নতুন উদ্যমে শুরু হচ্ছে রাজারহাটের টাটা ক্যানসার হাসপাতাল সম্প্রসারণ-প্রকল্পের কাজ। শনিবার হাসপাতাল সূত্রে জানা গিয়েছে, এ জন্য সব মিলিয়ে প্রায় ২০০ কোটি টাকা বিনিয়োগ করা হবে। শনিবার হাসপাতালের পরিকাঠামো উন্নয়ন এবং গরিব রোগীদের চিকিৎসার ভর্তুকির অর্থ সংগ্রহ করতে একটি অনুষ্ঠানের আয়োজন করেন কর্তৃপক্ষ। তাতে যোগ দিতে এসেছিলেন ওয়াহিদা রহমান, শর্মিলা ঠাকুর, শাবানা আজমি, জাভেদ আখতার, ওম পুরি ও ঊষা উত্থুপ। সেখানেই হাসপাতালের ডিরেক্টর মাম্মন চান্ডি জানান, সম্প্রসারণ-প্রকল্পে ঠিক কী কী পরিবর্তন করা হবে হাসপাতালে।
তিনি জানিয়েছেন, আগামী বছরের জুন মাসের মধ্যে হাসপাতালে ২৫০টি শয্যা বাড়ানো হবে। এর ফলে শয্যা সংখ্যা বেড়ে হবে ৪১৭। বসানো হবে তিনটি লিনিয়ার অ্যাক্সিলেটর যন্ত্রও। তৈরি করা হবে একটি ক্যানসার গবেষণা কেন্দ্র ও বায়ো ব্যাঙ্ক। কর্তৃপক্ষের আশা, তিন বছরের মধ্যে তা চালু হয়ে যাবে। ওই কেন্দ্রে রক্তের ক্যানসারে আক্রান্ত শিশুদের নিয়ে গবেষণা করা হবে। বায়ো ব্যাঙ্কে সংরক্ষণ করা হবে ক্যানসার-আক্রান্ত টিস্যু।
তবে সম্প্রসারণ-প্রকল্পের মূল লক্ষ্য রোগীর পাশাপাশি তাঁর আত্মীয়-পরিজনদেরও সাহায্য করা। এ দিনের অনুষ্ঠানে বার বার ক্যানসার আক্রান্তদের দুর্দশার পাশাপাশি উঠে এল আক্রান্তদের পরিবারের চরম অসুবিধার ছবিটাও। |
যেমন জাভেদ আখতার বলেন, “গরিবদের চিকিৎসার জন্য অধিকাংশ রাজ্যে কোনও পরিকল্পনা নেই। ক্যানসারের মতো রোগের চিকিৎসা করতে গিয়ে একটা পরিবার দারিদ্রসীমার নীচে নেমে যায়।” শর্মিলা ঠাকুরের কথায়, “পরিবারের কারও ক্যানসার হয়েছে শুনলে এমনিতেই মানুষ আতঙ্কিত হন। তার উপর চিকিৎসার খরচে ধনেপ্রাণে মরে যাওয়ার উপক্রম হয়। গরিব মানুষ কোথা থেকে পাবেন এত টাকা? আমাদের সকলকেই তাই কিছু না কিছু সাহায্য নিয়ে এগিয়ে আসতে হবে।” শাবানা বলেন, “ক্যানসার মানেই তো মৃত্যু নয়। কিন্তু সুস্থ হওয়ার জন্য উপযুক্ত চিকিৎসা দরকার। তার জন্য দরকার টাকা। এত টাকা লাগে যে অনেকের পক্ষেই তা দেওয়া অসম্ভব।” সেই অসম্ভবকে সম্ভব করার লক্ষ্যে এই নয়া উদ্যম হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের। সে জন্য হাসপাতালের অনতিদূরে ‘প্রেমাশ্রয়’ নামে একটি বাড়ি তৈরি করছেন তাঁরা। সেখানে কম খরচে রোগী ও তাঁর আত্মীয় মিলিয়ে প্রায় ৪০০ জনের থাকার ব্যবস্থা থাকবে। প্রেমাশ্রয় তৈরির জন্য কোল ইন্ডিয়ার সঙ্গে ইতিমধ্যে কথাও হয়েছে বলে জানান চান্ডি। তিনি আরও জানালেন, বর্তমানে টাটা ক্যানসার হাসপাতালে শয্যাসংখ্যা ১৬৭। যার মধ্যে ৪৭টি শয্যায় গরিব রোগীদের অনেক কম খরচে চিকিৎসা পরিষেবা দেওয়া হয়। চান্ডির বয়ানে, “কম খরচে চিকিৎসা দেওয়ার জন্য প্রতি বছর প্রায় দেড় কোটি টাকা ভর্তুকি দেওয়া হচ্ছে। যার সিংহভাগ আসে বিভিন্ন কর্পোরেট সংস্থা ও ব্যক্তির দানের টাকা থেকে।” উদাহরণ হিসেবে তিনি তুলে ধরেছেন একটি পরিসংখ্যান। সেখান থেকেই পরিষ্কার, ২০১১-র মে অর্থাৎ হাসপাতালের জন্মলগ্ন থেকে ২০১৩-র গোড়া পর্যন্ত দান হিসেবে সংগৃহীত হয়েছে প্রায় ৩০ কোটি টাকা। তা বাদে মাসখানেক আগেই ৬৬ কোটি টাকা দান করেছে ইন্ডিয়ান অয়েল। সেই টাকা দিয়েই হাসপাতালের কাছে ২ একর জমিতে ক্যানসার গবেষণা কেন্দ্র ও বায়ো ব্যাঙ্ক তৈরির চেষ্টা করা হবে। ইতিমধ্যে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এক দিন হাসপাতাল ঘুরেও গিয়েছেন। প্রকল্পের বাস্তবায়ন এখন শুধুই সময়ের অপেক্ষা। আপাতত তাই আশাতেই ভরসা রাখছেন কর্তৃপক্ষ। |