চলন্ত বাসে প্রসব যন্ত্রণায় ছটফট করছিলেন বধূ। এগিয়ে আসেন এক নার্স ও মহিলা যাত্রীরা।
বধূকে শুইয়ে দেওয়া হয় বাসের মেঝেতে। নিজের বিছানার চাদর-কম্বল দিয়ে বধূর চারপাশ ঘিরে দেন কন্ডাক্টর। বাসের মধ্যেই জন্মাল শিশুকন্যা। এতেই শেষ নয়। মা ও সন্তানের যাতে কোনও শারীরিক সমস্যা না হয় তা সুনিশ্চিত করতে কোনও স্টপে না থেমে চালক সটান বাসটি নিয়ে ঢুকে পড়লেন হাসপাতালে।
শনিবার বিকেলে এমনই ঘটনা ঘটল বাঁকুড়া শহরে। মা ও সন্তানকে সুস্থ দেখে হাসপাতাল ছাড়লেন মালদহ থেকে পুরুলিয়াগামী ওই বাসের কর্মী ও যাত্রীরা। বাসটিকে হুড়মুড়িয়ে বাঁকুড়া মেডিক্যালে ঢুকতে দেখে স্বাস্থ্যকর্মী ও রোগীর আত্মীয়েরা প্রথমে চমকে যান। ঘটনাটি জানতে পেরে স্বাস্থ্যকর্মীরা স্ট্রেচার নিয়ে এসে তাঁদের ভিতরে নিয়ে যান। শুরু হয় চিকিৎসা। হাসপাতাল সুপার পঞ্চানন কুণ্ডু বলেন, “মা ও শিশু দু’জনেই সুস্থ। তবে শিশুটির ওজন কম। সদ্যোজাতদের পরিচর্যাকেন্দ্রে তার চিকিৎসা চলছে।”
ওই বধূর নাম মালতি পরামাণিক। পুরুলিয়ার জয়পুরের আগাপুরে তাঁর শ্বশুরবাড়ি। তিনি স্বামী নারায়ণ পরামাণিকের সঙ্গে দুর্গাপুরে ভাড়াবাড়িতে থাকেন। তাঁদের একটি ছেলে রয়েছে। নারায়ণবাবু বলেন, “চিকিৎসক জানিয়েছিলেন স্ত্রীর সন্তান হতে এখনও দেড় মাস বাকি। তাই স্ত্রীকে জয়পুরে রেখে আসার জন্য দুর্গাপুর থেকে বাসে উঠি। বাঁকুড়া স্টেশনে ঢোকার মুখে স্ত্রীর প্রসব বেদনা ওঠে। তখনই দেবদূতের মতো সহযাত্রী ও বাসকর্মীরা এগিয়ে আসেন।”
বাসের কন্ডাক্টর শেখ আবুল কালাম বলেন, “মহিলার চিৎকারে এক যাত্রী নিজেকে নার্স পরিচয় দিয়ে এগিয়ে আসেন। তিনি ওই বধূকে বাসের পিছনের দিকে যান। মহিলা যাত্রীরা এগিয়ে যান বধূটির সাহায্যে। আমি বিছানার চাদর দিয়ে ওঁদের চারপাশ ঘিরে দিই। খানিক পরেই শুনি বাচ্চার কান্না।”
সন্ধ্যায় পুরুলিয়ায় পৌঁছে চালক শ্যামল মুখোপাধ্যায় বলেন, “এ রকম পরিস্থিতিতে কোথাও বাস না থামিয়ে প্রসূতিকে সোজা কাছাকাছি স্বাস্থ্যকেন্দ্রে নিয়ে যেতে বলেছিলেন দফতরের এক আধিকারিক। কথাটা মনে গেঁথে ছিল। মা-বাচ্চা ভাল আছে জেনে সত্যি বেশ ভাল লাগছে।” |