ধৃত জিটিএ সদস্যদের রাজ্য সরকার মুক্তি দিলে স্বশাসিত ‘গোর্খাল্যান্ড টেরিটোরিয়াল অ্যাডমিনিস্ট্রেশনের’ নতুন প্রধান নির্বাচনের সভায় তারা যে যোগ দেবে তা আগেই পরিষ্কার করে দিয়েছিল গোর্খা জনমুক্তি মোর্চা। কিন্তু জিটিএ ‘চিফ’ বা প্রধান পদে তিনি যে আর আপাতত আগ্রহী নন, তা স্পষ্ট করে দিলেন মোর্চা সভাপতি বিমল গুরুঙ্গ।
শনিবার দার্জিলিঙের সিংমারিতে দলের সদর দফতরে বসে গুরুঙ্গ বলেন, “ধৃত সদস্যদের ছেড়ে দেওয়া হলে অবশ্যই নতুন চিফ নির্বাচনের সভায় অংশ নেওয়া হবে। কারণ, আমরা তো এখনও জিটিএ ছাড়িনি। তবে গোর্খাল্যান্ডের দাবিতে আন্দোলন করব বলে আমি ওই পদ থেকে ইস্তফা দিয়েছি। ফের সেই পদে যাওয়ার ইচ্ছে আমার নেই।” তিনি নিজে না চাইলেও জিটিএ সদস্যদের সিংহভাগই যে গুরুঙ্গকেই ফের ওই পদে বসানোর পক্ষপাতী, দলীয় সূত্রে এমনই জানা গিয়েছে। দলীয় সদস্যদের সেই চাপের মুখে মোর্চা প্রধান তাঁর সিদ্ধান্তে অনড় থাকেন কিনা, এখন দেখার সেটাই।
দলের সাধারণ সম্পাদক রোশন গিরি জানান, কাল, সোমবার মোর্চার তরফে ধৃত জিটিএ সদস্যদের জামিনের জন্য দার্জিলিং জেলা আদালতে আর্জি জানানো হবে। রাজ্য সরকার যে সে তার বিরোধিতা করবে না, সরকারি সূত্রে তারও ইঙ্গিত মিলেছে।
আলাদা রাজ্যের দাবিতে পাহাড় অচল করে রাখার রাস্তা থেকে সরে জিটিএ চালাতে হবে-- পাহাড়ের সাম্প্রতিক আন্দোলন শুরুর পরে বারেবারে এমনই বার্তা দিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। শুক্রবারও মহাকরণ থেকে ইঙ্গিত দেওয়া হয়েছে, ধৃত জিটিএ সদস্যরা আগামী ৪ সেপ্টেম্বর নতুন চিফ এগ্জিকিউটিভ নির্বাচনের সভায় যেতে চাইলে তাঁদের জামিনের আর্জির বিরোধিতা করবে না সরকার। |
এ দিনই, নয়াদিল্লি থেকে মোর্চা সমর্থিত দার্জিলিঙের বিজেপি সাংসদ যশোবন্ত সিংহ পশ্চিমবঙ্গের রাজ্যপালের কাছে পাহাড়ের সমস্যা নিয়ে আলোচনার আর্জি জানিয়েছেন। বিজেপি-র প্রবীণ এই সাংসদের মত, “গ্রেফতার করাটা এক ধরনের ব্যাপার। পরিস্থিতি বুঝে আলোচনা করে সমস্যা মেটানোটা আর এক ধরনের। দু’টি কাজ একসঙ্গে হতে পারে না। পাহাড়ের পরিস্থিতি নিয়ে আলোচনার ব্যবস্থা করতে হবে। সে কথা কেন্দ্রকে বলেছি। রাজ্যকেও জানিয়েছি। রাজ্যের তরফে অসুবিধে থাকলে আমি রাজ্যপালকে আলোচনার জন্য উদ্যোগী হতে অনুরোধ করছি।”
পাহাড় অচল করে আন্দোলনের পথ ছেড়ে জিটিএ চালালে রাজ্যের তরফে মোর্চাকে আরও বেশি সহযোগিতার কথা ভাবা হয়েছে। এমনকী, অচলাবস্থা কাটলে পাহাড় থেকে পর্যায়ক্রমে কেন্দ্রীয় বাহিনী প্রত্যাহার করা, মামলা তুলে নেওয়ার মতো বিষয়গুলি নিয়েও আলোচনায় যেতে পারে রাজ্য সরকার। উত্তরবঙ্গ উন্নয়ন মন্ত্রী গৌতম দেব বলেন, “মুখ্যমন্ত্রী তো গোড়া থেকেই বলছেন, জিটিএ চালাতে হবে। নতুন চিফ নির্বাচন করে জিটিএ চালানোর যে ইচ্ছে বিমল গুরুঙ্গ প্রকাশ করেছেন তা স্বাগত। ওঁরা জিটিএ চালিয়ে পাহাড়ের উন্নয়ন করুন। মুখ্যমন্ত্রী সব সময় পাহাড়ের পাশে ছিলেন, আছেন ও থাকবেন।” ফের পাহাড় স্বাভাবিক ছন্দে ফিরলে মোর্চা মামলা প্রত্যাহার, সিআরপি সংক্রান্ত যে দাবি করছে তা নিয়েও খোলামনে আলোচনার অবকাশ রয়েছে বলে উত্তরবঙ্গ উন্নয়ন মন্ত্রী
মনে করেন। তাঁর কথায়, “যদি
কোনও তিক্ততা হয়েও থাকে তা দূরে সরিয়ে পাহাড়-সমতলের সার্বিক উন্নয়নের স্বার্থে এক যোগে পথ
চলতে হবে।” বস্তুত, রাজ্য সরকারের মনোভাব বুঝে মোর্চার নেতা-কর্মীদের অনেকেই আপাতত তিক্ততা সরিয়ে পুজোর আগে পাহাড়কে স্বাভাবিক ছন্দে ফেরানোর দাবি তুলেছেন। মোর্চার অন্দরের খবর, এ দিন দলের কেন্দ্রীয় কমিটির শীর্ষ নেতাদের কয়েক জনের উপস্থিতিতে বৈঠকে সাম্প্রতিক পরিস্থিতির পর্যালোচনা হয়। সেখানে রাজ্যের তরফে জিটিএ-এর নতুন চিফ নির্বাচনের জন্য ৪ সেপ্টেম্বর বৈঠক ডাকার ব্যাপারে আলোচনা হয়েছে। সেই প্রসঙ্গে এক পক্ষ বলে, জিটিএ-এর ১১ জন সদস্য জেলবন্দি। সভায় যোগ দেওয়ার জন্য জামিন চাইলে রাজ্য সরকার বিরোধিতা করবে না বলে ইঙ্গিত দিয়েছে। তখনই মোর্চার নেতারা সিদ্ধান্ত নেন, ধৃত জিটিএ সদস্যরা সকলে জামিন পেলে ‘চিফ’ নির্বাচনে অংশ নেওয়া হবে। নতুন ‘চিফ’ ঠিক হওয়ার পরে এক দিকে জিটিএ চালানো হবে, অন্যদিকে বন্ধ না ডেকে আলাদা রাজ্যের দাবিতে নিয়মিত আন্দোলন করার কর্মসূচি বহাল থাকবে।
এর ফলে পুজোর মুখে ভরা পর্যটন মরসুমে যে বিপুল ক্ষতির আশঙ্কা ছিল, তার বহর কিছুটা হলেও কমবে। পর্যটনের সঙ্গে যুক্ত লক্ষাধিক পাহাড়বাসীর ক্ষোভও তাতে সামাল দেওয়া যাবে বলে মনে করছে
মোর্চা। মোর্চা সূত্রে জানা গিয়েছে, কথায় কথায় পাহাড় অচল করার চেনা-পথে হাঁটা আপাতত তাই মুলতুবিই রাখছে তারা।
তবে বরফ গলার প্রাক্কালে, এ দিন দুপুরে আচমকাই উত্তপ্ত হয়ে ওঠে মিরিক। পুরনো মামলায় অভিযুক্ত এক মোর্চা সমর্থককে মিছিল থেকেই গ্রেফতার করতে গিয়েছিল পুলিশ। বাধা দেন মোর্চা সমর্থকেরা। তাঁদের দাবি, মিছিল থেকে কাউকে গ্রেফতার করা যাবে না। উত্তেজনা বাড়তে থাকায় পুলিশ অবশ্য আর এগোয়নি। সেই সুযোগে গা ঢাকা দেন অভিযুক্ত ওই মোর্চা সমর্থক। পুলিশ ও কেন্দ্রীয় বাহিনীর ‘অতি-তৎপরতা’ নিয়ে এ দিন ক্ষোভ প্রকাশ করেন মোর্চা প্রধানও। গুরুঙ্গের অভিযোগ, “অনেক কেন্দ্রীয় বাহিনী অতি-তৎপরতা দেখাতে গিয়ে সার্চ ওয়ারেন্ট ছাড়াই মোর্চা সমর্থকদের বাড়িতে হানা দিচ্ছে। অনেকের বাড়ি থেকে দামি জিনিসও খোয়া যাচ্ছে।” |