অনুজদের আত্মসমর্পণ করাতে দলকে চাপ
রাত ১০টা বেজে গিয়েছে। হরিনা গ্রামে বড় রাস্তার ধারে দোতলা বাড়িটায় হঠাৎই চড়াও হল লালগড় থানার বিশাল পুলিশ বাহিনী। পুলিশ গোটা বাড়ি আঁতিপাঁতি করে তল্লাশি চালাল, বাড়ির লোকজনকে ধমক-ধামক দিল। কিন্তু ফিরল খালি হাতেই। এটা মাস দেড়েক আগের ঘটনা। লালগড় থেকে প্রায় দশ কিলোমিটার দূরে ওই বাড়িটা সিপিএম নেতা ডালিম পাণ্ডের। পুলিশ খবর পায়, ডালিম হঠাৎ বাড়িতে এসেছেন। পরে বোঝে, খবরটা ঠিক ছিল না। নেতাই গণহত্যার মামলায় অভিযুক্ত, সিপিএমের ধরমপুর লোকাল কমিটির সম্পাদক ডালিম ২০১১-র জানুয়ারি থেকে ফেরার। তাঁর সঙ্গেই খোঁজ নেই সিপিএমের এক নেত্রী এবং আরও ছ’জন নেতা-কর্মীর। তাঁরা হলেন বিনপুর জোনাল কমিটির সম্পাদক অনুজ পাণ্ডে, জেলা কমিটির সদস্য ও মহিলা সমিতির পশ্চিম মেদিনীপুর জেলার সম্পাদক ফুল্লরা মণ্ডল, লালগড় লোকাল কমিটির সম্পাদক জয়দেব গিরি, বেলাটিকরি লোকাল কমিটির সম্পাদক চণ্ডী করণ, বিনপুর জোনাল কমিটির সদস্য খলিলউদ্দিন, লালগড় লোকাল কমিটির প্রাক্তন সম্পাদক তপন দে এবং লালগড়ের পার্টি সদস্য রথীন দণ্ডপাট। নেতাই গ্রামে এই শেষোক্ত ব্যক্তির বাড়িতে তৈরি হওয়া সশস্ত্র শিবির থেকে ছোড়া গুলিতেই ন’জন নিহত হন বলে অভিযোগ। ওই মামলা এখন বিচারাধীন।
সিপিএম সূত্রের খবর, কমবেশি আট জনই আর পালিয়ে বেড়াতে চাইছেন না। বিভিন্ন কারণে তাঁরা এ বার আত্মসমর্পণ করতে চাইছেন। প্রায় সকলেরই বাড়ির লোকজনের বক্তব্য, চালচুলোহীন অবস্থার চেয়ে ধরা দেওয়াই ভাল। দলের পক্ষ থেকে ওই আটটি পরিবারকে মাসে তিন হাজার টাকা করে সাহায্য দেওয়া হচ্ছে। কিন্তু তা যে এই বাজারে নেহাৎই অকিঞ্চিৎকর, পার্টি নেতৃত্বও সেটা বিলক্ষণ জানেন। পলাতকদের মধ্যে চণ্ডী করণ প্রাথমিক স্কুলের শিক্ষক, জয়দেব গিরি হাইস্কুলের করণিক। তাঁদের বাড়ির লোকেদের বক্তব্য, আত্মসমর্পণ করলে সরকারি কর্মী হিসেবে বেতনের একটা বড় অংশ তাঁরা পেতে পারতেন।
তবে পার্টির জেলা নেতৃত্বের ভাবনা অন্য। জেলা সম্পাদকমণ্ডলীর এক প্রবীণ সদস্য বলেন, “প্রাথমিক ভাবে আমরা সিদ্ধান্ত নিয়েছি, শেষ চেষ্টা হিসেবে নেতাইয়ের পলাতক ওই আট জনের আগাম জামিনের আবেদন সেপ্টেম্বরে সুপ্রিম কোর্টে করা হবে। কিন্তু সর্বোচ্চ আদালতও যদি ওই আবেদন খারিজ করে দেয়, তবে ওই আট জনকে আত্মসমর্পণ করতে বলা হবে।” ইতিমধ্যে তিন ফেরারচণ্ডী করণ, তপন দে ও রথীন দণ্ডপাটের জামিনের আবেদন খারিজ করেছে হাইকোর্ট।
সিপিএম সূত্রের খবর, পঞ্চায়েত ভোটের আগেই দু’-তিন জন আত্মসমর্পণ করতে চেয়েছিলেন। কিন্তু দলীয় নেতৃত্ব তাঁদের ঠেকিয়ে রাখেন।
কেন? দলের অন্দরের খবর, সিপিএম নেতৃত্ব ভেবেছিলেন, পঞ্চায়েত ভোটে ধরমপুর গ্রাম পঞ্চায়েতটি নিজেদের দখলে রাখতে পারেবন। লালগড় গ্রাম পঞ্চায়েতটিও তৃণমূলের কাছ থেকে ছিনিয়ে নিতে পারবেন। সে ক্ষেত্রে ওই আট অভিযুক্ত আত্মসমর্পণ করবেন না। বরং তাঁদের জন্য নতুন উদ্যমে আইনি লড়াই শুরু করা হবে। পাশাপাশি, অভিযুক্তরা ‘চক্রান্তের শিকার’ বলে এলাকায় নতুন করে আন্দোলনও শুরু করা যাবে। কিন্তু ভোটে শুধু ওই দু’টি গ্রাম পঞ্চায়েত তো বটেই, গোটা লালগড় বা বিনপুর-১ ব্লকের ১২টি গ্রাম পঞ্চায়েতের ১১টিতেই হেরে গিয়েছে সিপিএম। ফলে, যাবতীয় পরিকল্পনা ভেস্তে গিয়েছে।
পঞ্চায়েত ভোটের ফল বিপক্ষে যাওয়ায় ফেরার সকলেরই আরও বেশি করে ধৈর্যচ্যুতি ঘটেছে। নেতাই-কাণ্ডে ফেরার ওই আট জনের ভবিষ্যৎ কী হবে, দলই বা কী করবে— তা নিয়ে গত রবিবার (১৮ অগস্ট) ঝাড়গ্রামে বিনপুর-১ জোনাল কমিটির সভায় জেলা সম্পাদকমণ্ডলীর দুই প্রতিনিধির সামনে জোনাল কমিটির সদস্যেরা ক্ষোভ উগরে দেন। বৃহস্পতিবার (২২ অগস্ট) লালগড়ে লোকাল কমিটির বৈঠকেও একই ক্ষোভের কথা উঠে আসে। সেখানেও দলের জেলা-নেতারা হাজির ছিলেন।
সিপিএমের বিনপুর-১ জোনাল কমিটির এক সদস্য বলেন, “জেলা নেতাদের বক্তব্য, আইনি লড়াইয়ে আখেরে ফল ভালই হবে। আমাদের এবং ওই আট জনের বাড়ির লোকদের বোঝানো হচ্ছে, তড়িঘড়ি আত্মসমর্পণ করলে সারা জীবনের জন্য জেলের ঘানি টানতে হবে।”
কিন্তু সুপ্রিম কোর্টে জামিনের আবেদনের ফয়সালা হওয়ার আগেই পলাতকদের মধ্যে কেউ কেউ আর ধৈর্য রাখতে না পেরে আত্মসমর্পণ করবেন কি না, তা নিয়ে জেলা নেতৃত্ব এখনও ধন্দে। তবে জেলা সম্পাদকমণ্ডলীর এক সদস্য বলেন, “পার্টি অল্প হলেও প্রতি মাসে নিয়মিত ওঁদের বাড়িতে টাকা পাঠাচ্ছে। তা ছাড়া, মামলার খরচও পার্টি বহন করছে। সুপ্রিম কোর্টে আগাম জামিনের আবেদনও করা হবে পার্টির খরচে। এ কথা মাথায় রেখেই ওঁরা হঠকারী সিদ্ধান্ত নেবেন না বলেই মনে হয়।”

পুরনো খবর:


First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.