন জনকে গ্রেফতার করল পুলিশ। দুর্গাপুরের ডক্টরস কলোনির বাসিন্দা ওই ব্যবসায়ী রামধনি জয়সওয়াল দুর্গাপুর থানায় অভিযোগ করেছিলেন। পুলিশ জানায়, ধৃতদের নাম রমেশ গুজের, শেখ ইসরাফুল ও পূর্ণচন্দ্র বাউড়ি। প্রথম জনের বাড়ি নেপালে। বাকি দু’জন দুর্গাপুরের নিউটাউনশিপ থানার হরিবাজারের বাসিন্দা।
পুলিশ জানায়, রামধনিবাবুর দুর্গাপুর ও মাইথনে দু’টি টিএমটি বার তৈরির কারখানা রয়েছে। ২৩ অগস্ট তিনি অভিযোগ দায়ের করেন, সে দিন সকালে এক অপরিচিত ব্যক্তি বাড়ির চিঠির বাক্সে একটি চিঠি ফেলে রেখে যায়। বারান্দায় বাড়ির পরিচারককে দেখে তাঁকে ডেকে চিঠিটি দ্রুত বাড়ির মালিককে পৌঁছে দিতে বলে পালিয়ে যায় ওই ব্যক্তি। রামধনিবাবু পুলিশকে জানান, তাঁর আপ্ত সহায়ক মহেন্দ্র সাউকে উদ্দেশ্য করে লেখা ওই চিঠিতে বলা ছিল, দশ কোটি টাকা না দিলে রামধনিবাবুকে অপহরণ করে প্রাণে মেরে ফেলা হবে। চিঠির শেষে লেখা একটি মোবাইল নম্বরে ফোন করে যোগাযোগ করতে বলা হয়।
|
আদালতের পথে।—নিজস্ব চিত্র।
|
পুলিশ জানায়, তদন্তে নেমে সেই নম্বরটির উপর নজরদারি শুরু করা হয়। জানা যায়, ফোনের সিমটি ১ জুলাই থেকে চালু করা হয়েছে। সেটি নেওয়া হয়েছে বীরভূমের ইলামবাজারের একটি দোকান থেকে। এর পরে সেই নম্বর ও অন্য আর একটি নম্বর থেকে ফোন করা হয় ব্যবসায়ীর আপ্ত সহায়ককে। দ্রুত টাকা দেওয়ার ব্যবস্থা না করে হলে চরম পদক্ষেপের হুমকিও দেওয়া হয়। পুলিশ খোঁজ নিয়ে জানতে পারে, দ্বিতীয় নম্বরটিও চালু হয়েছে ১ জুলাই থেকে। সেটি নেওয়া হয়েছে কাঁকসার গোপালপুরের একটি দোকান থেকে। তদন্তে পুলিশ আরও জানতে পারে, একই হাতের লেখায় ফর্ম পূরণ করে একই ঠিকানা জানিয়ে সিম দু’টি নিয়েছে এক জন ব্যক্তিই।
পুলিশ অনুমান করে, পরিবারের পরিচিত কেউ ঘটনায় জড়িত, যে ওই আপ্ত সহায়কের ফোন নম্বর জানে। রামধনিবাবুর দাদার গাড়ির চালক রমেশের উপরে নজর রাখছিল পুলিশ। তাকে জিজ্ঞাসাবাদ শুরু করে পুলিশ। এডিসিপি (পূর্ব) সুনীল যাদব বলেন, “জেরায় রমেশ স্বীকার করে, সে-ই ঘটনার মূল চক্রী। তার সঙ্গে আছে ইসরাফুল ও পূর্ণচন্দ্র। এর পরেই তিন জনকে গ্রেফতার করা হয়।”
পুলিশের দাবি, জেরায় রমেশ জানায়, বছরখানেক আগে রামধনিবাবুর একটি পেন ড্রাইভ তার হাতে আসে। সেটি থেকে ওই পরিবারের বার্ষিক আয়-ব্যয়ের হিসেবের কথা জানতে পারে সে। তখনই ইসরাফুল ও পূর্ণচন্দ্রকে সঙ্গী করে মোটা টাকা হাতানোর পরিকল্পনা ফাঁদে। এডিসিপি বলেন, “এই অপরাধীরা দুষ্কর্মে এখনও বিশেষ হাত পাকাতে না পারায় সূত্র মিলেছে দ্রুত। কয়েক ঘণ্টার মধ্যে ধরা পড়ে গিয়েছে তারা।” তবে পেন ড্রাইভটি এখনও পুলিশ পায়নি। সোমবার দুর্গাপুর আদালতে তোলা হলে ধৃতদের ১০ দিন পুলিশি হেফাজতে রাখার নির্দেশ দেওয়া হয়। |