মুম্বই গণধর্ষণ
সম্মান পাক গোপনীয়তা, আর্জি পরিবারের
মুম্বইয়ে চিত্রসাংবাদিক গণধর্ষণ কাণ্ডে আরও দুই অভিযুক্তকে গ্রেফতার করল পুলিশ। ফলে এই ঘটনায় অভিযুক্ত পাঁচ যুবকই এখন পুলিশের জালে। পলাতক দুই অভিযুক্তের অন্যতম সালিম আনসারিকে রবিবার সকালে দিল্লি-হরিয়ানা সীমানা থেকে গ্রেফতার করে দিল্লি পুলিশ এবং মুম্বই অপরাধ দমন শাখার বিশেষ দল। অন্য অভিযুক্ত কাশিম বেঙ্গলিকে এ দিনই ভোর রাতে মুম্বই থেকে গ্রেফতার করা হয়।
সালিম বিহার হয়ে বাংলাদেশ পালানোর ছক কষছিল বলে দিল্লি পুলিশ জানিয়েছে। বিশেষ সূত্রে খবর পেয়ে সালিমকে গ্রেফতার করা হয়। তাকে সোমবার স্থানীয় একটি আদালতে তোলা হবে। সালিমকে ট্রানজিট রিম্যান্ডে মুম্বই আনার আবেদন জানাবে মুম্বই পুলিশ। সালিম বাদে বাকি চার অভিযুক্তকে মেট্রোপলিটান ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে তোলা হলে তাদের ৩০ অগস্ট পর্যন্ত পুলিশি হেফাজতে রাখার নির্দেশ দিয়েছেন বিচারক।
এই ঘটনায় উজ্জ্বল নিকম সরকার পক্ষের আইনজীবী হিসাবে দাঁড়াতে রাজি হয়েছেন বলে জানা গিয়েছে। রবিবার সকালেই মহারাষ্ট্রের মুখ্যমন্ত্রী পৃথ্বীরাজ চহ্বাণ সাংবাদিকদের জানান, উজ্জ্বল নিকমকে সরকার পক্ষের আইনজীবী হিসেবে দাঁড়ানোর জন্য অনুরোধ করেছেন তিনি। রাজ্যের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আর আর পাটিলও এই বিষয়ে নিকমকে অনুরোধ করেছেন বলে জানান পৃথ্বীরাজ।
প্রতিবাদ মিছিলে সোনম কপূর। রবিবার মুম্বইয়ে। ছবি: এপি
রবিবার নির্যাতিতার পরিবারের তরফে সাংবাদিকদের উদ্দেশে একটি চিঠি লেখা হয়েছে। সেখানে মুম্বই পুলিশের ভূমিকার ভূয়সী প্রশংসা করা হয়েছে। এই ঘটনায় তাঁদের মেয়ে ও তাঁদের পরিবারের পাশে যে ভাবে সাধারণ মানুষ দাঁড়িয়েছেন তাঁর জন্য ধন্যবাদ জানিয়েছেন নির্যাতিতার পরিবার। সেই সঙ্গে সাংবাদিকদের কাছে তাঁদের মেয়ের গোপনীয়তা রক্ষা করার অনুরোধও জানান তাঁরা। লিখেছেন, খবর সংগ্রহের নামে তাঁদের বা তাঁদের আত্মীয়দের বাড়ি যেন কেউ না আসেন। তবে যে হাসপাতালে ওই চিত্রসাংবাদিকের চিকিৎসা চলছে সেটি সব সময় প্রচারের আলোয় থাকায় সেখানকার রোগীরা যে অসুবিধা ভোগ করছেন তার জন্য ক্ষমাও চেয়ে নিয়েছেন নির্যাতিতার পরিবার। অভিযুক্তরা যাতে কড়া শাস্তি পায় তার জন্য পৃথ্বীরাজ-সরকারের কাছে অনুরোধ করেছেন তাঁরা।
অভিযুক্তদের কড়া শাস্তির দাবি জানিয়েছেন নির্যাতিতা চিত্রসাংবাদিকও। মুম্বইয়ের যে হাসপাতালে তাঁর চিকিৎসা চলছে সেখানকার চিকিৎসকেরা জানিয়েছেন, শারীরিক অবস্থার খুব দ্রুত উন্নতি হচ্ছে। যে ভাবে অসুস্থ অবস্থাতেও ঘটনার বিবরণ দিয়েছেন, বা অভিযুক্তদের স্কেচ আঁকতে পুলিশকে সাহায্য করেছেন, তাঁর প্রশংসায় পঞ্চমুখ চিকিৎসক থেকে পুলিশ। চিকিৎসকেরা জানিয়েছেন, দ্রুত কর্মক্ষেত্রে ফিরতে উৎসুক ওই চিত্রসাংবাদিক।
আদালতে তোলা হচ্ছে এক অভিযুক্তকে। ছবি: রয়টার্স
তবে অভিযুক্তদের কড়া শাস্তি হলে কর্মক্ষেত্রে কাজ করার মনোবল ফিরে পাবেন বলে মনে করছেন তিনি। তাঁর চিকিৎসার জন্য মেয়েদের একটি টিম গঠন করা হয়েছে হাসপাতালের তরফে। অর্থাৎ চিকিৎসক থেকে কর্মী সবাই মেয়ে।
বৃহস্পতিবারের ঘটনা নিয়ে মুখ খুলেছেন নির্ভয়ার মা। জানিয়েছেন, এই ঘটনার কথা শুনে তাঁর নিজের মেয়ের কথাই বার বার মনে পড়ছে। অভিযুক্তদের কড়া শাস্তির দাবি জানিয়েছেন তিনি। গত বছর ১৬ ডিসেম্বর দিল্লি বাসে গণধর্ষণের শিকার হন প্যারামেডিক্যাল ছাত্রী নির্ভয়া। পরে তিনি মারা যান।
শনিবার দক্ষিণ মুম্বইয়ের একটি ভিডিও পার্লার থেকে গ্রেফতার করা হয়েছিল এক অভিযুক্ত বিজয় যাদবকে। পুলিশের দাবি, জেরায় বিজয় অপরাধের কথা স্বীকার করে নিয়েছে। সেই সঙ্গে বৃহস্পতিবার কী কী ঘটেছিল তারও পুঙ্খানুপুঙ্খ বিবরণ দিয়েছে বলে জানিয়েছে মুম্বই পুলিশ। পুলিশ সূত্রের খবর, যাদব জানিয়েছে, সে আর সালিম বৃহস্পতিবার মহালক্ষ্মী এলাকার পরিত্যক্ত শক্তি মিলস-এর সামনে আড্ডা মারছিল। নেশা করার জন্য তারা ওই মিল চত্বরই ব্যবহার করত। সন্ধে নামার আগে এক সঙ্গীকে নিয়ে ছবি তুলতে মিল চত্বরে পৌঁছেছিলেন ২৩ বছরের ওই নির্যাতিতা চিত্রসাংবাদিক। একটি ইংরেজি পত্রিকায় শিক্ষানবিশি করছিলেন তিনি। যাদবদের কাছে মিলের ঠিকানা জানতে চান তাঁরা। কথা বলতে বলতে যাদবরা তাঁদের সঙ্গে মিলের ভিতরে ঢুকে যায়। সেখানে তাঁদের সঙ্গী হয় কাশিম বেঙ্গলি। এর পরেই ওই সঙ্গীকে বেল্ট দিয়ে বেঁধে ওই চিত্রসাংবাদিককে গণধর্ষণ করে যাদবরা। সঙ্গী হয় চাঁদ বাবু সাত্তাত শেখ ও সিরাজ রহমান।
পুলিশ জানিয়েছে, অত্যাচারের হাত থেকে বাঁচতে ওই চিত্রসাংবাদিক ও তাঁর সঙ্গী দামি ক্যামেরা ও আই ফোনও দিতে চেয়েছিলেন। কিন্তু শেষরক্ষা হয়নি। শুধু তা-ই নয়, পুলিশের দাবি, ধর্ষণের পর নির্যাতিতাকে ঘটনাস্থল পরিষ্কার করতে বাধ্য করে অভিযুক্তেরা। নির্যাতিতার ছবিও তুলে রাখে তারা। ঘটনাস্থল থেকে পালিয়ে যাওয়ার আগে ঘটনার কথা কাউকে না জানানোর হুমকিও দেওয়া হয়। না হলে ওই চিত্রসাংবাদিকের ছবি প্রকাশ করা হবে বলে জানায় তারা। জেরায় পুলিশ জানতে পেরেছে, ঘটনার পর বিজয়ের বাড়িতে গিয়ে সবাই টিভি দেখে। পরের দিন পুলিশ তল্লাশি শুরু করেছে জানতে পেরে সবাই গা-ঢাকা দেয়। এই ঘটনায় এক অভিযুক্তের মা জানিয়েছেন, তাঁর ছেলে নির্দোষ বলেই তিনি মনে করেন। তবে যদি নির্যাতিতা তাঁর ছেলেকে শনাক্ত করে, সে ক্ষেত্রে তাঁর ছেলের কড়া শাস্তি পাওয়া উচিত বলেও জানিয়েছেন তিনি।

পুরনো খবর:


First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.