ইঞ্জিনিয়ারদের আন্তর্জাতিক সংগঠনের তরফে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে নিমন্ত্রণ করতে শনিবার মহাকরণে এসেছিলেন কেন্দ্রীয় সড়ক মন্ত্রকের ডিজি সি কন্ডসামী। সেপ্টেম্বরে কলকাতায় ওই আলোচনাসভা হওয়ার কথা। সেই আলোচনার ফাঁকেই অনিবার্য ভাবে উঠে আসে রাজ্যে জাতীয় সড়কগুলির বেহাল দশার কথা। বিশেষ করে ৩৪ নম্বর জাতীয় সড়কের প্রসঙ্গ। পাশাপাশি কেন্দ্রীয় সড়ক মন্ত্রকের হাতে থাকা দক্ষিণ ২৪ পরগনার হাতানিয়া-দোয়ানিয়া কিংবা মালদহের ফুলহার নদীর উপরে সেতুর মতো বেশ কিছু প্রকল্প দ্রুত শেষ করতে কেন্দ্রকে অনুরোধ করেন মুখ্যমন্ত্রী।
মুখ্যমন্ত্রীর ঘর থেকে বেরিয়ে সড়ক মন্ত্রকের এডিজি ভি এল পটঙ্কর বলেন, “৩৪ নম্বর জাতীয় সড়ক সম্প্রসারণ নিয়ে আগেও রাজ্যের মুখ্যসচিবের সঙ্গে কথা বলেছি। যে পাঁচ জেলার উপর দিয়ে সড়ক গিয়েছে, তার জেলাশাসকদের ডেকে ব্যবস্থার নির্দেশ দিয়েছিলেন তিনি।” তার পর কি জমি-জট কেটেছে? সরাসরি জবাব এড়িয়ে পটঙ্কর বলেন, “ইতিবাচক আলোচনা হয়েছে।” রাজ্য প্রশাসনের একাংশের মতে, প্রশাসনিক স্তরে নয়, রাজনৈতিক ভাবেই ওই জট ছাড়াতে হবে।
কেন? মহাকরণের এক কর্তা বলেন, ২০০৬-এ ওই প্রকল্প ছাড়পত্র পেয়েছিল। ৩৪ নম্বর জাতীয় সড়ক চওড়া করতে জমি চেয়ে বিজ্ঞপ্তি জারি হয়েছিল ২০০৮-এ। দু’বছর পরে ভূমি দফতরের কর্মীরা যখন জাতীয় সড়কের পাশের জমি মাপতে যান, তখন থেকেই বাধার মুখে প্রকল্পটি। পূর্ত দফতরের এক কর্তা বলেন, “বাম আমলে বহু ‘ভূমি রক্ষা কমিটি’ গড়ে জাতীয় সড়ক সম্প্রসারণ রুখেছিল তৃণমূল। এখন তারা ক্ষমতায়। কিন্তু রাজনীতির বাধ্যবাধকতায় কেন্দ্রীয় প্রকল্পেও জমি নিতে ধন্দে সরকার। ফলে প্রকল্পের কাজ থমকে রয়েছে।”
ওই সড়ক সম্প্রসারণে কত জমি লাগবে? জাতীয় সড়ক কর্তৃপক্ষের (এনএইচএআই) এক কর্তা বলেন, “২৩৯০ একর। মিলেছে ৯৮ একর। অর্থাৎ, আরও ২৬ গুণ জমি দিতে হবে রাজ্যকে। বারাসত থেকে ডালখোলা পর্যন্ত ৩৪ নম্বর জাতীয় সড়কের ৪২২ কিলোমিটার সড়ক চার লেন হবে।” জমি না মেলায় কেবল কাজই পিছিয়ে যাচ্ছে তা নয়, প্রকল্পের খরচও বাড়ছে। এনএইচএআই-এর এক কর্তা বলেন, “কেন্দ্রীয় সড়ক মন্ত্রক গোটা প্রকল্পটিকে পাঁচ ভাগে ভাগ করে দফায় দফায় অর্থ বরাদ্দ করেছে। ২০০৮-এ এর আনুমানিক খরচ ধরা হয়েছিল ৪২২৭ কোটি টাকা। কাজ শেষের লক্ষ্যমাত্রা ছিল ২০১৪। এখন প্রকল্প কবে শেষ হবে, তা বলা যাচ্ছে না।”
এখন ৩৪ নম্বর জাতীয় সড়কের অবস্থা ক্রমেই বেহাল হচ্ছে। ২০১০-এর নভেম্বরে বহরমপুর থেকে পলসন্ডা এবং ফরাক্কা থেকে মালদহ পর্যন্ত রাস্তা চার লেন করার কাজ শুরু হলেও সে ভাবে এগোয়নি। ফলে বর্ষায় চরম দুর্ভোগে পড়েছেন মানুষ। একই ছবি নদিয়াতেও। ঘাটিগাছা, শিমুরালি, বিরোহি, মিলনবাগান ও হবিবপুরে জাতীয় সড়কের খানাখন্দ দুর্ঘটনা লেগেই রয়েছে। এপ্রিলে ইটাহার থেকে ডালখোলা পর্যন্ত প্রায় ৭০ কিলোমিটার রাস্তা ভাঙতে শুরু করে। বড়বড় গর্ত তৈরি হয়। ওই জেলার বাস ও মিনিবাস ওনার্স অ্যাসোসিয়েশনের সম্পাদক অশোক চন্দ এবং চেম্বার অফ কমার্সের সাধারণ সম্পাদক শঙ্কর কুণ্ডু বলেন, “জাতীয় সড়ক মেরামতির দাবিতে বহু আন্দোলন করেও লাভ হয়নি। ৩০ অগস্টের মধ্যে ওরা মেরামত শুরুর আশ্বাস দিয়েছেন। তা না হলে জেলাজুড়ে অনির্দিষ্ট কালের জন্য পরিবহণ ধর্মঘট ও ব্যবসা বনধের ডাক দেওয়া হবে।” জেলাশাসক পাসাং নরবু ভুটিয়াও বলেন, “ক’মাস ধরে জাতীয় সড়ক কর্তৃপক্ষকে বারবার চিঠি দিয়েও সুরাহা মেলেনি।” জাতীয় সড়ক কর্তৃপক্ষের মালদহ বিভাগের প্রকল্প অধিকর্তা মহম্মদ সইফুল্লা কাজ না-হওয়ার জন্য জমি-জটকেই দুষছেন। তাঁর বক্তব্য, “জমি অধিগ্রহণে প্রশাসনিক জটিলতা হওয়ায় রাস্তা চার লেন করার কাজ ব্যাহত হচ্ছে।” ওই রাস্তার হাল যে সত্যিই খারাপ, তা মেনে নিয়েছেন তিনি। বলেছেন, “জাতীয় সড়ক মেরামতির জন্য কেন্দ্রের কাছে টাকা চাওয়া হয়েছে। আশা করছি ৩০ অগস্টের মধ্যেই কাজ শুরু করে দেওয়া যাবে।”
|